যে শহরে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৫০
ঢাকা: সিরিয়ার সর্বশেষ বিদ্রোহী প্রদেশের শহর কার্ফ নাবলে মাসের পর মাস বোমা হামলা চালিয়েছে সিরিয়া এবং রাশিয়ান বাহিনী। বিধ্বস্ত হয়েছে শতশত ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে শহর ছেড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এখন শহরটিতে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি।
ওই শহরের বাসিন্দা সালাহ যার। ৩২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ছেড়ে যাননি তার জন্মশহর। জরুরি পরিস্থিতিতে পাথর কেটে বানানো বেজমেন্টে বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটে তার। বিবিসিকে তিনি বলেন, যখন বোমাবর্ষণ হয়, ধ্বংসযজ্ঞ চলে, নির্যাতন চালানো হয়— বিড়ালগুলো পাশে থাকলে সাহস পাই।
তিনি জানান, এক সময় এই শহরে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস ছিল। এখন খুঁজলে একশো জন পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আশে পাশের শহরগুলো থেকে চলে এসেছে অসংখ্য বিড়াল। কত তা ধারণা করা মুশকিল। শত শত কিংবা হাজার হাজার!
ওদের খাদ্যের দরকার, পানির দরকার, মানুষ দরকার যারা ওদের দায়িত্ব নেবে। এই আতঙ্কের শহরে বিড়ালগুলো সঙ্গ দেয়, সাহস দেয়। তাই এক সহাবস্থান গড়ে উঠেছে এখানে। যারা শহর ছেড়ে যাননি, তারাই বিড়ালগুলোর দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে ১৫টি বিড়াল রয়েছে। কখনো কখনো এই সংখ্যা আরও বেশি— বলেন সালাহ।
সালাহ এখনো ফ্রেশ এফএম নামে স্থানীয় একটি রেডিওতে সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছেন। যদিও সম্প্রতি এক উড়োজাহাজ হামলায় রেডিওটির মূল স্টুডিও ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এর কিছু আগেই রেডিওটির সম্প্রচার কেন্দ্র সরিয়ে পাশের নিরাপদ শহরে নেওয়া হয়।
জনপ্রিয় এই গণমাধ্যমে বোমা হামলার সতর্কতার পাশাপাশি কৌতুক এবং মোবাইল ফোনে নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে ফ্রেশ এফএম-এর প্রতিষ্ঠাতা ইসলামপন্থী বন্দুকধারীদের হাতে খুন হন। তিনি জীবিত থাকতে প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে বিড়ালের জন্য দুধ আর পনির কেনার অর্থ দিতেন। বিড়ালের জন্য একটি ঘরও তৈরি করা হয়েছিল।
সালাহ বলেন, আমরা যখন রাস্তায় হাঁটি, ২০ থেকে ৩০টি বিড়াল আমাদের পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে। কখনো কখনো বাড়িতেও চলে আসে। কুকুরগুলোও ক্ষুধার্ত, আশ্রয়হীন। সার্বিক অবস্থা এই শহরের মানুষগুলোকে প্রাণী প্রেমী করে তুলেছে। এমন অনেক পরিবার আছে, যারা জানেন না পরের বেলায় কী খাবেন! সেই বাড়িতে খাবারের সংস্থান হলে তারা কুকুর-বিড়ালকে না দিয়ে খান না।
সালাহ আরও বলেন, আমরা খাই, ওরাও খায়। সবজি খাই আর নুডুলস খাই। আমার মনে হয়, আমরা উভয়ই দুর্বল প্রাণী। আমাদের একে অন্যকে সাহায্য করা উচিত। আমরা একসঙ্গে ভালো সময় কাটাই, খারাপ সময় কাটাই, আতঙ্কে দিন পার করি।
যদি কখনো এই শহর আমাকে ছাড়তে হয়, যতগুলো সম্ভব বিড়াল আমি সঙ্গে নিয়ে যাব— বলেন সালাহ।