মঞ্চের আলো, সুর, উচ্ছ্বাস আর বিশ্বজোড়া দর্শকের প্রতীক্ষা— এভাবেই শুরু হয় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা। আজ এটি বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব প্রদর্শনের প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এর পথচলা শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে, ১৯৫২ সালে। সেই প্রথম আয়োজনেই ইতিহাসের প্রথম মুকুট পরেছিলেন আর্থা ফ্রিডা। সেই মুহূর্ত থেকে এই প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা দেশে, এবং গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, গ্ল্যামার এবং প্রতিনিধিত্বের প্রতীক হিসেবে।
বর্তমানে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে Miss Universe Organization, যারা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, মিডিয়া পার্টনার এবং স্পন্সরদের সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী নির্বাচনী ও মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। শুধু বিনোদন নয়— এটি কূটনীতি, সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ এবং গ্লোবাল প্রভাব সৃষ্টির এক বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
এই মঞ্চ বহু নারীকে দিয়েছে পরিচিতি, আত্মবিশ্বাস এবং ক্যারিয়ারের নতুন দরজা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়…
পিয়া ওয়াইবার্ন, ফিলিপাইন্স—২০১৫ সালে জয়ী হওয়ার পর সমাজসেবার কাজ এবং জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ইরিস মিতেনা, ফ্রান্স—২০১৬ সালে ব্যক্তিত্ব, বক্তব্য এবং উপস্থাপনার গুণে আন্তর্জাতিক প্রশংসা পান।
ভেনিজুয়েলার অনেক প্রতিযোগী দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি, স্টাইল এবং আত্মপ্রকাশে অনন্য উদাহরণ হয়ে এসেছে।
এই প্রতিযোগিতায় কে আসলে অংশ নিতে পারে?
অংশগ্রহণের জন্য সাধারণত বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে হতে হয় এবং যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা হবে, সেই দেশের নাগরিক হতে হয়। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা জরুরি। সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন শারীরিক অবস্থা, আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি, যোগাযোগ দক্ষতা, পাবলিক স্পিকিং, নেতৃত্বের গুণ, সামাজিক সচেতনতা—এসবই বিবেচনায় ধরা হয়। এছাড়াও প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা চলবে না।
বিজয়ীদের সুবিধা
বিজয়ী পান প্রতীকী মুকুট ও ট্রফি, পাশাপাশি থাকে অর্থনৈতিক পুরস্কার, ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরশিপ, মডেলিং, টিভি ও মিডিয়া ক্যারিয়ারের সুযোগ। শুধু তাই নয়— মিস ইউনিভার্স হিসেবে তিনি অংশ নেন বিশ্বব্যাপী চ্যারিটি, নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সচেতনতা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পেইনে। ফলে তিনি শুধু গ্ল্যামারের মুখপাত্র নন— বরং পরিবর্তনের কণ্ঠস্বর, অনুপ্রেরণার প্রতীক।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়— মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা কেবল সৌন্দর্য খোঁজে না। এখানে মূল্যায়ন হয় মানসিক শক্তি, ব্যক্তিত্ব, মানবিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা। তাই এই মঞ্চে যে নারী দাঁড়ান, তিনি শুধু একটি মুকুট জেতেন না— তিনি অর্জন করেন সম্মান, প্রভাব এবং নিজেকে আরও বড় পরিসরে প্রকাশ করার সুযোগ।