ভারতীয় মালায়ালাম ভাষার সারভাইভাল থ্রিলার ‘মনজুম্মেল বয়েজ’ মুক্তির পর এক গুহার নাম সবার মুখে মুখে— ডেভিলস কিচেন। সিনেমায় দেখা যায় বন্ধুত্ব, ত্যাগ আর মৃত্যুভয়কে জয় করার এক অনন্য কাহিনি। কিন্তু গুহার বাস্তব ইতিহাস তার চেয়েও রহস্যময়।
কোথায় এই গুহা?
এই গুহার প্রকৃত নাম গুনা কেভ বা গুনা গুহা, যা ভারতের তামিলনাড়ুর কোদাইকানাল অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৯১ সালে অভিনেতা কমল হাসান অভিনীত ‘গুনা’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পর থেকেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই থেকেই স্থানীয়রা একে ভালোবেসে ডাকেন— ‘ডেভিলস কিচেন’ বা ‘শয়তানের রান্নাঘর’ নামে।
নামের পেছনের গল্প
১৮২১ সালে ব্রিটিশ অফিসার বি.এস. ওয়ার্ড প্রথম এই গুহার গর্তটি আবিষ্কার করেন। তিনি নাম দেন— ‘দ্য ডেভিলস কিচেন’, কারণ তার মতে, এটি ছিল এক রহস্যময় ও ভয়াল স্থান, যেন প্রকৃতিই এখানে কিছু গোপন করে রেখেছে। তবে ১৯৮০–এর দশকের শেষ পর্যন্ত গুহাটি প্রায় অজানা ছিল।
গুহা থেকে সিনেমার তারকা
‘গুনা’ চলচ্চিত্রের পর গুহাটি হয়ে ওঠে পর্যটকদের কাছে রোমাঞ্চকর গন্তব্য। পরে আরও কিছু জনপ্রিয় সিনেমা যেমন মালায়ালম ছবি ‘শিক্কার’ (২০১০) এবং ‘মনজুম্মেল বয়েজ’ (২০২৪) এখানেই আংশিকভাবে শুট করা হয়। শেষের সিনেমাটি নির্মিত হয় একটি বাস্তব দুর্ঘটনা অবলম্বনে—যা ঘটে এই গুহাতেই।
মৃত্যুর গুহা
রোমাঞ্চের আড়ালে গুনা গুহা আসলে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক গুহাগুলোর একটি। এর কাঠামো এতটাই গভীর ও অনিয়ত যে, বহু মানুষ গুহায় প্রবেশের পর আর ফিরে আসেননি। পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ জনের নিখোঁজের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যাদের মৃতদেহও উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
১৯৯৬ সালে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভাতিজা গুহায় হারিয়ে যান, তার দেহও আর পাওয়া যায়নি। এই কারণে ২০০০ সালের শুরুর দিকে গুহাটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বেঁচে ফেরা একমাত্র মানুষ
২০০৬ সালে কেরালার মনজুম্মেল এলাকার কিছু বন্ধু গুহায় ভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের মধ্যে একজন, সুভাষ, গুহার গভীরে পড়ে যান। তার বন্ধু সিজু ডেভিড এবং স্থানীয়দের সাহসী প্রচেষ্টায় তিনি অলৌকিকভাবে উদ্ধার পান। এই ঘটনাই পরবর্তীতে ‘মনজুম্মেল বয়েজ’ চলচ্চিত্রের মূল কাহিনি হয়ে ওঠে।
বন্ধ তবু জনপ্রিয়
গুহাটি এখনো পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত নয়। যদিও ২০২৪ সালে রাস্তাটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়, তবুও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গুহার প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবু প্রতি বছর হাজারো মানুষ আসে—শুধু একবার রহস্যের সেই বাতাসটা ছুঁয়ে দেখতে।
রহস্যের অন্ত নেই
‘ডেভিলস কিচেন’ একদিকে প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি, অন্যদিকে মানুষের ভয় ও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। এটি মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করে, তার অজানা দিক তেমনি আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। হয়তো এজন্যই এই গুহা আজও বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিত।