ডিসেম্বরের ১১ তারিখ মানেই এক অদ্ভুত আনন্দের দিন— যেখানে আপনার আলমারির সবচেয়ে ঝলমলে, বিদঘুটে এবং অদ্ভুত দেখতে সোয়েটারটিকে পরার জন্য সবাই আপনাকে বাহবা দেবে! বলছি ক্রিসমাস জাম্পার ডে-এর কথা। যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো দিবস নয়, তবু প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দিনে স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে উলের তৈরি হাসিখুশি (কিংবা ‘ভীষণ বাজে’!) পোশাকে মুড়ে ফেলে।
কেন এই উল্লাসের দিন?
ক্রিসমাস জাম্পার ডে কিন্তু শুধুই ফ্যাশন বা মজার জন্য নয়, এর পেছনে রয়েছে একটি মহৎ কারণ। এটি সাধারণত একটি চ্যারিটি ইভেন্ট হিসেবে পালিত হয়, যেখানে মজার জাম্পার পরার বিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দাতব্য সংস্থায় দান করেন। আপনার পরিহিত সেই উলের পাহাড়, ক্রিসমাস ট্রি বা রেইনডিয়ারের নকশা করা সোয়েটারটি হয়তো কারও মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।
শুরুটা কিভাবে?
‘ক্রিসমাস জাম্পার’ বা ‘আগলিস সোয়েটার’ সংস্কৃতি প্রথম জনপ্রিয়তা পায় ১৯৮০-এর দশকে এবং ২১ শতকের শুরু থেকে এটি যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে চ্যারিটি ইভেন্টের রূপ নেয়। শুরু হওয়া এই দিনটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেছে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। প্রতি বছর এই দিনে মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হয় সবচেয়ে অদ্ভুত, সবচেয়ে রঙিন, অথবা সবচেয়ে অস্বস্তিকর ক্রিসমাস জাম্পার পরে কাজে, ক্লাসে বা রাস্তায় বের হতে। উদ্দেশ্য—হাসি ভাগ করে নেওয়া, আর সেই সঙ্গে বঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহ। টাইমার লাগানো আলো জ্বলে–নিভে ওঠা স্নোম্যান, বুকে লাগানো কাঁপতে থাকা রুডলফ, এমনকি শব্দ করা ‘জিঙ্গল বেল’—সবই চলে। যত অদ্ভুত, তত প্রশংসা!
কিভাবে পালন করবেন?
আজকের দিনে, আপনি আপনার আলমারির সবচেয়ে ঝলমলে, বিদঘুটে, উজ্জ্বল আর অদ্ভুত নকশার সোয়েটারটি পরার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। এমনকি আপনার সহকর্মী বা বন্ধু যদি বিশাল আকৃতির একটি রেইনডিয়ার বা আলো ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি আঁকা সোয়েটার পরে আসে, তাকে বাহবা দেওয়াটাই আজকের দিনের একমাত্র নিয়ম!
বাজে পোশাকের মহৎ উদ্দেশ্য কি?
ক্রিসমাস জাম্পার ডে’-এর মূল আকর্ষণ হলো এটির বিপরীতমুখী মনোভাব। আমরা সাধারণত সাজ-পোশাকের ক্ষেত্রে রুচি, মার্জিত রং এবং নিখুঁত ফ্যাশনের কথা ভাবি। কিন্তু এই দিনে, নিয়ম হলো ফ্যাশনের সব নিয়ম ভেঙে ফেলা। যত বেশি উগ্র, যত বেশি চোখে পড়ার মতো, ততই ভালো! কিন্তু এই উল্লাস শুধুই হাসি-ঠাট্টার জন্য নয়, এর পেছনে রয়েছে একটি মহৎ মানবিক উদ্দেশ্য।
বেশিরভাগ দেশেই এই দিনটিকে একটি চ্যারিটি ইভেন্ট হিসেবে পালন করা হয়। মজার জাম্পার পরার বিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দাতব্য সংস্থায় দান করেন। আপনার পরিহিত সেই উলের পাহাড়, সান্তার হাসি বা ফ্যাটফ্যাট আলো জ্বলা সোয়েটারটি হয়তো বিশ্বের কোনো সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।
উষ্ণতা, হাসি আর একটুখানি প্রকৃতি
ক্রিসমাস জাম্পার ডে আমাদের শেখায় যে, আনন্দ উদযাপনের জন্য সর্বদা নিখুঁত বা গম্ভীর হওয়ার প্রয়োজন নেই। কখনও কখনও সবচেয়ে অদ্ভুত বা ‘ভীষণ বাজে’ জিনিসটিও সবচেয়ে বেশি আনন্দ এনে দিতে পারে। আপনার সোয়েটারের প্রতিটি উল বা সুতোয় মিশে থাকে ডিসেম্বর মাসের উৎসবের মেজাজ, উষ্ণতা এবং সম্মিলিতভাবে ভালো কাজ করার আকাঙ্ক্ষা।
ক্রিসমাস জাম্পার ডে তাই শুধু এক টুকরো পোশাকের উৎসব নয়; এটি উৎসবের রঙে মানবিকতার ছোঁয়া। বছরের শেষ প্রহরে একটু হাসুন, একটু সাজুন, আর কারও জীবনে একটু আলো জ্বালিয়ে দিন।