Friday 30 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিয়ানো: সুরের রাজ্যে এক চিরন্তন যন্ত্র

ফারহানা নীলা
২৭ মে ২০২৫ ১৭:০১

‘পিয়ানো’ এটি শুধুই একটি বাদ্যযন্ত্র নয়। এ যেন এক অনন্ত অনুভব, যার প্রতিটি চাবি একেকটি দরজা খুলে দেয় হৃদয়ের অজানা রাজ্যে। যেন একেকটি গল্প বলে। কখনো তা প্রেমের আবেগে সিক্ত, কখনো বিষাদের নীরব টান। এর মোলায়েম, প্রাণবন্ত ও গভীর সুর মানুষকে যেমন শান্তি দেয়, তেমনি আবেগের জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

ইতিহাসের পাতা থেকে

পিয়ানোর জন্ম হয় ১৭০০ সালের দিকে ইতালিতে। বার্তোলোমেও ক্রিস্টোফোরি নামক একজন মেধাবী যন্ত্রনির্মাতা প্রথম আধুনিক পিয়ানোর আবিষ্কার করেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল এমন একটি যন্ত্র তৈরি করা, যাতে সংগীতশিল্পীরা স্বর বা ভলিউম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন—মৃদু থেকে উচ্চ সুরে। এই কারণেই এর নাম রাখা হয় ‘pianoforte’, যার অর্থ— ‘নরম এবং জোরে’।

এক আবেগময় সঙ্গী

পিয়ানো কেবল একটি যন্ত্র নয়, একজন সঙ্গীও বটে। যেখানে একজন শিল্পীর ভাবনার প্রকাশ ঘটে প্রতিটি স্পর্শে। ক্লাসিক্যাল সংগীতে যেমন মোৎসার্ট, বিথোবেন, চোপিন—তেমনি আধুনিক জ্যাজ, ব্লুজ বা পপ সংগীতেও পিয়ানোর ব্যবহার অভাবনীয়। ঘরে, স্টুডিওতে কিংবা কনসার্ট হলে পিয়ানো প্রতিটি পরিবেশকেই সুরের রঙে রাঙিয়ে দেয়।

মনের চিকিৎসক

পিয়ানোর সুর মনকে প্রশান্ত করে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে পিয়ানো বাজানো ও শোনা, উভয়ই চমৎকার উপায়। অনেক থেরাপি সেন্টারে মিউজিক থেরাপির অংশ হিসেবেও পিয়ানোর ব্যবহার করা হয়। তাই সুরের মূর্ছনার এই যন্ত্রটি, অনেকের মনের চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিয়ানো

পিয়ানো, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র হলেও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি এক ব্যতিক্রমী ও কৌতূহলোদ্দীপক অবস্থানে রয়েছে। যেখানে ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম, এসরাজ, দোতারার মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্র আমাদের সংগীতজগতের মূলে, সেখানে পিয়ানো এসেছে এক বিদেশি অথচ মনোমুগ্ধকর সুরের দূত হয়ে। ধীরে ধীরে, এই বাদ্যযন্ত্রটি আমাদের দেশীয় সংগীতে এবং সাংগীতিক শিক্ষায় এক অনন্য অবদান রেখে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

শহুরে সাংগীতিক বিকাশে পিয়ানোর আবির্ভাব

বাংলাদেশে পিয়ানোর আগমন ঘটে মূলত শহুরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে বিদেশফেরত শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা পিয়ানো বাজানো শেখেন এবং দেশে ফিরে একে পরিচিত করতে শুরু করেন। ঢাকার কিছু নামী সংগীত বিদ্যালয়—যেমন ছায়ানট, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইত্যাদি—কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিয়ানো শিক্ষা চালু করে।

বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও আন্তর্জাতিক স্কুলগুলোতে পিয়ানো শেখার ব্যবস্থা চালু হয়, যেখানে শিশুরা পশ্চিমা ধাঁচের সংগীতের সঙ্গে পরিচিত হয়। ধীরে ধীরে পিয়ানো এক শ্রেণিভিত্তিক অভিজাততার প্রতীক না থেকে হয়ে উঠেছে এক সৃজনশীল মাধ্যম, যা শিশুদের হাতে সংগীতচর্চার দ্বার উন্মোচন করে।

সংগীতশিল্পীদের হাতে পিয়ানোর নতুন রূপ

বাংলাদেশের অনেক তরুণ সংগীতশিল্পী যেমন: জন কবির, ইমন চৌধুরী, জোহাদ (নেমেসিস), ফুয়াদ আল মুক্তাদির, হাবিব ওয়াহিদের মতো শিল্পীরা নিজেদের গানে পিয়ানো ব্যবহার করেছেন এক নতুন মাত্রা আনতে। পিয়ানো শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড হারমোনি নয়, বরং মেলোডির চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। আধুনিক ফিউশন, একুস্টিক আর ইন্ডি ধারার বাংলা গানগুলোতে পিয়ানো এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

সংস্কৃতি ও পিয়ানোর মেলবন্ধন

বাংলাদেশে পিয়ানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো এর সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরি করা। বাংলাগানে যখন পিয়ানোর সুর মিশে যায়, তখন তা এক অন্যরকম আবেগ তৈরি করে। নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান বা আধুনিক রোমান্টিক গানেও এখন পিয়ানোর স্পর্শ দেখা যায়, যা প্রমাণ করে—এই যন্ত্রটি বাংলার সংগীতভুবনে জায়গা করে নিয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

পিয়ানো কিনতে চান?

অনলাইন স্টোর: Ryans Computers, Star Tech, ShopZ BD, Pro Music BD – এই অনলাইনগুলো থেকে আকার ও মান ভেদে ৭ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার দামের মধ্যে কিনে নিতে পারবেন পিয়ানো।

পিয়ানো একটি জীবন্ত অনুভূতি—যা কখনো একা বসে বাজাতে মন চায়, আবার কখনো শত মানুষের সামনে তা পরিবেশনের তাগিদ দেয়। যার প্রতিটি সুর, প্রতিটি অগ্রগতি একজন মানুষকে আরও আবেগপ্রবণ, গভীর ও সৃষ্টিশীল করে তোলে। কখনোও বা ঘরের সৌন্দর্যের জন্যও রাখা হয় একটি পিয়ানো। খুব সকালে এক কাপ গরম চা হাতে নিয়ে পিয়ানোতে সূর তুলে হারিয়ে যেতে পারেন সেই সৃষ্টির জগতে।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

পিয়ানো ফারহানা নীলা ফিচার বিচিত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর