কাল্পনিক মনে হলেও সত্যি— এক সুইডিশ-বৃটিশ ব্যবসায়ী জোহান এলিয়াশ ২০০৬ সালে এমন এক কাজ করেছেন, যা সত্যি চোখ কপালে তোলে। তিনি কিনে ফেললেন আমাজনের ৪,০০,০০০ একর বন! ভাবুন তো—এটা প্রায় সমান গ্রেটার লন্ডনের। আর কি করেছিলেন তিনি? কোম্পানিটি বন্ধ করে দিলেন, যা আগে বনটি উচ্ছেদ করতে যাচ্ছিল। সহজ কথায় বলতে গেলে, ‘বন বাঁচাও, পণ্য-বিক্রি বন্ধ!’—এটাই তার মূল ফিলসফি।
এই বনের সুরক্ষা শুধুমাত্র পাখি, বানর বা গাছেদের জন্য নয়। প্রকৃতিতে থাকা এই প্রাচীন বন বিপুল পরিমাণে কার্বন শোষণ করে, যা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। অর্থাৎ, এলিয়াশের বিনিয়োগ শুধু বন বাঁচানো নয়, আমাদের পৃথিবীও বাঁচানো।
এলিয়াশ একা নয়। ধনী ব্যক্তি যারা দক্ষিণ আমেরিকায় জমি কিনে প্রাকৃতিক সংরক্ষণে হাত লাগাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ডগ টমকিনস এবং জর্জ সোরোসের মতো উদাহরণও আছে। তবে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে।
বিতর্কের মূল প্রশ্ন হলো—’গ্রীন ঔপনিবেশিকতা কি ঠিক?’ অর্থাৎ, ধনী দেশ বা ধনী ব্যক্তি কি উন্নয়নশীল দেশে বন কিনে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, নাকি স্থানীয় সম্প্রদায়ের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে? এলিয়াশের বন কিনে নেয়ার পর কিছু শ্রমিকের চাকরি ছাড়তে হয়েছে। ফলে একদিকে বন বাঁচলেও, অন্যদিকে স্থানীয় জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেউ প্রশ্ন করেন, ‘যে দেশগুলো শিল্পায়িত, সেখানে অব্যবহৃত জমি কেন পুনরায় ব্যবহার করা যায় না?’ আরেকটি প্রশ্ন হলো—প্রাইভেট মালিকানা কি সত্যিই বৈশ্বিক সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর পথ? এই ধরনের প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের প্রকৃতির সুরক্ষা শুধুমাত্র ধনীদের হাতে নয়, জনগণ ও নীতিনির্ধারকদেরও সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্ভব।
তবুও এলিয়াশ আশাবাদী। তিনি মনে করেন এটি প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে আরও ধনী পৃষ্ঠপোষকরা অনুসরণ করবেন এবং হুমকির মুখে থাকা বনসমূহ সংরক্ষণে হাত বাড়াবেন। এবং, আমরা যদি ভাবি—একটি বন বাঁচানো যায়, তাহলে শত শত, হাজার হাজার বনের কথা ভাবাই যায়।
এবার একটু মজা করি। ভাবুন, যদি বনকে একটা বিলাসবহুল হোটেল বা শপিং মল বানানো হতো, কী হতো? পাখিরা হয়তো শাকের চিপস খেত এবং বানররা ‘কফি টেবিল’ দিয়ে নিজেরা নাচ শিখত। আর আমরা মানুষ? শুধু আরাম করতে আসতাম, প্রকৃতির মধ্যে হাঁটা-চলা হবেনা। তাই এলিয়াশের সিদ্ধান্ত নিছক ব্যবসার নয়—একটু আবিষ্কারধর্মী সুপারহিরো কাজ।
শিক্ষণীয় দিক হলো—প্রকৃতির সংরক্ষণ শুধু বড় বড় সরকার বা আন্তর্জাতিক চুক্তির কাজ নয়। ব্যক্তি উদ্যোগও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণকে সাথে নিয়ে চলা এবং সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। অর্থাৎ বন বাঁচানো মানে শুধু গাছ বাঁচানো নয়, মানুষ, প্রাণী আর পরিবেশকে সমানভাবে চিন্তাভাবনা করা।
শেষে আমরা বলতে পারি, জোহান এলিয়াশের গল্প আমাদের শেখায়—’একজনের ছোট উদ্যোগও প্রকৃতিকে বড় উপায়ে বাঁচাতে পারে।’ আর এই বনের মতো উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি শুধু দেখার জন্য নয়, বাঁচানোর জন্যও।
তাই, যদি কখনো আপনার সামনের গাছগুলোকে দেখে মনে হয়, ‘এগুলোও আমার বন্ধু হতে পারে,’ হ্যাঁ, তারা সত্যিই আপনার বন্ধু। আর হয়তো আগামীর এক এলিয়াশ হয়ে আপনি পৃথিবীকে একটু সুন্দর করে দিতে পারেন।