রজনীকান্ত: বাস কন্ডাক্টর থেকে সুপারস্টার
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮
বয়স যেন তার কাছে একটি সংখ্যা মাত্র। মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি। মাথায় টাক। চেহারা ‘নায়কসুলভ’ নয়। তারপরও এই মানুষটি যখন রুপোলী পর্দায় হাজির হন- পুরো দক্ষিণ ভারতেই যেন হইচই পড়ে যায়। বলছি সুপারস্টার রজনীকান্তের কথা। যিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেতাই নন, ভক্তদের কাছে তিনি তার চেয়েও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে তিনি দেবতার সমতুল্য। তাই তো ভালোবাসে তাকে তারা ‘থালাইভা’ নামেই সম্বোধন করে থাকেন।
আজ ১২ ডিসেম্বর এই অভিনেতার জন্মদিন।
জানা যায়, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন রজনীকান্ত। তবে তার এই রজনীকান্ত হয়ে ওঠার গল্পটা খুব একটা সহজ ছিল না। বলা যায়, তার সুপারস্টার হওয়ার গল্পটা যেন সিনেমার গল্পের মতোই।
পেশাগত জীবনে তামিল সিনেমার মহাতারকা হলেও রজনীকান্তের জন্ম এক মারাঠি পরিবারে ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর। তার পারিবারিক নাম ছিল শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। শৈশবে এই সুপারস্টারের পরিবার ছিল চরম আর্থিক সংকটে। তাই অভিনয়ের প্রতি প্রবল টান থাকা সত্ত্বেও তরুণ শিবাজী তথা আজকের রজনীকান্তকে ক্যারিয়ারের শুরুতে জড়াতে হয়েছিল কাঠমিস্ত্রি ও কুলিসহ বেশ কয়েকটি কাজের সঙ্গে। এমন কি ব্যাঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে বাস কন্ডাক্টর হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে এক বন্ধুর সহায়তায় মাদ্রাজ ফিল্ম স্কুলে অভিনয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সেখানেই নজরে পড়েন সে সময়ের খ্যাতিমান পরিচালক কে. বালাচরণের। ১৯৭৫ সালে বালাচরণের ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ সিনেমার মাধ্যমে তামিল সিনেমায় অভিষেক ঘটে রজনীকান্তের। চলচ্চিত্রটি বেশ প্রশংসিত হয় এবং তিনটি জাতীয় পুরষ্কার জিতে নেয়। পরের বছর পুত্তান্না কানাগাল পরিচালিত ‘কথা সঙ্গমা’ দিয়ে কন্নড় চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রজনীকান্তের। একের পর এক ছবিতে বাজিমাত করলেও দক্ষিণী সিনেমায় নিজের শক্ত অবস্থান গড়তে তাকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম।
১৯৭৮ সালে ‘ভৈরবী’ সিনেমায় প্রথমবার নায়কের চরিত্রে অভিষেক হয় তার। তবে রজনীকান্তের অনস্ক্রিন ইমেজ ফুটিয়ে তোলার প্রধান কারিগর ছিলেন পরিচালক এস পি মুথুরামন। মুথুরামনের মেলোড্রামা ‘আরিলিরুন্থু আরুবাথু ভারাই’ ছবিটি ছিল রজনীকান্তের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। বলা যায়, এই সিনেমা দিয়েই তিনি অভিনেতা থেকে অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠেন।
দক্ষিণে একের পর এক সাফল্যের পর ১৯৮৩ সালে অমিতাভ বচ্চন ও হেমা মালিনীর সঙ্গে ‘আন্ধা কানুন’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে পা রাখেন রজনীকান্ত। এটি সেই সময়ের সর্বাধিক উপার্জনকারী সিনেমা হয়ে উঠেছিল। এই সিনেমা থেকেই রজনীকান্ত ও অমিতাভ বচ্চনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর তারা ‘গ্রেফতার’ ও ‘হাম’র মতো ব্যবসাসফল হিন্দি সিনেমাতে একসঙ্গে কাজ করেন।
রজনীকান্ত তার ক্যারিয়ারে ছয়টি তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরষ্কারের পাশাপাশি পেয়েছেন ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব। ২০১৯ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মান ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কারও অর্জন করেন এই অভিনেতা।
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্থ ও খ্যাতির পাশাপাশি পেয়েছেন দর্শকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। তাইতো প্রিয় এ তারকাকে ‘থালাইভা’ বলে ডাকতেই বেশি পছন্দ করেন ভক্তরা। তামিল ভাষায় যার অর্থ ‘স্যার’ বা ‘গুরু’।
দেখুন ভিডিও_
সারাবাংলা/এএসজি
অমিতাভ বচ্চন জন্মদিন দক্ষিনী ইন্ডাস্ট্রি দক্ষিনী মহাতারকা দক্ষিনী সুপারস্টার বাস কন্ডাক্টর থেকে সুপারস্টার রজনীকান্ত