Monday 29 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গোলাপি পাথরের ‘পেত্রা’ — সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক নগরী!

সানজিদা যুথী সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩২

এক সময়… মরুভূমির বুক চিরে দাঁড়িয়ে ছিল এক অলৌকিক শহর। পাথরের ভেতর খোদাই করা প্রাসাদ, মন্দির আর সমাধি। সূর্যের আলো পড়লেই যার দেয়াল বদলে যেত রঙ— কখনো গোলাপি, কখনো রক্তিম লাল, কখনো সোনালি।

এটাই পেত্রা— জর্ডানের হারানো নগরী, যাকে বলা হয় ‘গোলাপি পাথরের শহর’। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— এত সমৃদ্ধ, এত শক্তিশালী নগরী কীভাবে হারিয়ে গেল?

আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে, নাবাতিয়ান নামে এক আরব জাতিগোষ্ঠী এই পাহাড় কেটে গড়ে তোলে এক অসম্ভব শহর। চারপাশ মরুভূমি, কিন্তু পেত্রায় ছিল পানির অভাব নেই। কারণ তারা জানত— পানিই শক্তি। নাবাতিয়ানরা পাহাড় কেটে বানিয়েছিল চ্যানেল, ড্যাম, রিজার্ভয়ার। বৃষ্টির এক ফোঁটাও নষ্ট হতো না। এই পানির শক্তিতেই পেত্রা হয়ে উঠেছিল।

বিজ্ঞাপন

আরব, মিসর ও রোমের মাঝখানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য নগরী। সোনা, মসলা, সুগন্ধি, রেশম— সব পথ এসে মিলত পেত্রায়।

গোলাপি পাথরের রহস্য

পেত্রা তৈরি হয়েছিল গোলাপি-লাল বালুকাবাতি পাথর কেটে। এই পাথরের ভেতরে থাকা লোহা ও খনিজ সূর্যের আলোয় বদলে দেয় রঙ। ভোরে শহরটি গোলাপি, দুপুরে আগুনের মতো লাল, আর সন্ধ্যায়— মনে হয় যেন শহরটি রক্তে রাঙা।
এ কারণেই কবিরা পেত্রাকে বলেছে—

যেভাবে শুরু হয়েছিলো পেত্রার ধ্বংস

ইতিহাস কখনো দয়া করে না। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে রোমান সাম্রাজ্য পেত্রা দখল করে। বাণিজ্য পথ বদলে যায়, সমুদ্রপথ হয়ে ওঠে সহজ। পেত্রা ধীরে ধীরে হারাতে থাকে গুরুত্ব। তারপর আসে সেই ভয়ংকর দিন।

৩৬৩ খ্রিস্টাব্দ: মৃত্যু ঘণ্টা

এক ভয়াবহ ভূমিকম্প পেত্রাকে কাঁপিয়ে দেয় ভিতর থেকে। চ্যানেল ভেঙে পড়ে, পানির ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। যে পানি ছিল শক্তি, সেটাই হয়ে ওঠে দুর্বলতা। মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করে।

এরপর শত শত বছর— ভূমিকম্প, বন্যা, বালুর ঝড়। আর একসময় পেত্রা হারিয়ে যায়। মানুষ ভুলে যায় তার অস্তিত্ব। শহরটি ঢেকে যায় বালু আর নীরবতায়।

যেভাবে হারানো শহরের পুনর্জন্ম হলো…

১৯১২ সাল। এক সুইস অভিযাত্রী ছদ্মবেশে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে পুনরাবিষ্কার করেন পেত্রা। পাথরের দেয়াল আবার আলো দেখে, নীরবতা ভাঙে। বিশ্ব জানতে পারে— সময় কোনো শহরকে মারে না, শুধু লুকিয়ে রাখে।

আজ পেত্রা আর জীবন্ত নগরী নয়, কিন্তু তার পাথর এখনো কথা বলে। ক্ষমতার, প্রযুক্তির, অহংকারের গল্প বলে। মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা পেত্রা যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—

মানুষ কি সভ্যতা গড়ে, নাকি সময়ই ঠিক করে— কোন সভ্যতা টিকে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সানজিদা যুথী - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর