Thursday 06 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গুহার গ্রাম ঝংডং: চীনের পাহাড়ে এক অদ্ভুত বসতি

ফারহানা নীলা
৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:০৫

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুইঝো প্রদেশের গভীর পাহাড়ে আছে এক বিস্ময়কর গ্রাম— ঝংডং (Zhongdong)। আধুনিক চীনের ব্যস্ত নগরজীবনের বাইরে, এই গ্রাম যেন সময়ের চক্র থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। কারণ এখানকার মানুষ এখনো বাস করে একটি বিশাল প্রাকৃতিক গুহার ভেতরে।

গুহার ভেতরেই জীবনের গল্প

ঝংডং গ্রামটি মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। প্রায় ১৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গুহার ভেতরে প্রায় ২০টির মতো পরিবার বসবাস করে। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বিশাল গুহাটি তাদের ঘর, বাজার, খেলার মাঠ— সবকিছুই। গুহার মুখ দিয়ে সূর্যের আলো ঢোকে, ভেতরে বাতাস প্রবাহিত হয়, কিন্তু বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বেশ সীমিত।

বিজ্ঞাপন

এখানকার মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানেই বসবাস করছে। তারা কৃষিকাজ করে, পশুপালন করে, আর কাছের পাহাড়ি পথে হেঁটে বাজারে যায়।

স্কুলও ছিল গুহার ভেতরে

ঝংডং-এর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো— একসময় গুহার ভেতরেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ১৯৮০-এর দশকে স্থানীয়রা নিজেরাই কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ছোট স্কুলঘর বানিয়েছিলেন, যাতে তাদের শিশুরা শিক্ষার আলো পেতে পারে।

কিন্তু ২০১১ সালে স্থানীয় সরকার ঘোষণা দেয়, ‘গুহায় বসবাস করা মানব সভ্যতার জন্য অনুপযুক্ত।’ এরপর সেই স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন শিশুদের প্রতিদিন দুই ঘণ্টা হেঁটে পাহাড় পেরিয়ে বাইরে স্কুলে যেতে হয়।

বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ

আগে এখানে কোনো বিদ্যুৎ বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। এখন কিছু ঘরে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে, ফলে রাতে আলো জ্বলে। কিন্তু এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, আর ইন্টারনেট প্রায় অচল। পানির জন্য মানুষকে গুহার বাইরে ঝরনা থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

গুহার আর্দ্র পরিবেশ ও ঠান্ডা বাতাসে জীবন কঠিন, কিন্তু এখানকার মানুষ এটাকে তাদের স্বাভাবিক জীবন হিসেবেই মেনে নিয়েছেন।

পর্যটনের আকর্ষণ

ঝংডং এখন ধীরে ধীরে পর্যটকদের কৌতূহলের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। গুহার ভেতর মানুষ কীভাবে বসবাস করে তা দেখতে অনেকেই আসেন। গুহার প্রবেশপথে এখন ছোট দোকান, হস্তশিল্প ও স্থানীয় খাবারের স্টলও পাওয়া যায়।

স্থানীয় প্রশাসন পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাইছে, তবে বাসিন্দারা চান— তাদের ঐতিহ্য ও জীবনধারার সরলতা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।

আধুনিকতার বাইরে এক মানবিক গল্প

ঝংডং গ্রামের গল্প আসলে মানুষের টিকে থাকার গল্প। আধুনিকতার ঝলমলে শহরের বাইরে এই গুহাগ্রাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়— মানুষ যেখানেই থাকুক, জীবন খুঁজে নেয় নিজের উপায়ে।

চীনের এই ‘গুহার গ্রাম’ তাই শুধু একটি ভৌগোলিক বিস্ময় নয়, এটি মানব সহনশীলতার এক জীবন্ত প্রতীক।

শেষ কথা

ঝংডং আজও মনে করিয়ে দেয়— সভ্যতার কেন্দ্র যতই এগোক, পৃথিবীর কোনো না কোনো কোণে এখনো মানুষ প্রকৃতির কোলে, পাথরের গুহায়, নিজের মতো করে বাঁচে। আর সেই জীবনই হয়তো সবচেয়ে বাস্তব, সবচেয়ে প্রাকৃতিক।