হিন্দি ছবি আমদানিতে দিন কি ফিরবে?
২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০৩
গেল এক যুগ ধরে সিনেমা হল মালিকরা হিন্দি ছবি চালানোর অনুমতি চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অনেক মামলা, হামলার পর সরকার গেল ১১ এপ্রিল দুই বছরের জন্য পাঁচটি শর্তে ১৮টি হিন্দি ছবি আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে বেশিরভাগই স্বাগত জানিয়েছেন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে।
হিন্দি ছবির কারণে সিনেমা হলে দর্শক আসলে আখেরে বাংলা ছবির জন্যই লাভ মনে করছেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তিনি বলেন, হল মালিকদের দাবি দেশে হিন্দি ছবির দর্শক রয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী দর্শক সিনেমা হলে আসা শুরু করলে লাভ আমাদেরও হবে। ওরা তো বছরে ১০টা হিন্দি ছবি চালাবে। বাকি সময়ে তো দেশীয় ছবি চলবে। দর্শকদের মধ্যে সিনেমা হলে যাওয়ার অভ্যেস তৈরি হলে তারা তখন আবার বাংলা ছবিও দেখবে।
প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরুর মতে, দেশে তো সিনেমা হলের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। এর পিছনে অনেক কারণই দায়ী। আবার করোনাসহ নানা কারণে সিনেমা হলে ব্যবসা না হওয়ায় প্রযোজকরা তো বড় বাজেটের ছবি বানাচ্ছে না। যার কারণে দর্শকরা কম বাজেটের ছবি দেখতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় আশাহত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভালো ছবির সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু হল মালিকদের তো কনটেন্ট লাগবে। এর জন্য হিন্দি ছবি চালানোর অনুমতিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
সাফটা চুক্তির আওতায় এর আগে হিন্দি ছবি এসেছিল। আর ভারতীয় বাংলা ছবি তো প্রায়ই আসে। এগুলোর বিপরীতে সাফটার নিয়মে একটি বাংলা ছবি রফতানি হয়েছে। তবে বেশিরভাগই ছিল দুর্বল, মানহীন ছবি। এ ছবিগুলো কোথাও চলেছে এমন রেকর্ড খুব একটা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি যেন মাথায় রাখা হয় তাতে আলোকপাত করেছেন মাহিয়া মাহি। তিনি বলেন, শুধু হিন্দি ছবি আসলো বিষয়টা এমন হলে ভালো লাগবে না। যদি তাদের একটা ছবির বিনিময়ে আমাদের ছবিও তারা চালায় তাহলে ঠিক আছে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ছবিই তামিল, তেলেগু কিংবা হিন্দি ছবির নকল করে বানানো হয়। বাপ্পীর মতে, ঈদে আমার ‘শত্রু’ মুক্তি পাচ্ছে। এর তিন চার মাস পর আবার আমার ছবি আসবে? এ সময়টা কী হল মালিকরা বসে থাকবে। হিন্দি ছবি আসলে তাদের ব্যবসাটা চালু থাকবে। একই সঙ্গে আমাদের ছবির বাজেট বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে। আমাদের ছবির মান আরও বাড়বে।
তবে উপরের সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, হিন্দি ছবি আমদানির কারণে শুরুতে বাংলা ছবির ব্যবসা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে তা সাময়িক। কারণ এ মুহূর্তে দেশে একের পর এক মানসম্পন্ন ছবি তৈরি হচ্ছে। সে ছবিগুলোর আস্তে আস্তে দর্শকও তৈরি হচ্ছে।
পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ বলেন, আমরা তো ১৯ সংগঠন মিলে ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় হিন্দি ছবি আমদানির ব্যাপারে যে আপত্তি ছিল তা তুলে নিয়েছি। আমরা আশা করছি, এতে করে হল মালিকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন। একইসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে আবার কিন্তু ভালো ছবির সংখ্যা বাড়ছে। আমার বিশ্বাস আগামী দুই বছরের মধ্যেই দেশীয় ছবি দিয়ে সিনেমা হল মালিকরা ব্যবসা করতে পারবে। তখন আর হিন্দি ছবির দরকার হবে না।
যাদের দাবির প্রেক্ষিতে হিন্দি ছবি আমদানি, তাদের সংগঠন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ হিসেবে দিয়েছেন বছর দুয়েক হয়ে গেল। অনেক হল মালিক শুরুতে এ নিয়ে কনফিউশনে ছিল, ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিল। হিন্দি আসার কারণে অনেক হল মালিক ঋণ নিতে চাইছেন। ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেয়েছে। এর সুফল কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিই ভোগ করবে।
সারাবাংলা/এজেডএস/এএসজি
ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ বিনোদন সিনেমা হিন্দি ছবি আমদানিতে দিন কি ফিরবে?