Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নজরুলের গানের বিকৃতি, ছায়ানটের ধিক্কার ও নিন্দা

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০২

বাংলার এমন কিছু গান আছে যা শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, দেশাত্মবোধের ভাব মনকে নাড়া দিয়ে যায়- তার মধ্যে অন্যতম নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি। তার প্রতিটা কথা, সুর ভাবায়, মনে ছাপ ফেলে। এবার সেই গানকেই ব্যবহার করা হল হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য়। আর সে গানের নতুন ভাবে এই ছবির জন্য অ্যারেঞ্জ করেছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। গানটির সুর-তাল বদলে দিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। এ বিকৃতি মেনে নিতে পারছেন না দুই বাংলার শ্রোতারা। এ নিয়ে এখন অনেকেই সোচ্চার। এ কার্যক্রমে যারপরনাই হতাশ হয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। এবার এই গান নিয়ে ক্ষোভ জানাল দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’।

ছায়ানটের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়_

“এই উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম স্বদেশপ্রেমের পটভূমিতে ভাঙার গান শিরোনামে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি রচনা করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তো বটেই, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ভাগের পর পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ কোটি বাঙালিকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে বিদ্রোহী কবির এই গান।

‘সম্প্রতি ভারতীয় একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর এবং আঙ্গিকে কালজয়ী গানটি পরিবেশিত হয়েছে। আমরা মনে করি এই উদ্যোগ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চরম অবমাননা, স্রষ্টার অমর্যাদা এবং সংস্কৃতিবিনাশী কাজ।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল রচিত, পরাধীনতায় জর্জর মানুষকে জাগিয়ে তোলার এই গান বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ; অঙ্গাঙ্গী মিশে আছে আমাদের মর্মে, আত্মপরিচয়ের বিশ্বাসে। যে সুর ও বাণীর এমন ঐতিহাসিক পটভূমি, গভীর তাৎপর্য তার ন্যূনতম বিচ্যুতি বাঙালি সইবে না, মানবে না কোনো বাণিজ্যিক চটুল বিকৃতি।

কাজী নজরুল ইসলামের সকল সৃষ্টিই বাঙালি তথা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সেই স্রষ্টার কালোত্তীর্ণ কর্মকে পণ্য করে কোনো ব্যক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠীর হীন বাণিজ্য করবার অপপ্রয়াস আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বকালে পাকিস্তানি শাসকেরা কাজী নজরুলকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল, কিন্তু মুক্তবুদ্ধির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি প্রতিবাদে মুখর হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। বিকৃত-সংস্কৃতির আগ্রাসনে আবারো সেই সম্মিলিত প্রতিবাদ-ঝড় তোলার সময় সমাগত।

অমর গানটির প্রকৃত সুর-আবেদন-আবেগে আমূল পরিবর্তন আমাদের সংস্কৃতি ও মননে অপূরণীয় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। ছায়ানট এই ধরণের ধৃষ্টতা ও সাংস্কৃতিক তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং বিকৃত গানটির প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করে, প্রয়োজনে অবিকৃত গানের সংযোজন ও প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।

ছায়ানট রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলার সকল গীতিকার ও সুরকারের নিজস্ব ও অনুমোদিত বাণী ও সুরের শুদ্ধ চর্চা ও প্রসারে নিয়োজিত এবং সে সকল সৃষ্টির যে কোনো ধরণের বিকৃতিকেই অপরাধ বলে মনে করে।”

সারাবাংলা/এএসজি

নজরুলের গানের বিকৃতি- ছায়ানটের ধিক্কার ও নিন্দা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর