Saturday 17 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আছিয়া শুধু একটি নাম নয়, এ এক অপার যন্ত্রণা

সানজিদা যুথী
১৭ মে ২০২৫ ১৪:০৬ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ১৪:০৭

মাগুরার সাত বছরের ছোট্ট শিশু আছিয়া। নিস্পাপ মুখে ছিল পৃথিবীকে আবিষ্কারের স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে যায় গত ৬ মার্চ। বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে এক নরপিশাচের হিংস্র থাবায় ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ক্ষতবিক্ষত দেহে রক্ত আর যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে একসময় হার মানে— আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং আইনব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার কাছে হার মানে এক নিষ্পাপ প্রাণ।

বিজ্ঞাপন

আজ মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সেই মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু মামলার বাকি তিন আসামি খালাস পেয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায়— শুধু একজনের শাস্তি দিয়ে কি প্রকৃত বিচার হয়? নাকি প্রতিটি অপরাধীর পাশাপাশি আমরা সবাই দায়ী— যারা সময়মতো মুখ খুলি না, প্রতিবাদ করি না, চুপ করে থাকি?

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (BSAF) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ১,৫০০’র বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ছিল ১২ বছরের নিচে। প্রতিদিন গড়ে চারজনেরও বেশি শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়— প্রতিটি সংখ্যা একেকটি ভেঙে যাওয়া পরিবার, অসহায় মা-বাবা, থেমে যাওয়া শৈশবের করুণ দলিল।

আমরা উন্নয়নের গল্প বলি, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আঁকি, অথচ ঘরে-বাইরে এমনকি আত্মীয়-স্বজনের কাছেও আমাদের মেয়েরা, আমাদের শিশুরা নিরাপদ নয়। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও যদি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি, তবে আমরা কী ধরনের সভ্যতা গড়েছি?

এই সমাজে নারী এখনো ভয়ে কুঁকড়ে থাকে— অফিসে, স্কুলে, রাস্তায়, এমনকি নিজের ঘরেও। প্রতিনিয়ত তাকে হেনস্তা, নিপীড়ন আর সহিংসতার ভয় নিয়ে চলতে হয়। আমরা ভুলে যাই, সমাজের অর্ধেক মানুষ নারী। তাদের বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত মানসিকতার পরিবর্তন। পুরুষতান্ত্রিক শ্রেষ্ঠত্ববোধ ভেঙে ফেলতে হবে। পরিবারে, শিক্ষায়, সামাজিক আচার-আচরণে এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হবে— কোনো বস্তু বা ভোগ্যপণ্য নয়।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রকে অবশ্যই শিশু ও নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আইন থাকলেই চলবে না, তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

আছিয়া আজ নেই। কিন্তু তার আর্তনাদ এখনো বাতাসে বাজে। পাড়ার প্রতিটি গলি আজো স্মরণ করে সেই চিৎকার। এক মা আজো ঘুম ভেঙে ওঠেন দুঃস্বপ্নে।

আমরা কি এমন একটি দেশ গড়তে পারি না, যেখানে আর কোনো আছিয়া ধর্ষণের শিকার হবে না? যেখানে আর কোনো মা সন্তানের লাশ জড়িয়ে বিলাপ করবে না, ‘আমার মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলে না?’

এই দায় রাষ্ট্রের, এই দায় সমাজের— কিন্তু সবচেয়ে বড় দায় আমাদের সকলের। আসুন, আমরা বলি— আর না।

একটি নিরাপদ, সমানাধিকারভিত্তিক, সহানুভূতিশীল সমাজ চাই— আছিয়ার জন্য, আমাদের সবার জন্য।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

আছিয়া রোকেয়া সরণী সানজিদা যুথী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর