‘হাসি’ পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা, কিন্তু সবচেয়ে দামী উপহার। সকালের কচি রোদের মতো একটু হাসি—পুরো দিনটাই বদলে দিতে পারে। কেউ হয়তো অফিসে ঢুকছে মন খারাপ করে, আর তখন সহকর্মীর ছোট্ট একটুখানি হাসি বদলে দেয় তার সারা দিনের মুড। আবার কেউ হয়তো হেঁটে যাচ্ছিল একাকী, এক কাপ চা-ওয়ালার মুখের আন্তরিক হাসিটা তাকে মনে করিয়ে দেয়—এই শহরে এখনো উষ্ণতা আছে। অর্থাৎ- একটা হাসি অনেক দূর যেতে পারে। এই কথাটি আজকের দিনে আরও গভীরভাবে অনুভব করার দিন। ১৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় Smile Power Day—একটি বিশেষ দিন যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটি ছোট্ট হাসিও হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি।
হাসি মানেই ইতিবাচক শক্তি
আপনি হয়তো কখনো ভাবেননি—একটা নির্ভেজাল হাসি কারো মন থেকে উদ্বেগ সরিয়ে দিতে পারে। অফিসে সহকর্মীর মুখের হাসি, বাসার রাঁধুনির মুখে ক্লান্তির মাঝেও এক চিলতে হাসি, কিংবা ট্রাফিক পুলিশ চেনা মুখে পরিচিত হাসি—সবই যেন অদৃশ্য এক সৌন্দর্যবিন্দু বয়ে নিয়ে আসে। Smile Power Day-এর মূল বার্তাটিই এই—হাসি শুধু আবেগ নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক শক্তি, যা সম্পর্ক গড়ে তোলে, ভাঙা মন জোড়া লাগায়।
বিজ্ঞান কী বলে?
গবেষণা বলছে, আমরা যখন হাসি, তখন শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন নামের ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসৃত হয়। এটি শুধু আমাদের মুড ভালো করে না, বরং মানসিক চাপ, হতাশা ও রক্তচাপও কমাতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একটি হাসির প্রতিক্রিয়া অন্যজনের মধ্যেও সৃষ্টি করে একই অনুভব। অর্থাৎ, হাসি ‘সংক্রামক’, এবং এটাই এর আসল শক্তি। ছোট্ট একটি হাসি হতে পারে মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠি। আপনি কি জানেন? শিশুরা দিনে গড়ে ৩০০ বার হাসে, আর প্রাপ্তবয়স্কেরা? মাত্র ১৫ থেকে ২০ বার! হাসি কি সংক্রামক? হ্যাঁ! একজন মানুষের হাসি দেখে আরেকজন হাসতে শুরু করলে সেটা আমরা ‘সংক্রামক হাসি’ বলি। এটা কোনো রসিকতা নয়, বরং বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় Mirror Neuron Effect—আমরা প্রাকৃতিকভাবেই অন্যের মুখভঙ্গি ও আবেগ অনুকরণ করি। তাই আপনি যখন হেসে উঠেন, সেটা আসলে চারপাশে ছড়িয়ে দেয় একধরনের অদৃশ্য কিন্তু সুন্দর আলো।
স্মাইল পাওয়ার ডে কীভাবে এলো?
যদিও এই দিবসটি জাতিসংঘ ঘোষিত নয়, তবে এটি পশ্চিমা দেশে জনপ্রিয় এক ‘আনঅফিশিয়াল হলিডে’ হিসেবে পরিচিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় #SmilePowerDay হ্যাশট্যাগে অসংখ্য মানুষ এদিন নিজেদের হাসিমাখা ছবি, ইতিবাচক অভিজ্ঞতা আর দারুণ উক্তি শেয়ার করে।
এই দিনে আপনি কী করতে পারেন?
কাউকে বিনামূল্যে হাসি দিন—কোনও প্রত্যাশা ছাড়াইএকটি পজিটিভ মেসেজ বা হাস্যরসাত্মক মেসেজ পাঠান। প্রিয়জনকে, বাসার পরিচারিকা বা অফিস বয়কে বলুন, ‘তোমার হাসিটা দারুণ!’ আয়নায় নিজেকে দেখে হাসুন—কারণ আপনি সেটার যোগ্য।
এই পৃথিবীতে হয়তো সবকিছু বদলে দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আপনার হাসি দিয়ে আপনি কাউকে একটু শান্তি দিতে পারেন। আজ না হয় চেষ্টা করেই দেখুন—একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কারো দিন বদলে দিতে পারেন কি না। কারণ, হাসির কোনও দাম নেই, কিন্তু এর মূল্য অসীম।