লিওনার্ড কোহেন- জীবনের কথা জানতেন, আপনি শুনলে বুঝবেন
৭ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০৭
এই দুর্বোধ্য দুনিয়াকে যিনি গান লিখে লিখে বোধগম্য করে তুলেছেন তিনি লিওনার্ড কোহেন। লিওনার্ড কোহেন, সবসময় আড্ডার সবচেয়ে পরিণত মানুষটি। তিনি যে কখনও ছোট ছিলেন, তা দুনিয়ার কেউ ভাবতেই পারে না। মন্ট্রিয়েলের এই সফল কবি ও ঔপন্যাসিক ১৯৬০ সালেও ছিলেন ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়াদের মতো। তিনি যেন বেরিয়ে আসেন তার ‘সঙ্গস অব লিওনার্ড কোহেন’ নামের সাদাকালো অ্যালবাম কভারের ভেতর থেকে তার চিরচেনা কেতাদুরস্ত শার্ট, টাই পড়ে। তার চেহারা দেখেই মনে হয় এই মানুষটি আপনাকে কয়েক মুহূর্ত আটকে রাখতে পারবে। তার গান আর গানের কথা শুনলে আপনার সেই ধারণাটি হাতে নাতে প্রমাণ পাবে। তিনি জীবনের সেই কথাটি জানতেন। আপনি নিবিড়ভাবে শুনে দেখলে দ্বিমত করতে পারবেন না, নিশ্চিত।
আসলে কোহেন শুনতে শুনতে আপনি ভাববেন তিনি হারিয়ে যাওয়া কেউ। যা তাকে সবার থেকে আলাদা করল, তা হলো – তিনি উত্তরটা জানতেন তারপরও দেখতেই থাকতেন, দেখা বন্ধ করতেন না। তিনি সূত্রের খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছেন শয়নকক্ষ থেকে যুদ্ধক্ষেত্র, সিনাগগ থেকে বৌদ্ধ মঠ, ইউরোপ, আফ্রিকা, ইসরায়েল, কিউবা। তিনি সুরের ঝংকারে বিমোহিত হতে হতে যেন সেইসব দৃশ্যের মাদকতায় বুঁদ হয়ে থেকেছেন।
তার ভেতর থেকে যখনই তিনি কষ্টেসৃষ্টে কিছু বের করতে পেরেছেন, সাথেসাথে দক্ষ যহুরির মতো তার ভেতর থেকে রত্ন বের করে এনেছেন। যদিও হাস্যকর তারপরও এই সত্য যে, তিনি তার গানগুলোকে বলতেন তদন্ত রিপোর্ট। সম্পর্ক, যৌনতা, যুদ্ধ, ধর্ম আর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই তদন্ত সম্পন্ন হয়। তার মধ্যে সত্যের অস্তিত্ত্ব নিহিত থাকে। কোহেনের গান যেন উত্তাল সমুদ্রের ভেতর এক দক্ষ নাবিক, যে আপনাকে যত কষ্টই হোক না কেনো জীবন বাঁচিয়ে তীরে পৌঁছে দিবে।
লিওনার্ড কোহেন জন্মেছিলেন ১৯৩৪ সালে। এলভিস প্রিসলি আর ফিলিপ রথের মাঝামাঝি। বনেদি ঘরে জন্ম তার। দাদাদের ভেতর অনেকেই জ্ঞানতাপস, প্রকাশক, স্বনামখ্যাত। যখন তার কাপড় ব্যবসায়ী বাবা মারা যান, তখন তিনি নয় বছরের বালক। সিনাগগের বাণী অমৃত তাকে খুব টানতো ছেলেবেলায়। কথায় কথায় কোহেন বলেছিলেন, ‘ওখানকার সব কিছু ছিল খুব সিরিয়াস, আমার আবার শিথিল কোনো কিছু ভালো লাগে না’। ১৫ বছর বয়সে লোরকার কবিতা পড়ে তার মাথা বিগড়ে যায়। তিনি ক্রমাগত লোরকার কবিতার ভেতরে ঢুকে যেতে থাকেন। কোহেন বলেন, লোরকা তার কবিতায় একাকিত্ব দিয়েই একাকিত্বকে জয় করে ফেলেছেন। আপনি দেখবেন দুঃখ ভারাক্রান্ত দুনিয়ার ভেতর আপনি দুঃখী আর একা এক মানুষ, কিন্তু আপনি আপনার একাকিত্ব দিয়েই যেন চন্দ্র, সূর্্যের একাকিত্বকে বিব্রত করছেন।
লোরকার প্রভাবে যুবক কোহেন নিজেই কবিতা লেখা শুরু করেন, গাইতে থাকেন লোক গান। নামকাওয়াস্তে গিয়ে ভর্তি হন ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই বের হয়, নাম লেট আস কম্পেয়ার মিথোলজিস। উৎসর্গ করেন তার বাবকে।
তারপর লিওনার্ড কোহেন বয়ে গেছেন নদীর মতো, জীবনের ক্তহা লিখতে লিখতে ভরে গেছে তার গানের খাতা। সেই সব গানকে পরবর্তী জীবনে তিনি বলেছেন নিছকই তার রাগ আর উত্তেজনার পেছনের গল্প। সেই সব গল্পই ছড়িয়ে গেছে মানুষের মুখে মুখে, পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে।
আপনি যদি এখনও লিওনার্ড কোহেনের সাথে পরিচয় না হয়ে থাকে, তাহলে আজই এক্ষুণি শুনে দেখুন। লিওনার্ড কোহেন, যিনি জীবনের কথা জানেন।
দ্য গার্ডিয়ান অনুসরণে