Tuesday 09 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্রিসমাস কার্ড ডে: কাগজে ছুঁয়ে থাকা অনুভূতির এক উৎসব

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৯

ডিজিটাল যুগ আজ আমাদের যোগাযোগকে দ্রুত, ঝলমলে আর ইমোজির ওপর নির্ভর করে ফেলেছে। তবুও প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর এলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানুষ একটু নষ্টালজিয়া হয়ে পড়ে— কারণ এটি Christmas Card Day। যেন কাগজে মোড়ানো অনুভূতিগুলোর জন্য আলাদা করে বরাদ্দ একটি দিন।

কার্ডের ইতিহাস

১৮৪৩ সালে ইংল্যান্ডের এক শিক্ষাবিদ স্যার হেনরি কোল প্রথম বাণিজ্যিক ক্রিসমাস কার্ড পাঠান। তখন ডাকবিভাগের চিঠি পৌঁছানোর ব্যস্ততা দেখে তিনি বুঝেছিলেন— মানুষের অনুভূতির কোনো শর্টকাট নেই। সেই উপলব্ধি থেকেই আঁকা হল প্রথম ক্রিসমাস কার্ড— এক পরিবার একসাথে টেবিলে বসে উৎসব পালন করছে। ছবিটি ছাপা হল, বিক্রি হল, আর মানুষ অবাক হয়ে দেখল— এক পাতার কাগজও কখনো কখনো উৎসবের উষ্ণতা ফিরিয়ে দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কার্ড কেন আজও বিশেষ?

আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা পাঠানো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। কিন্তু ক্রিসমাস কার্ড? এটা সময় নেয়, মনোযোগ চায়, এবং এক ধরনের ব্যক্তিগত স্পর্শ তৈরি করে।

কাগজের গায়ে হাতের লেখা— একটি অনন্যতা,
খামের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অপেক্ষা,
ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টায় নস্ট্যালজিয়া,
আর খোলার মুহূর্তে ছোট্ট উত্তেজনা,
একটি কার্ডই স্মৃতির বাক্সে দশ-বারো বছর ধরে পড়ে থাকতে পারে— একটা মেসেজ থাকে না।

কার্ডে বদলে যাওয়া পৃথিবী

একসময় ক্রিসমাস কার্ড মানেই ছিল লাল-সবুজ রঙের ঝিলিক, স্নোম্যান, সান্তা ক্লজ, বনফুল-ঘেরা দৃশ্য। পরে যোগ হল শিশুদের হাতের আঁকা, পরিবারের ছবি, মজার কার্টুন, এমনকি পরিবেশবান্ধব কাগজে ছাপা সৃজনশীল বার্তা।

এখনকার কার্ডে শুধু শুভেচ্ছা নয়—

হিউমার আছে,
মিনিমালিজম আছে,
রিলেশনশিপ-ভিত্তিক ব্যক্তিগত বার্তা আছে,
আর আছে পরিবেশবান্ধব কাগজ ব্যবহার করে ‘Green Christmas’ করার লক্ষ্য।

কেউ কার্ড পাঠায়? কেন পাঠায়?

আজ যারা কার্ড পাঠান তাদের দু’ধরনের অনুভূতি মিলেমিশে থাকে—
নস্ট্যালজিয়া: শিশুকালের সেই ডাকবাক্স, রঙিন খাম, গ্লিটার কাগজ।
Care & Effort: ‘আমি তোমার জন্য সময় নিয়েছি’— এটাই কার্ডের আসল বার্তা।

প্রবাসীরা, দূরের বন্ধু, শিক্ষক, পুরনো সহকর্মী— কার্ডে তাদের জন্য আলাদা করে জায়গা থাকে। কিছু পরিবার এখনও প্রজন্ম ধরে কার্ড পাঠানোকে ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় কেন বেঁচে আছে এই দিবস?

কারণ মানুষের অনুভূতি কখনো একেবারে ডিজিটাল হয়ে যায় না। স্ক্রিনের আলো উষ্ণতা দেয় না— কিন্তু কার্ডের কাগজ দেয়। এলগরিদম স্মৃতি তৈরি করে না— কিন্তু কার্ডের হাতের লেখা করে। তাই এখন অনেকেই ডিসেম্বর মাসে কার্ড-ডায়েরি বানানোর কাজ করেন— কিছু কার্ড কেনেন, কিছু আঁকেন, কেউ আবার শিশুদের অংশগ্রহণ করান। স্কুলগুলোতে এখনও ‘Handmade Card Contest’ জনপ্রিয়। কার্ড ব্যবসায়ীরা ডিসেম্বরকে এখনও তাদের সবচেয়ে ব্যস্ত মাস হিসেবেই দেখে।

৯ ডিসেম্বর— কার্ড পাঠানোর দিন, অনুভূতি পৌঁছানোর দিন

এই দিনে মানুষ পুরনো অ্যালবাম খুলে কার্ডগুলো দেখেন, হারানো সময় আর মানুষের কথা ভাবেন, নতুন কার্ড লেখেন। কোথাও কোথাও ক্রিসমাস ফেয়ারে কার্ড এক্সচেঞ্জও হয়। একটি লিখিত শুভেচ্ছা কখনো কখনো সম্পর্ককে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। একটি কার্ড হতে পারে ক্ষমা চাওয়া, ধন্যবাদ জানানো কিংবা ‘তুমি মনে আছো’— এই তিন শব্দের নরম বার্তা।

কার্ড শুধু উৎসব নয়, একধরনের মানবিকতা

ক্রিসমাস কার্ড ডে আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সৌজন্য, ভালোবাসা আর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অনুভূতিগুলো আসলে খুব ছোট জিনিসে বেঁচে থাকে। একটি কাগজের কার্ড, কয়েক লাইনের হাতের লেখা, আর মন থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা— এটাই।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি
বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর