‘আমি সোমবারকে ঘৃণা করি!’ — এই একটি বাক্য দিয়েই কোটি মানুষের মন জয় করে নিয়েছে কমিক দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত বিড়াল গারফিল্ড। আর তাই প্রতি বছর ১৯ জুন উদযাপন করা হয় Garfield the Cat Day — গারফিল্ডের জন্মদিন এবং প্রথম প্রকাশের স্মরণে একটি বিশেষ দিন।
কেমন করে শুরু হলো গারফিল্ডের গল্প?
১৯৭৮ সালের ১৯ জুন, আমেরিকান কার্টুনিস্ট জিম ডেভিস প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন গারফিল্ড কমিক স্ট্রিপ। তার পর থেকে এই কমলা রঙের মোটা বিড়ালটি হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে অলসতা, লাসান্য আর লাসানিয়ার এক অসাধারণ প্রতীক।
কে এই গারফিল্ড?
গারফিল্ড শুধু একটা বিড়াল নয় – সে এক জীবনদর্শন!
সে ঘুমাতে ভালোবাসে
লাসানিয়া খেতে পাগল
আর সবচেয়ে বড় কথা, সে অলসতায় গিনেস রেকর্ড করতে পারে!
তার সঙ্গী জোন আর্বাকল – এক নিরীহ, একাকী মানুষ, যার জীবন যেন গারফিল্ডের খামখেয়ালিপনার শিকার।
কমিক থেকে কার্টুন, সিনেমা পর্যন্ত …
গারফিল্ডের জনপ্রিয়তা শুধু সংবাদপত্রেই থেমে থাকেনি। সে এসেছে অ্যানিমেটেড সিরিজে, বড় পর্দায় সিনেমায়, এমনকি হাজারো পণ্য সামগ্রীতে – মগ, টি-শার্ট, ব্যাগ, স্টিকার, কি না আছে?
বর্তমানে ‘Garfield’ কার্টুন কোথায় প্রচার হচ্ছে?
১. টিভিতে:
Boomerang, Cartoon Network ও কিছু ক্ষেত্রে Nickelodeon-এ মাঝে মাঝে ‘The Garfield Show’ পুনঃপ্রচার হয়।
এই শোটি মূলত ২০০৯-২০১৬ পর্যন্ত প্রোডিউস হয় এবং অনেক দেশে এখনও সিডিউলভিত্তিক প্রচার হয়।
২. স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে:
Netflix, Amazon Prime Video, বা Tubi TV–তে ‘Garfield and Friends’ এবং ‘The Garfield Show’ দেখা যায় (দেশভেদে ভিন্নতা থাকতে পারে)।
ইউটিউবেও অফিসিয়ালভাবে অনেক Garfield এপিসোড আপলোড আছে।
বাংলাদেশে গারফিল্ডের জনপ্রিয়তা কেমন?
১. আগের প্রজন্মের কাছে খুবই পরিচিত:
’৯০-এর দশকে ও ২০০০ এর শুরুতে যারা কার্টুন নেটওয়ার্ক বা স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতেন, তাদের কাছে গারফিল্ড ছিল একটি জনপ্রিয় চরিত্র।
ইংরেজি শিখতে শেখার সময় এই ধরনের কমিক স্ট্রিপ ও অ্যানিমেশন অনেক শিশু ও টিনেজারের সহচর ছিল।
২. বর্তমান প্রজন্মের মাঝে একটু কম পরিচিত:
বর্তমানে টেলিভিশনে ‘Ben 10’, ‘Shinchan’, ‘Doraemon’, ‘Motu Patlu’ ইত্যাদির আধিক্য থাকায় গারফিল্ড নতুন প্রজন্মের শিশুদের কাছে কম দেখা যায়।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় গারফিল্ডের অলসতা ও মজার কোটস নিয়ে অনেক মিম বা রিল পাওয়া যায়—বিশেষত তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে নতুন করে জনপ্রিয় করার সুযোগ:
বাংলায় ডাবিং করে ইউটিউব বা টিভিতে আবার চালু করা হলে শিশুদের মধ্যে আবার জনপ্রিয় হতে পারে।
গারফিল্ডের ক্যারেক্টার অনেকটাই বাঙালি ধাঁচের: খাওয়া, ঘুম আর ঝামেলা না পছন্দ—যা খুবই রিলেটেবল!
স্কুল-কলেজে ফানি ক্যারেক্টার হিসেবে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে শিক্ষামূলক কনটেন্টে।
পজিটিভ (ইতিবাচক) প্রভাব
হাস্যরস ও কৌতুকবোধ গড়ে তোলে।
গারফিল্ডের মজার মন্তব্য ও অলসতার সংলাপ শিশুদের কৌতুক বোধ ও রসবোধ বাড়াতে সাহায্য করে।
আত্ম-উপহাস (self-deprecating humor) বুঝতে শেখে, যা আবেগগত বুদ্ধিমত্তার অংশ।
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি শেখায়
গারফিল্ড জগৎকে একটু অন্যভাবে দেখে, যা শিশুদের আলট্রনেটিভ থিংকিং বা কল্পনা শক্তি বাড়ায়।
বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্কের বার্তা দেয়।
গারফিল্ড ও তার মালিক জোন-এর মধ্যকার সম্পর্কটি শিশুদের শেখায় বন্ধুত্ব, সহনশীলতা ও যত্নশীলতা কেমন হওয়া উচিত।
অত্যধিক অ্যাকশন বা সহিংসতা নেই
অনেক আধুনিক কার্টুনে মারপিট বা উচ্চ চিৎকার থাকে, যেখানে গারফিল্ড মূলত শান্ত, সংলাপনির্ভর এবং রিল্যাক্সড কনটেন্ট – যা শিশুদের জন্য চোখ ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর চাপ কমায়।
Garfield কার্টুনটি সরাসরি ক্ষতিকর নয়, তবে বয়সভেদে ব্যাখ্যা ও গাইডেন্স প্রয়োজন।
ছোট শিশুদের (৬-৯ বছর) ক্ষেত্রে অভিভাবক বা বড় কেউ পাশে থেকে ব্যাখ্যা করলে এটি আনন্দদায়ক ও শিক্ষণীয় হতে পারে।
বড় শিশু বা টিনএজারদের জন্য গারফিল্ড ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও হিউমার বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
কিভাবে পালন করা যায় গারফিল্ড ডে?
একটা লাসানিয়া রান্না করুন (অথবা অর্ডার করুন)।
একটা বড়সড় ঘুম দিন – গারফিল্ড স্টাইলে।
পুরনো গারফিল্ড কমিক বা কার্টুন সিরিজ দেখে একটু হাসুন ।
আর সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ দিন: #GarfieldDay
গারফিল্ডের বিখ্যাত কিছু উক্তি:
“Diet is ‘die’ with a ‘t’.”
“Love me, feed me, never leave me.”
“I’m not overweight. I’m undertall.”
১৯ জুন মানে শুধু আরেকটি তারিখ নয় – এটি সেই দিন যেদিন অলসতা পেয়েছিল মুখ, লাসানিয়া পেয়েছিল ভক্ত, আর আমরা পেয়েছিলাম গারফিল্ডের মতো একজন অনন্যসাধারণ কমিক নায়ক।
আজকের দিনে চলুন, একটু ধীর হই, একটা পছন্দের খাবার খাই, আর হাসতে হাসতে বলি – “I hate Mondays, but I love Garfield!”