মে মাসে ৩১ শতাংশ নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার
১১ জুন ২০২০ ১২:০১
ঢাকা: সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলাকালে গত মে মাসে দেশে ১৩,৪৯৪ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশুর উপর নির্যাতনের হার বেড়েছে শতকরা ৩১ ভাগ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক টেলি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১০ জুন) এক ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে “নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা:কোভিড-১৯, মে ২০২০” শীর্ষক প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে দেশের ৫৩ জেলায় ১৩ হাজার ৪৯৪ নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ১৬০ জন নারী ও শিশু এর আগে কখনোই সহিংসতার শিকার হননি। মে মাসের আগে সহিংসতার শিকার হননি এমন নারী ২ হাজার ৪৮১ জন ও শিশু ১ হাজার ৩৯৯।
জরিপে বলা হয়, মে মাসে মোট ১১ হাজার ৩২৩ জন নারী সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৯৭.৪ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার। আর নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে স্বামীর হাতে।
পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৯৪৭ জন যা শতকরা ৪৫ ভাগ। অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫৮৯ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০৮৫ জন ও যৌন নিপীড়ণের শিকার ৪০৪। এছাড়াও আছে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি, হত্যা। এমনকি ত্রাণ নিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে নারী।
এমজেএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে ২ হাজার ১৭১ জন শিশু নানা ধরণের সহিংসতার শিকার হয়েছে। নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে ১ হাজার ৪৭৭ জন মেয়ে ও ৬৯৪ জন ছেলে। শিশুদের উপর পারিবারিক নির্যাতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১ হাজার ৬২১ শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার যাদের মধ্যে ১ হাজার ১৩ জনই মেয়ে। বাল্যবিয়ের শিকার ১৭০ শিশু এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চেষ্টায় ঠেকানো হয়েছে আরও ২৩৩ টি বাল্যবিয়ে। পরিবার ছাড়াও শিশুরা হয়েছে কাজের জায়গায় সহিংসতা, অপহরণ, হত্যা ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির চেষ্টার শিকার হয়েছে।
১৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ও ১৮ জন ধর্ষণ চেষ্টার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে ৩৬ জনই মেয়েশিশু। ১৯ মেয়ে ও ২ ছেলে শিশু অপহরণের শিকার। ১৩ মেয়েশিশু ও ৬ ছেলে শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার। ত্রাণ আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির মুখোমুখি ৩ মেয়ে শিশু।
করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুরা কেমন আছে জানার জন্য এমজেএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো মে মাসে ৫৩ জেলায় ৫৩ হাজার ৩৪০ জন নারী ও শিশুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে এই জরিপ পরিচালনা করে। এদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৪৩৪ জন নারী ও ১৫ হাজার ৯০৬ জন শিশু। এসব নারী ও শিশু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করায় জরিপের জন্য তথ্য দিতে নানারকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এর আগে এমজেএফের এপ্রিল মাসে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় দেশের ২৭ জেলায় ৪ হাজার ৭০৫ জন নারী ও শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এদের মধ্যে ২ হাজার ২০৫১ জন নারী ও শিশু প্রথমবারের মত নির্যাতনের শিকার হন। শিশুদের মধ্যে ৯২ জন বাবা-মা ও আত্মীয়দের হাতে নির্যাতনের শিকার।
শাহীন আনাম বলে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও সহিংস ঘটনার শিকার নারী ও শিশুদের কাউন্সিলিং, আইনগত সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছে। সেই সঙ্গে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের নিয়মিত ফলোআপে রাখা হয়েছে।
এমজেএফ নারী ও শিশু নির্যাতন নারীর প্রতি সহিংসতা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন