ঢাকায় কিডনি বেচে ভালেন্টাইন ও ৬৮ ডিগ্রি ডিমের গল্প!
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:০১
আড়চোখে ডেস্ক
গুগল করলে আপনি হয়তো ৬৮ডিগ্রি ডিমের মাজেজাটি বুঝতে পারবেন। এর মানে হচ্ছে ডিম সিদ্ধ হবে ঠিকই, সাদা অংশটি জমেও যাবে কিন্তু কুসুম তখনও গলে গলে পড়বে।
তো… যাবেন নাকি কুসুম গলা ভ্যালেণ্টাইন কাটাতে। টাকা মোটে ৯ লাখ।
পুরো অফারে, আয়োজকদের জন্য সম্ভবত এটিই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর আপনার প্রতারিত হওয়ার সুযোগটাও বেশি থাকবে। কারণ- ডিম যদি ৬৭ ডিগ্রি কিংবা ৬৪ ডিগ্রি হয়, আপনি ধরতে পারবেন না।
খাবারের তালিকায় ডিম ছাড়া বাকিগুলো বিদেশি গালভরা নাম। যেমন ধরুন- ওইস্টার করনেট, স্ক্যালপস অ্যান্ড ট্রাফেল, ভায়োলেট ফ্লাওয়ার গ্র্যানাইট, ইনফাসড ব্ল্যাক কড এইসব।
ওরা আপনাকে আরও কিছু দেবে। যেমন- পাঁচ তারকাসম হোটেলে একরাত ঘুমুতে দেবে প্রিয়তম কিংবা প্রিয়াকে নিয়ে। গোটা ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে একটা চক্কর খাওয়াবে। পাখির চোখে ঢাকা দেখবেন। মার্সিডিজ লিমোজিন আপনাকে ঘর থেকে তুলে নেবে, আবার ঘরেই নামিয়ে দিয়ে যাবে।
দুজনের জন্য একটা ডিনার থাকবে। সেটা নাকি হবে মাইন্ডব্লোয়িং! সাবধান কিন্তু থাকতেই হবে। নইলে গলা কুসুম গড়িয়ে পড়লে সর্বনাশ! তিলোত্তমা ঢাকাকে দেখার সাধ আপনার হেলিকপ্টারে ঘুরে পুরো হবে না এটা ওরা খুব জানে। সে কারণে, এই ডিনার হবে ভবনের টপ লেভেলে। চারিদিকে তাকালেই খোলামেলা ঢাকা। টুংটাং বাজনা নয়, রীতিমতো গানের আসরও বসবে সেখানে।
ভালোবাসার কোনও বয়স থাকে না। তা আপনি হন কতদিনের বিবাহিত কিংবা নন, হানিমুন আপনার সে রাতেই। কারণ রাতের ঘুমের ব্যবস্থা হানিমুন স্যুটে। এর বাইরে যুগল স্পা হবে। আর আরদালি, চাপরাশি নয়, স্যুটেড-বুটেড বাটলার আশেপাশে ঘুর ঘুর করতেই থাকবে।
এমন একটা দিন আর রাত কাটানোর পর আপনার যাতে সারাটা জীবন তা মনে থাকে সে নিশ্চয়তাও আয়োজকরা দিচ্ছেন। না দিলেও হয়তো থাকতো। ৯ লাখ টাকা, কার না মনে থাকে। যাই হোক অফারটা দিয়েছে আমারি ঢাকা।
বুঝাই যাচ্ছে ম্যালা হিসাব-নিকাশ করে আপনি যাতে মোটেই না ঠকেন সে জন্য এই ৯ লাখ ধার্য্য করা হয়েছে। তা না হলে কেনো ১০ লাখ বা ৮ লাখ নয়!
তবে আরও একটা হিসাব রয়েছে। আমারি বলছে- আপনি কিন্তু রাত কাটাবেন ক্লাউড-নাইনে। ওটাই ওদের হানিমুন স্যুইটের নাম। হতে পারে নাইনের সাথে মিল রেখেই ৯ লাখ ধরা হয়েছে।
ভালোবাসা দিবসের এই অফারের মূল্য কিন্তু আপনার হাতের নাগালে। কারণ কিডনি দুটো হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়!
শুনে অবাক হচ্ছেন! হওয়ারই কথা। কিন্তু স্যোশাল মিডিয়ায় দেখছি সে কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
হ্যাশট্যাগ লাগিয়ে সামাজিক মিডিয়ায় এই অফারের বিজ্ঞাপন ছেড়েছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি। আর যায় কোথায়! ৯ লাখের এই অফার লুফে নেওয়ার খদ্দের পাওয়া হয়তো আমারির জন্য কষ্টের হবে না এই শহরে। কিন্তু স্যোশাল মিডিয়ায় আসা একটি কমেন্ট ভাবিয়ে তুলেছে অনেককে।
নাহিদ এফ ওয়াহিদ নামে একজন লিখেছেন- আমার কোনও ক্যাশ কিংবা কার্ড নাই… তোমরা কি কিডনি কিংবা শরীরের আর কোনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিবা? সে কমেন্টের রিপ্লাই বক্সে কমেন্ট মিলেছে ৭০টি। একজন লিখেছেন, একটি কিংবা দুটো কিডনিতে চলবে না… সে ক্ষেত্রে দুজনের চারটি কিডনি দিলে হতে পারে।
ইমরান সুমন নামে একজন লিখেছেন ‘৯ লাখ টাকা… আমি কি বাংলাদেশে আছি?’
তবে ইমরানের এই কথাটিও যে সঠিক নয় সে কথা অন্য কমেন্টে লিখেছেন অন্যজন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বিদেশেও কিন্তু এত খরচ নয়।
তানভীর মাসুদ নামে একজন একটি ছোটখাটো হিসাব দেখিয়েছেন। তাতে এই অফারগুলো যদি দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে তাতে মোট খরচ ৫ লাখ ৭২ হাজার পড়বে।
তাতে থাকবে হট রেড এয়ার বেলুন চেপে মেলবোর্ন দর্শন, ভু দ্য মদেঁয় ডিনার, গ্র্যান্ড হায়াতের লাক্সারি হানিমুন স্যুটে রাত কাটানো। ঢাকা-মেলবোর্ন রিটার্ন টিকেটের দামটি ধরতেও ভোলেননি তিনি।
আরেকজনতো টরন্টোর রিটার্ন টিকেটসহ দাম ধরে দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সকলের মুখেই একই কথা এটা আমারির বাড়াবাড়ি। তারা বলছেন, বাঙালির সাথে স্রেফ মসকরা।
হেলিকপ্টার রাইড নিয়েও এসেছে তুলনামূলক আলোচনা। ওয়েরেবি জুতে আফ্রিকান সাফারির উপর দিয়ে হেলিকপ্টারে রাইডের দাম মোটে ৭০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৪২ হাজার টাকা মাত্র।
সাদ বিন এমরান লিখেছেন- একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম- ওরা একটা কিডনি, একটা চোখ, একটা অ**ষ নিতে চায়। ভেবেছি বেঁচে দেবো। এমন দারুণ অফারতো মিস করা যায় না। সমস্যা কি? হাত-পা গুলোতে থাকলো!
সারাবাংলা/এমএম