অ্যান্টার্কটিকা— পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা, নির্জন আর বিস্ময়ভরা মহাদেশ। সেখানে বরফের বুক চিরে যখন হঠাৎ লাল রঙের জলপ্রপাত বয়ে নামে, তখন বিজ্ঞানীরাও প্রথমে চোখ কচলাতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই লাল জলপ্রপাতকে বলা হয়— Blood Falls। নাম শুনলেই রোমহর্ষক লাগে, কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞান আর ইতিহাস— রীতিমতো চলচ্চিত্রের গল্পকেও হার মানায়!
বরফের নিচে দুই মিলিয়ন বছরের গোপন লেক
টেলর গ্লেসিয়ারের গভীরে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ বছর ধরে আটকে থাকা লোনা পানি। এই পানি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ‘টাইম ক্যাপসুল’, যেখানে পরিবেশ যেমন ছিল, তেমনই রয়ে গেছে— না আলো, না তাপ, না অক্সিজেন!
পানি কেন লাল? রহস্যের বৈজ্ঞানিক উত্তর
এ পানিতে রয়েছে অত্যধিক লোহা (Iron)। গ্লেসিয়ারের বরফ ফেটে যখন এই পানি বাইরে বের হয়, তখন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে লোহার উপর oxidation শুরু হয়— যেভাবে লোহার ওপর মরচে পড়ে লাল হয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই।তাই দেখতে রক্তের ধারা মনে হয়— কিন্তু আসলে এটা প্রকৃতির তৈরি ‘জংধরা জলপ্রপাত’!
অন্ধকারে বেঁচে থাকা অদ্ভুত প্রাণ
সবচেয়ে আশ্চর্যের অংশটি এখানে— এই লাল পানিতে রয়েছে এমন মাইক্রোব, যারা-
আলো ছাড়া বাঁচে,
অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে,
শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় টিকে থাকে,
লোহা ও সালফার খেয়েও জীবন কাটিয়ে দেয় – এরা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ‘হার্ডকোর সারভাইভার’। বিজ্ঞানীরা একে বলেন extremophiles।
অন্যান্য গ্রহে জীবনের ইঙ্গিত?
Blood Falls প্রমাণ করে— জীবন বাঁচতে আলো, অক্সিজেন বা আরামদায়ক আবহাওয়া লাগে না। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা বলেন:
মঙ্গল (Mars),
ইউরোপা (Jupiter’s moon),
এনসেলাডাস (Saturn’s moon) – এসব বরফমণ্ডিত গ্রহ-উপগ্রহের নিচেও প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। অর্থাৎ, আমরা হয়তো মহাবিশ্বে একা নই!
রহস্যের শেষ নেই
Blood Falls যতবার দেখা যায়, ততবারই মনে হয়— পৃথিবী আসলে এক বিশাল চমকের বাক্স। বরফের নিচে আটকে থাকা লাল পানি, সেখানকার প্রাচীন প্রাণ, আর কোটি বছরের ইতিহাস— সবই বলে, প্রকৃতি আমাদের চেয়েও অনেক বেশি সৃজনী আর নাটুকে!