ভাবুন তো… একসময় সামান্য জ্বর, ক্লান্তি আর দুর্বলতার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাণঘাতী এক ভাইরাস। সমাজের চোখে অদৃশ্য, কিন্তু ভেতর থেকে ধীরে ধীরে মানুষের প্রতিরোধশক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই ভয়, সেই অজানা, সেই লড়াইয়ের নাম—এইডস।
প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর বিশ্ববাসী পালন করে বিশ্ব এইডস দিবস। শুধু একটি দিন নয়—এটি প্রতিশ্রুতির দিন। জ্ঞান, সচেতনতা, সহমর্মিতা ও বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার শপথের দিন।
এইডস কী?
এইডসের পূর্ণরূপ অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম। এটি তৈরি হয় এইচআইভি নামের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে। এই ভাইরাস ধীরে ধীরে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভেঙে দেয়। ফলে সাধারণ রোগও জীবন নিয়ে নিতে পারে।
এইচআইভি ছড়ায়— অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্কে, দূষিত সুই ও সিরিঞ্জ ব্যবহারে, পরীক্ষা ছাড়া রক্ত সঞ্চালনে, আক্রান্ত মায়ের দেহ থেকে শিশুর শরীরে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— একসাথে খাওয়া, হাত ধরা, আলিঙ্গন, কাশি–হাঁচি বা সাধারণ স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না।
লক্ষণ কী কী?
প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে দেখা দিতে পারে— ঘন ঘন জ্বর, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, গলা বা শরীরের লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, সামান্য অসুখেও জটিলতা— তাই ঝুঁকিতে থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
চিকিৎসা কি আছে?
স্থায়ী চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আশা রয়েছে— অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি)। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে— ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকে। রোগীর আয়ু বাড়ে,স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব হয়, সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। অনেক দেশে পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে পাওয়া যায়।
মানুষ কতটা সচেতন এখন?
আগের তুলনায় সচেতনতা বেড়েছে। গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা সুবিধা মানুষকে অনেক বেশি তথ্য দিচ্ছে। তবুও সমাজে এখনো ভয়, লজ্জা, গুজব ও বৈষম্য রয়ে গেছে— যা আক্রান্তদের সবচেয়ে বড় মানসিক বাধা।
কেন এই দিবস পালন করা হয়?
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে, ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার ভাঙতে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্মান ও সহমর্মিতা নিশ্চিত করতে, স্বাস্থ্যসেবা ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব দিতে এবং এইডসে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে।
শেষকথা
এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের নয়— এটি মানবতার। নিরাপদ আচরণ, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত, নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসার প্রবেশাধিকার এবং সবচেয়ে বড়— আক্রান্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতি— এসবই পারে পৃথিবীকে এই ভাইরাসের ভয় থেকে মুক্ত করতে।
বিশ্ব এইডস দিবস তাই মনে করিয়ে দেয়— যে রোগ নয়, ভীতি ও বৈষম্যই সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই, হাত বাড়িয়ে দিই, পাশে দাঁড়াই— কারণ সচেতনতা ও ভালোবাসাই পারে জীবন বাঁচাতে।