Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেতৃত্বশীল পর্যায়ে এগিয়ে কে— নারী নাকি পুরুষ?


৩ এপ্রিল ২০২০ ১০:০০

নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা কার বেশি— নারী নাকি পুরুষের? এই বিতর্কের শেষ নেই। তর্ক-বিতর্ক যাই হোক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পুরুষের পক্ষেই যায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর নেতৃত্বের দক্ষতাকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়, যেন যোগ্যতা নয়, সুবিধা পেয়েই নারীরা ক্ষমতা কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো দখল করে আছে। অথচ নেতার ভূমিকায় থাকা পুরুষ যতই স্বৈরাচারী কিংবা অমানবিক হোক, তার অর্জনকে ‘সুবিধা’ বা অন্য কোনো নেতিবাচক শব্দের জালে বন্দি করা হয় না।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, ভাবনা, গবেষণা তো হচ্ছেই। তেমনি একটি নতুন গবেষণা সম্পর্কে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের হারভার্ড বিজনেস রিভিউ ম্যাগাজিনে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, নেতৃত্বশীল জায়গায় থাকা নারী ও পুরুষ সমানভাবেই যোগ্য। মেধা ও জ্ঞানে নারী, পুরুষ একেবারে সমানে সমান। তবে, নেতৃত্বশীল জায়গায় থাকা নারীদের কিছু বিশেষ ধরনের দক্ষতা আছে। এক্ষেত্রে পুরুষরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন বলে দাবি করেন গবেষকরা।

বিজ্ঞাপন

গবেষকরা আরও বলেন, নেতৃত্বশীল পর্যায়ে থাকা নারীর এই বিশেষ দক্ষতাগুলো পুরুষরাও শিখে নিতে পারেন। চলুন দেখে নেই, নারীর সেই দক্ষতাগুলো—

প্রতিযোগিতা নয়, আত্মনির্ভরশীলতা

অনেকেই বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীর ধৈর্য বেশি। কথাটি প্রচলিত হলেও এর একটি ভিত্তি আছে। গবেষণায় দেখা যায়, নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা নারীরা আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়চেতা হয়ে থাকেন। অন্যদিকে, পুরুষ নেতাদের বেশিরভাগ সময় স্বেচ্ছাচারী ও মারমুখী হতে দেখা যায়।

শুধু তাই নয়, পুরুষরা নিজের শক্তির ওপর ভরসা রাখার চেয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে পছন্দ করেন বলে গবেষণায় উঠে আসে।

নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানা

নিজের যোগ্যতা নিয়ে অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয় না মেয়েরা। তাই নেতৃত্বের ক্ষমতা পেলেও নিজের সীমাবদ্ধতা দেখতে পারেন তারা। অন্যদিকে, ছোটবেলা থেকে ছেলেরা বেড়ে ওঠে আধিপত্যশীল মনোভাব নিয়ে। ফলে নিজেকে সবসময় ক্ষমতাবান ভাবেন। নেতা হিসেবে তিনি কেমন এবং তার ঘাটতি, ত্রুটি আছে কি না, সেই মূল্যায়ন সঠিকভাবে দাঁড় করাতে পারেন না পুরুষরা— দাবি গবেষকদের।

মানুষকে অনুপ্রাণিত করা

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীরা সাধারণত মানুষকে বেশি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে পারে। ফলে সংকটময় পরিস্থিতি কাটানোর জন্য অন্যদের উজ্জীবিত করার ক্ষমতা নারীর-ই বেশি।

শুধু তাই নয়, নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা নারীদের কাজের সঙ্গে একাত্মতা বেশি থাকে, দায়সারা ভাব কম থাকে। ফলে উৎপাদনশীলতায় পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে- এমনই মনে হয় গবেষকরা।

কেবল হুকুম নয়, সহমর্মিতাও

নারীর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা কেমন তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, কেবল হুকুম নয়, নারীদের সহমর্মিতাও বেশি। কাজের প্রতি দরদ অনুভব করেন। যেকোনো কাজ ‘নিজের’ ভাবেন।

অন্যকে বড় করে দেখানো

যেকোনো কাজে অন্যদের ভূমিকা বড় করে দেখাতে পারেন নেতৃত্বশীল জায়গায় থাকা নারীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ চেয়ে নারীরা অন্যের অবদান অকপটে স্বীকার করে। নারী নেতাদের এই গুণ দলীয় কাজের জন্য অত্যন্ত সহায়ক বলে দাবি করেন গবেষকরা।

নম্রতা

নারী নেতারা পুরুষের তুলনায় নম্র। পুরুষরা সমাজ বা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে অতিমাত্রায় আত্মমুগ্ধতা ও অন্যকে অবদমিত করার শিক্ষা পান। সেইদিক থেকে নারীরা অনেক উন্নত। তারা বাস্তবতা ভালোভাবে বোঝেন। ফলে নিজেকে নিয়ে অতিউৎসাহী হন না। নম্রতা ও শিষ্টাচার বজায় রাখেন বলে গবেষণায় উঠে আসে।

নারীর চোখে দেখা বিশ্ব

নারী ক্ষমতায় থাকলে সেই রাষ্ট্র নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। মানুষের মধ্যে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি সামনে থাকে বলে এই গবেষকরা দাবি করেন।

শেষ কথা হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে কে বেশি যোগ্য— তা প্রমাণ করা এই গবেষণার মোটেও উদ্দেশ্য ছিল না। বরং নেতৃত্বশীল জায়গায় থাকা নারী, পুরুষ উভয়ই যোগ্য— এই চিন্তা যেন দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু বেশিরভাগ সময় নারীকেই অবদমিত করে রাখা হয়, ফলে এই গবেষণার মাধ্যমে নারীর দক্ষতাগুলো যেন উঠে আসে এবং পুরুষরাও তা শেখার মানসিকতা অর্জন করে।

নারীর দক্ষতা নেতৃত্বে নারী এগিয়ে নেতৃত্বে নারীর অবস্থান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর