মার্কিন গোয়েন্দাগিরিতে কাক-কবুতর-কুকুর-ডলফিন ও বিড়ালের ব্যবহার
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:১৮
মানবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কবুতরের ব্যবহার বেশ প্রাচীন। বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী হওয়ায় ডলফিনের সঙ্গেও মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কুকুরের সাহায্য নিতে ডগ স্কোয়াড নামে তো একটি বাহিনীই রয়েছে। এসব প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন সময়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছে। নতুন নথিতে জানা গেছে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নজরদারি করতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ব্যবহার করেছে কাক, কবুতর, কুকুর, ডলফিন, এমনকি বিড়ালও।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিবিসির সংবাদে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়টাতে নজরদারি ও তথ্যসংগ্রহের জন্য অভিনব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সিআইএ। এসবের মধ্যে রয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কবুতরকে শত্রু সীমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া। যাতে করে যাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবস্থানের ছবি সংগ্রহ করা যায়।
এছাড়া কাককে ব্যবহার করা হতো যাতে, ছোট ছোট অডিও বা ভিডিও ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভবনে পাখিটি ফেলে আসে। তেমনি ডলফিনকে ব্যবহার করা হতো পানির নিচে গোয়েন্দা মিশনে সহায়তার জন্য।
সিআইএর হেডকোয়ার্টার ভার্জিনিয়ায়। সেখানে রয়েছে এসব বিষয়ের তথ্য-উপাত্তসহ একটি জাদুঘরও। সাধারণ মানুষের জন্য এই জাদুঘরে প্রবেশাধিকার মেলে না। তবে বিবিসির সিকিউরিটি করেসপন্ডেন্ট গর্ডন করেরা জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছিলেন।
তিনি জানান, গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস তিনি জাদুঘরে দেখেছেন।
১৯৭০-এর দশকে কবুতরকে ব্যবহার করে সিআইএ মিশন চালায়। যেটির শরীরে রাখা ছিল খুব ছোট ক্যামেরা। সিআইএ কবুতর ব্যবহারের উপযোগিতা বলতে গিয়ে ব্যাখ্যা করেছে , দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে কবুতর অসাধারণ স্মরণক্ষমতার অধিকারী। ওদের একেবারে অচেনা কোনো পরিবেশে রেখে এলেও তারা বাড়ি ফিরতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা শত্রুপক্ষ জার্মানদের গতিবিধি বুঝতে অনেক কবুতর পাঠিয়েছিল। এরমধ্যে ১ হাজারের বেশি কবুতর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ফিরে আসে। সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে কবুতরের মাধ্যমে গোয়েন্দাগিরি করতে সিআইএ অনুপ্রেরণা নিয়েছিল।
শুধু কবুতর নয় সিআইএ অন্যান্য যেসব প্রাণী নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কাকও। প্রশিক্ষিত একটি কাককে ৪০ গ্রাম ওজনের ডিভাইস সহকারে পাঠানো হয় এমন একটি ভবনে, যেখানে সংস্থাটির প্রবেশের সুযোগ ছিল না। তবে তথ্য প্রয়োজন ছিল। এসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো লেজার আলো ছুড়ে গন্তব্য নির্দেশ করার প্রয়োজন পড়ত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কেমিকেল ওয়েপন কর্মসূচির তথ্য জানতে অতিথি পাখিদের ব্যবহার করা যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হয় বলে সিআইএর অবমুক্ত করা নথিতে জানা যায়। এছাড়া ইলেকট্রিক ব্রেন সিমুল্যেশনের মাধ্যমে কুকুরকেও দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
অ্যাকুস্টি কিটি নামে এক অপারশেন বিড়ালের ভেতরে প্রতিস্থাপন করা হয় শ্রবণযন্ত্র। এছাড়া ৬০’র দশকে সমুদ্রে রাশিয়ার সমুদ্রযান সম্পর্কে তথ্য পেতে ব্যবহার করা হতো ডলফিন। পশ্চিম ফ্লোরিডায় বোটলনোজ ডলফিনকে ব্যবহার করে মিশন পরিচালনার চেষ্টা হয়েছিল বলে নথিতে জানা যায়।
বিভিন্ন প্রাণী ব্যবহার করে এ ধরনের গোয়েন্দাগিরি প্রকল্পে সিআইএ খরচ করেছে লাখ লাখ ডলার।