জলহস্তী মানেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে নদীর পানিতে আধা-ডোবা বিশাল এক দেহ, ধীরস্থির ভঙ্গি আর অলস একটা ভাব। দূর থেকে দেখলে মনে হয়— এই প্রাণী বুঝি কোনো তাড়াহুড়োর মানুষই না! কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, এই শান্ত চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে একেবারে অন্যরকম গল্প।
যুক্তরাজ্যের রয়েল ভেটেনারি কলেজের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে অবাক করা তথ্য— জলহস্তী যখন তীব্র বেগে দৌড়ায়, তখন অল্প সময়ের জন্য তার চারটি পা-ই মাটি থেকে উপরে উঠে যায়। মানে, ক্ষণিকের জন্য হলেও সে বাতাসে ভাসে!
৩২ জলহস্তী, ১৬৯ ভিডিও আর এক বড় চমক
গবেষকরা মোট ৩২টি জলহস্তীর ১৬৯টি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন। স্লো-মোশনে দেখা গেছে, প্রতিটি অগ্রসরমান দৌড় বা লাফের প্রায় ১৫ শতাংশ সময় জলহস্তীর পা মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক জন হাচিনসন সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘জলহস্তী কীভাবে স্থলে চলাচল করে—এ ব্যাপারে খুব কম তথ্যই জানা যায়। ধাঁধার নিখোঁজ অংশের বড় অংশ হলো জলহস্তী।’
তার ভাষায়, জলহস্তী নিয়ে গবেষণা করা সহজ নয়। কারণ— তারা পানিতেই বেশি সময় কাটায়, ভীষণ আক্রমণাত্মক ও বিপজ্জনক, আর সবচেয়ে মজার (গবেষকদের জন্য ভয়ংকর!) ব্যাপার— রাতে বেশি সক্রিয়। বিপদে পড়লে ‘রকেট মোড’।
ভিডিও বিশ্লেষণে গবেষকরা আরও দেখেছেন, যখন অন্য কোনো জলহস্তী আক্রমণ করতে আসে অথবা হায়না ও সিংহের মতো শিকারি কাছাকাছি ঘোরে, তখন এই ‘শান্ত’ প্রাণীটি আচমকাই দ্রুতগতির দৌড়ে নেমে পড়ে। আর সেই দৌড়ের মধ্যেই ঘটে যায় এই ক্ষণিকের ‘মিনি-ফ্লাইট’।
হাঁটার স্টাইলেও আলাদা
জলহস্তীর দৌড় বা হাঁটা শুধু গতির জন্যই নয়, স্টাইলের জন্যও আলাদা। গবেষকরা দেখেছেন— জলহস্তী কোণাকুণি ভঙ্গিতে পা চালায়, সামনের ডান পা ও পেছনের বাম পা একসঙ্গে, অন্যদিকে সামনের বাম ও পেছনের ডান পা একসঙ্গে।
চার পা প্রাণীদের মধ্যে জলহস্তী অন্যতম, যারা দুলে দুলে হাঁটে, দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে—সে বুঝি নাচতে নাচতেই এগোচ্ছে!
এত ভারী, তবু বাতাসে!
দেড় থেকে দুই টন ওজনের এমন বিশাল প্রাণী যে দৌড়াতে গিয়ে চার পা একসঙ্গে মাটি ছাড়তে পারে— এটা ভাবতেই একটু হাসি পায়। কিন্তু এখানেই বিপদ। কারণ, জলহস্তী ঘণ্টায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে দৌড়াতে পারে।
তাই বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন— জলহস্তী দেখতে যতটা নিরীহ, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর।
প্রকৃতির আরেক চমক
সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, এই গবেষণা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়— প্রকৃতি কখনোই পুরোপুরি অনুমানযোগ্য নয়। যাকে আমরা ভাবি শুধু পানির রাজা, সে প্রয়োজনে দৌড়াতে গিয়ে মাটিও ছুঁতে চায় না!
তাই পরের বার জলহস্তী দেখলে মনে রাখবেন— সে শুধু নদীর সম্রাট নয়, ক্ষণিকের জন্য হলেও একেবারে ‘আকাশ-ছোঁয়া’ দৌড়বিদ!
তথ্য সংগ্রহ: দি গার্ডিয়ান, সিএনএন