সকাল থেকে রাত—সময় যেন শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় দৌড়ানো একেকটা কাজের তালিকা। ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা জীবন, প্রতিটি দায়িত্ব যেন আরও পরিপক্ব হতে শেখায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই বড়দের জগতে ‘শিশু’টি কি একেবারে হারিয়ে গেছে?না, অন্তত ১৪ জুন নয়। কেননা আজ ‘মাঙ্কি অ্যারাউন্ড ডে’। এমন একটা দিন যা আমাদের উৎসাহিত করে জীবনের গাম্ভীর্য ঝেড়ে ফেলে একটু বাঁদরামো করতে।
এই দিনে আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয় একটু দুষ্টুমি করতে, হাসতে, খেলতে, আর সবচেয়ে বড় কথা—জীবনটাকে কিছুটা হালকাভাবে নিতে। ইংরেজি প্রবাদ ‘monkeying around’ এর মানে হলো, সময় কাটানো হালকা মজায়, দুষ্টুমিতে, বা কিছু নিয়ম ভেঙে একটু মজা করার ছলে।
‘Monkey Around’ মানে কি?
ইংরেজিতে ‘Monkeying Around’ শব্দবন্ধটি মানে, দুষ্টুমি করা, সময় নষ্ট করা (শুধুই মজা করে), বা কোন কাজ না করে খেলাধুলা/মজা করে সময় কাটানো। শব্দটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ছোটবেলার সেই দিনগুলো—যখন চেয়ারকে বানিয়েছিলাম গাড়ি, আর সোফার পেছনে লুকিয়ে খেলতাম চোর-পুলিশ।
কেন এমন এক দিবস?
আমরা সবাই কমবেশি জীবনযাপনের চাপে জর্জরিত। কাজ, পরিবার, পড়াশোনা কিংবা ব্যক্তিগত লক্ষ্য—সবকিছুর ভারে অনেক সময় আমরা হাসি-মজাকে ভুলে যাই।
এই ‘Monkey Around Day’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের মাঝে মাঝে একটু ‘পাগলামি’ করাও জরুরি—একটু নির্মল আনন্দ, একটু ছেলেমানুষি।
কিভাবে পালন করা যায়?
পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটান
বাচ্চাদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠুন
প্রিয় গান চালিয়ে নাচে ঝাঁপিয়ে পড়ুন
সহকর্মীদের সঙ্গে মজার চিঠি বা কৌতুক শেয়ার করুন
সামাজিক মাধ্যমে #MonkeyAroundDay হ্যাশট্যাগে অংশ নিন।
পরিবার নিয়ে হঠাৎ কোথাও বেড়িয়ে আসুন, একদম পরিকল্পনাহীন
ছোটবেলার দুষ্টুমির ছবি শেয়ার করুন সোশ্যাল মিডিয়ায়
ঘরে বানিয়ে ফেলুন একটা পাজল, বা বাচ্চাদের মত ছবি আঁকুন
বড়দের দুষ্টুমিও কিন্তু জরুরি!
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, নিয়মিত চাপ ও অভ্যস্ত রুটিন মানুষকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়। এর থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় হলো—মাঝে মাঝে নিজের ছেলেমানুষিপনা ফিরিয়ে আনা।
আমরা যখন হাসি, খেলি, অথবা ইচ্ছেমতো কিছু করি, তখন মস্তিষ্কে ডোপামিন বা ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসৃত হয়—যা আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য দারুণ উপকারী।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘মাঙ্কি অ্যারাউন্ড ডে’
যদিও ‘Monkey Around Day’ মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে—মজার একটি অপ্রচলিত দিবস হিসেবে পালিত হয়, তবে এর অন্তর্নিহিত বার্তা বাংলাদেশের বাস্তবতা ও সংস্কৃতির সঙ্গেও বেশ মানানসই।
কেন এটা আমাদের জন্যও জরুরি?
বাংলাদেশে আমরা অনেক সময় কর্মব্যস্ততা ও পারিবারিক দায়িত্বে এতটাই জর্জরিত, যে নিজের জন্য একটু সময় বের করাটাও কঠিন হয়ে যায়।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দিতে পারে, পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নির্মল আনন্দ সময় কাটানো কতটা দরকার।
শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো, হাসা-খেলা করা, এবং ছোট ছোট মুহূর্ত উপভোগ করাও জীবনের অংশ।
কখনো কখনো জীবনকে হালকাভাবে নেওয়া জরুরি—এটিও এক ধরনের মানসিক চর্চা।
স্কুল, পরিবার ও অফিসে এ দিবসের ব্যবহার
স্কুলে: শিশুরা ছবি আঁকা, দুষ্টু গল্প বলা বা খেলাধুলার মাধ্যমে এই দিন উদযাপন করতে পারে।
পরিবারে: অভিভাবকরা সন্তানের সঙ্গে একদিনের ‘নিয়ম ভাঙা’ মজার দিন রাখতে পারেন—যেমন বালিশ যুদ্ধ, হোম থিয়েটার, মজার খাওয়া।
অফিসে: কর্মীরা নিজেদের চাপ কমাতে একদিন ‘ফান অ্যাক্টিভিটি’ বা ‘হালকা প্রতিযোগিতা’-র মাধ্যমে কাজের মাঝে হাসি আনতে পারেন।
নিজের ছায়াকে হাসতে দিন
এই দিনটি কেবল একটা মজার দিন নয়, বরং এক ধরনের মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস। দিন শেষে, যদি আয়নায় তাকিয়ে বলতে পারেন—’ আজ একটু বাঁচলাম’—তাহলেই তো দিবসটা সার্থক।
জীবনের হিসাবগুলো যতই কঠিন হোক, তার মাঝে একটু খেলা থাকলে—জীবনও হয়ে ওঠে উপভোগ্য।
জীবন যদি হয় একটা কঠিন অংকের বই, তবে ‘Monkey Around Day’ যেন তার মাঝে একটা রঙিন ডুডল—নিয়মের বাইরেও যে আনন্দ আছে, সেটার উৎসব। তাই আজ নিজের মধ্যে থাকা চঞ্চল, প্রাণবন্ত, বাঁদরটিকে জাগিয়ে তুলুন।
একটু হেসে নিই না, আজ তো ‘মাঙ্কি অ্যারাউন্ড ডে’!…… হি: হি: হি: হি:, হোহ হোহ হো, হা: হা: হাহ।