Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লালনকন্যা মীমের পথচলা

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:০৪

গল্পটি ক্যাম্পাসের—সুরের। দিন যায় গানেগানে। সময়টা ২০১৯ সালের অক্টোবর। বাদ্যযন্ত্রহীন বন্ধুদের টেবিল থাপড়ানোর তালে খালি গলায় গেয়েছিলেন—‘এক চক্ষেতে হাছন কান্দে; আরেক চক্ষে লালন/গুরু তোমার বিরহে জ্বলে আমার বুকের আগুন।’ বাদ্যযন্ত্রহীন খালি গলা গাওয়া এ গানটি ভাইরাল হয়। এ ভাইরাল পরিবর্তন করে দেয় জীবনের মোড়। গান হৃদয়ের গভীরে লালন করতেন কিন্তু বড় কোনো স্বপ্ন তার ছিলো না। স্বপ্ন না থাকলেও তার মেধা ছিলো, কণ্ঠে ছিলো জাদু। এই ভাইরাল স্মৃতি বহুদূরে যাওয়ার সাহস জোগায়। বলছিলাম লালনকন্যা শাহরিন সুলতানা মীমেন কথা। বর্তমান সময়ে কিছু তরুণ হৃদয়ে ও কণ্ঠে ধারণ করছেন ফোকগান—ফোকগানের হাত ধরেই দূরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অনেকেই নিজের মেধার পরিচয় প্রমাণ করেছেন। প্রতিশ্রুতিশীল এমন তরুণ কণ্ঠযোদ্ধাদের মধ্যে—লালনকন্যা শাহরিন সুলতানা মীম অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

মানুষের জীবনে অনেকবার সকাল আসার দরকার নেই। আলোকিত একটি সকাল হাজার সকাল এনে দেয়। মীমের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। তার অজান্তে একটি সকাল এসেছিলো ২০১৯ সালের অক্টোবরে। সেই থেকে গানের হৃদয়ে হৃদয় রেখে হাঁটছেন—দূরে, বহুদূরে যাওয়ার প্রত্যয়ে। ফোক গান করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মীমের। সবকিছুর অন্তরালে থাকে যুদ্ধের গল্প। যুদ্ধ জীবনের ঘনিষ্ঠ ছায়া। এই ছায়ায় প্রস্ফুটিত হয় কর্মফল। যে ফলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে মানুষের হৃদয়ে থেকে হৃদয়ে। মীমেরও এমন গল্প আছে।

বিজ্ঞাপন

গান নিয়ে বেড়ে ওঠার গল্প শুনতে চাইলে মীম শুরুর গল্প বলেন—‘আব্বুর কাছে ঘুমানোর সময় ছোটবেলা থেকেই গান শুনতাম। আম্মুও গুনগুন করে ছড়াগান শেখাতেন। স্কুলের বার্ষিকক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম দিতাম প্রতিবার, পুরস্কারও পেতাম ২য় বা ৩য়। ক্লাস থ্রিতে যখন পাঁচমিশালি গানে কিরণ রায়ের ‘গাছের মূল কাটিয়া’ গানটি গাইলাম, অনেক প্রশংসাও পেলাম। কিন্তু প্রথম হতে পারলাম না। খুবই কষ্ট পাই আমি। তারপর জেদ পেয়ে বসলো। জেদ থেকেই একদম হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করি। এর পর থেকে স্কুলে সবসময় গানে প্রথমই হয়েছি।’

পরাজিত হলেও জয়ের নিশানা দেখা মেলে। তবে থেমে থাকা যাবে না। ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’—এই কথাটিও প্রমাণ করে দেয় মীমের চেষ্টা। মানুষের ভালোবাসায় মীম বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি এই স্বপ্নের পরিধি আরও প্রসারিত করতে যুক্ত হন—আরটিভির তুমুল জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বাংলার গায়েন সিজন-২’তে। মীমের মেধামনন দিয়ে ফাইনালিস্টে স্থান দখল করেন। পেছনের সবকিছু পুঁজি করেই তার এই গানযুদ্ধ। মীমের গানজীবনে আরটিভি আরেক অধ্যায়, যা তাকে একটা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। চাওয়া ছিলো তার বাবা-মায়ের।

আরটিভি নিয়েও তার স্মৃতিবিজড়িত আবেগের শেষ নেই। তিনি আরটিভিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,‘অনেক কিছু অর্জন করেছি। সবকিছুর জন্য আরটিভি ও আমার শ্রোতাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।’ একজন শিল্পীর দায় শিল্পের কাছে। শিল্পকে ফাঁকি দিয়ে শিল্পী হওয়া যায় না—এই বিষয়টি মীমও অনুধাবন করেন। গানকে ভালোবাসতে বাসতে একজন কণ্ঠশিল্পীর স্রোতার প্রতি দায় বেড়ে যায়। এই দায় ও শ্রোতাদের ভালোবাসা নিয়েই মীমের পথচলা। এই লালনকন্যার মুখে কোনো হতাশার গল্প নেই। তার জীবনে প্রত্যাশা, অর্জন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সহজ করে বলেন—‘আলহামদুলিল্লাহ, জীবনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সফলতা ব্যর্থতা নিয়েই মানুষের জীবন। আমি ব্যর্থতার হিসাব কষতে বসি না, জীবন আমাকে যা দিয়েছে আমি শুধু তার হিসাব রাখি আর তাতে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে বেড়ে যায়, জীবনের প্রতি অভিযোগ কমে যায়, জীবনটা সুন্দর মনে হয়।’

মীম খুবই আশাবাদী, ইতিবাচক মানুষ। তার দৃষ্টিতে জীবনে ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই। সব কিছুই অর্জন। জীবনে ব্যর্থ হলেও অনেক কিছু শেখা যায়—এমন দর্শন মীমের। ফোক গানে মীম নিজেকে খুঁজে পান। বাংলার গায়েন সিজন-২ এর পরে মীমের প্রথম ঈদ। এবারের ঈদ নিয়েও তার আলাদা কোন পরিকল্পনা নেই। ঈদে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করাটাই তার মুখ্যস্বপ্ন। এই আনন্দের সঙ্গে যুক্ত করেছেন গান। বাংলার গায়েন শেষ করার পর এক বছরের জন্য যুক্ত হয়েছেন আরটিভিতে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে তারা আয়োজন করেছে গানের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘স্টুডিও বাংলার গায়েন’। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মীম বলেন—‘আরজু আহমেদের প্রযোজনায়, ইমন সাহা স্যারের মিউজিক কম্পোজিশানে আরটিভির ঈদ অনুষ্ঠান স্টুডিও বাংলার গায়েনের শুটিং শেষ করেছি বেশ আগেই। আশা রাখি এ অনুষ্ঠানটি দশর্কের গ্রহণযোগ্যতা পাবে।’

জীবনের বড় অংশ বা বড় সিদ্ধান্ত বিয়ে। বিয়ে মানেই দুটি মানুষের একসঙ্গে জীবন কাটানোর সমাজ স্বীকৃত অঙ্গীকার। সবার জীবনেই বিয়ে জরুরি। সাধারণ মানুষের মতোই তারকাদের জীবনেও বেজে ওঠে বিয়ের সানাই। ভক্ত-অনুরাগীরা বরাবরই তারকাদের প্রেম-বিয়ে নিয়ে দারুণ আগ্রহী। তারা জানতে চান প্রিয় তারকার প্রিয় মানুষটির সম্পর্কে। গানযোদ্ধার চিন্তা অন্য তারকাদের মতো নয়। তাই গানের মানুষের বিয়েটা ভিন্নরকম হয়। মীমের কাছে প্রেম-বিয়ে নিয়ে জানতে চাইলে খুবই কৌশলী উত্তর দেন। তিনি বলেন—‘প্রেম বিয়ে নিয়ে কোনো খবরই নেই। এখন প্রেম করার বয়স নেই, আর বিয়ে তো করাই লাগবে, তবে পায়ের নিচে নিজের একটা ভিত্তি হোক, পরিচয় হোক। আগে নিজের পরিচয়, পরে বিয়ে।’

জীবনের উত্থান-পতনেও গান ছাড়েননি মীম। তিনি গানের মাঝে নিজের সুখ ও বিশ্বাস খুঁজে পান। তার স্বপ্ন শুধুই গান নিয়ে। লোকগান জীবনের কথা বলে—লোকগানকে ছড়িয়ে দিতে চান সর্বত্র। অর্জন নয়, একজন প্রকৃত শিল্পীকে কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি বুকে লালন করে লালনকন্যা মীম এগিয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা মীমের গানপাগল ভক্তদের।

সারাবাংলা/এজেডএস

মীম লালনকন্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর