ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, প্রতিবাদ সহকর্মীদের
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৪ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৮
অভিনেতা-প্রযোজক ও বিজ্ঞাপন সংস্থা এশিয়াটিকের পরিচালক ইরেশ যাকের। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে ২০ এপ্রিল। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিরপুরে গুলিতে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ মারা যান। তাকে হত্যার অভিযোগে ইরেশসহ ৪০৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।
মামলার খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই এর সমালোচনা হচ্ছে সর্বত্র। ইরেশ যাকেরের সহকর্মীরা এ নিয়ে প্রকাশ করছেন ক্ষোভ। তারা বলছেন, ইরেশ অভিনেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন। আন্দোলনের সময় ইরেশ ও তার স্ত্রীর একটি ছবিও সবাই শেয়ার করছেন।
জুলাই আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকা অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আজ ইরেশকে হেনস্তার শিকার হতে দেখে হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও দেখেছি যারা সাহস করে সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের কী পরিণতি হয়েছে। তবুও যখন আমরা ভেবেছিলাম একটি ভালো, নিরাপদ দেশ গড়ছি, তখন এই দৃশ্য এখনও গভীরভাবে কষ্টদায়ক ও হতাশাজনক।’
প্রতিবাদী নির্মাতা ও জুলাইযোদ্ধা আশফাক নিপুণ বলেন, ‘অগাস্ট মাসের ১ তারিখ ফার্মগেটে আমার সঙ্গে, আমাদের অনেকের সঙ্গে পুরোটা সময় ইরেশ যাকের এবং তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়েছিলেন ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদে। ওনার এবং আমাদের অনেক সহকর্মী একই সময় বিটিভি ভবনে শোক প্রকাশ করতে গেলেও উনি সেখানে যান নাই। উনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, হোক কিন্তু উনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিতান্তই হাস্যকর। এরকম গায়েবী মামলায় আসামি করতে গিয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সত্যিকার আসামিদের পরিত্রাণের পথ যে সুগম করে দেয়ার পায়তাঁরা হচ্ছে। সেই বিষয়ে সাবধান হন সরকার।’
অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা বলেন, ‘প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ, তারপর জুলাই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে হত্যা মামলা। মজার মিল, তাই না? আর সেটাও সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যিনি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন।’
ইরেশের প্রযোজনায় নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। তিনি বলেন, ‘ইরেশ যাকের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আর তার বিরুদ্ধে কিনা জুলাই হত্যা মামলা!’
নির্মাতা-প্রযোজক রেদওয়ান রনি বলেন, যিনি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তার বিরুদ্ধেই জুলাই হত্যা মামলা! লজ্জাজনক তো বটেই তবে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এতে জুলাই হত্যা মামলাগুলোকে খেলনা ও মূল অপরাধীদের আড়াল করার ষড়যন্ত্রটা চোখের আড়ালে থেকে যায়। জুলাই আন্দোলন যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইরেশ যাকের। কিন্তু মনগড়া ঢালাও হত্যা মামলা খুবই হতাশাজনক! এই সরকারের কাছে একটাই চাওয়া আবারও যেন ভিন্ন ফর্মে ফ্যাসিবাদের চাষ শুরু না হয়, দ্রুত পদক্ষেপ কাম্য।
জনপ্রিয় উপস্থাপক আরজে কিবরিয়া বলেন, ‘ইরেশ যাকের কে হত্যা মামলার আসামি! মানে এই লিস্ট গুলা বানায় কারা? এরা কি আসলেই চায় জুলাই অপরাধীদের বিচার হোক? কাজে কর্মে তো মনে হয় না।’
এর আগে ২৫ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) কর ফাঁকির অভিযোগে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনস লিমিটেডের (এশিয়াটিক এমসিএল) সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এটি এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির প্রধান প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ জাকের এবং চেয়ারপারসন তার মা সারা জাকের।
সারাবাংলা/এজেডএস/এএসজি