মিরপুরে রিকশাওয়ালার গায়ে চকচকে টাই। অন্যদিকে একজন ব্যাংকার পরে নিয়েছেন রঙিন লুঙ্গি। তাই দেখে হাসির রোল উঠছে চারপাশে।
ঢাকার এক দুপুরে অফিসফেরত মানুষজন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিল— আজ এভাবেই পোশাক বদল করবেন তারা। কারন আজ পোশাক বদলের দিন।
আজ ১১ অক্টোবর— National Costume Swap Day। নামটা শুনলেই মনে হয়— হলিউডের কোনো উজ্জ্বল পার্টি, যেখানে বন্ধুরা পরস্পরের পোশাক বদলে মজায় মেতে ওঠে। কিন্তু ভাবো তো, যদি এই দিনটা বাংলাদেশেও উদ্যাপন করা হয়? তাহলে কি খুব বেশি আধুনিকতায় চলে যাবো আমরা?
এই ছোট্ট ‘বিনিময়ের খেলা’র ভেতর আসলে লুকিয়ে আছে এক গভীর রসায়ন— সহজ মানবিক সংযোগ। আমরা প্রতিদিন নিজেদের পোশাকে, ভূমিকায়, মুখোশে বন্দি থাকি। কেউ অফিসে কর্পোরেট, কেউ রাস্তায় বিক্রেতা, কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কিন্তু একদিন যদি আমরা নিজেদের জায়গা বদলাই— তাহলে কী হয়?
গরিব ছেলেটির ছেঁড়া শার্ট পরে ধনী মানুষ বুঝলেন— ঘাম, রোদ আর লজ্জার ভার কতটা কঠিন। আর অভিজাত পোশাক গায়ে তুলে সেই ছেলেটি হয়তো এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল তার দৈনন্দিন ক্লান্তি।
চট্টগ্রামের পাহাড়ি মেয়েটি যদি ঢাকার কোনো তরুণীর ফিউশন পোশাক পরে দেখে নিজেকে নতুন চোখে— তাহলে সে বুঝবে, পরিচয়ের সীমা কেবল কাপড়ের নয়, মনেরও।
আর পুরনো শাড়ি, যেটা আলমারিতে বছর ধরে ঘুমিয়ে আছে, সেটা যদি এক গ্রাম্য স্কুলশিক্ষিকার গায়ে নতুন প্রাণ পায়— তবেই বুঝবে, পোশাকও কখনো কখনো দানশীল হয়।
পশ্চিমা দেশগুলোতে খুব ভালোভাবেই এই দিনটি উদযাপিত হয়। তাই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই দিবসটা শুধু ফ্যাশনের নয়, বরং সহানুভূতির উৎসবও হতে পারে।
যে দেশে উৎসব মানেই ভাগাভাগি— সেখানে ‘কস্টিউম সোয়াপ ডে’ মানে হতে পারে পোশাকের মাধ্যমে মনের দরজা খোলা।
আজ যদি স্কুলগুলোতে ‘পোশাক বিনিময় দিবস’ পালিত হয়— ছাত্রীরা একে অন্যের দেশীয় পোশাক পরে ইতিহাসের ক্লাসে দাঁড়ায়, কিংবা অফিসে সবাই সকালে নিজের পোশাকটা সহকর্মীর জন্য রেখে আসে।
কেউ হয়তো প্রথমবার শাড়ি পরে নিজের ভেতরের নারীত্ব খুঁজে পাবে, কেউ পাঞ্জাবি পরে নিজের শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হবে। দিনের শেষে, আমরা বুঝব—পোশাক বদল মানে কেবল কাপড় নয়, দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। কারণ, মানুষের গল্প অনেক সময় তার জামার রঙেই লেখা থাকে।
তাই আজ, যদি কারও পুরনো কুর্তা বা জামদানি আলমারিতে ঝুলে থাকে— একবার ভাবো, সেটি অন্য কারও মুখে হাসি এনে দিতে পারে। আর নিজের পুরনো টি-শার্ট যদি কারও পরনে নতুন আত্মবিশ্বাস হয়ে ওঠে— তাহলেই ‘National Costume Swap Day’ হয়ে উঠবে এক সুন্দর মুহূর্ত ।
একটা দিন, যেখানে পোশাক বদল মানেই মন বদলানো।