Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তম


২২ নভেম্বর ২০২০ ২০:১৭ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একটা পত্রিকার পুরুষ পাতার বিভাগীয় সম্পাদক হওয়ার আমার খুব শখ।

ছেলেদের জন্য আমার খারাপই লাগে। খুশিতে প্রাণ খুলে হাসতে পারে না বলে ফার্স্ট হলেও পত্রিকায় তাদের ছবি ছাপে না সাংবাদিক। আড়ষ্ট গ্রাজ্যুয়েটের চোখে উদ্যম ফোটে না বলে কোএড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের ছবি দেখে পাঠক মহিলা কলেজ ভেবে বিভ্রান্ত হয়। বিয়ের বাড়ির লাখ টাকার ফটো সব ট্র্যাশ হয়ে যায় তাদের পানিশূন্য চাহনীতে।

প্রিয় আইমান সাদিক, আপনি আপনার টেন মিনিট স্কুলে ছেলেদের ক্যামেরার সামনে হাসতে শেখান, প্লিজ।

ছেলেরা আসলেই বেচারা। ইন্টারনেটে দেখলাম ব্রেস্ট ক্যানসারের চেয়ে প্রোস্টেট ক্যানসারে নাকি বেশি লোক মারা যায়। অথচ গোলাপি ফিতার কড়া দৌরাত্ম্যে, নীল ব্যাজটা অন্নপূর্ণার মতো অন্তরালে। পরিসংখ্যান বলে— দুর্ঘটনায় পুরুষ মরে বেশি, হার্ট এটাকে পুরুষ পর্যুদস্ত এমনকি নভেল করোনাও নাকি লিঙ্গ পক্ষপাতদুষ্ট।

বিজ্ঞাপন

ওদিকে বয়ঃসন্ধি যেনো ‘জেন্ডার বায়াসড’ একটা মানসিক অবস্থা। যখন একটা বালকের কণ্ঠে লতা মুঙ্গেশকার কণ্ঠ দেন, কেমন লাগে তার, সেই কথা আমি পড়িনি কোন বইতে। কেমন লাগে যখন হঠাৎ একটি কিশোরের কণ্ঠ বদলায়? ক্লাস ফাইভের প্রথম প্রেম যখন তার প্রত্যাখ্যাত ম্যানলি না হওয়ার অপরাধে?

হাল্কা গোঁফের আঁকিবুঁকি নিয়ে যখন সে মেরুদণ্ড নত করে হাঁটে? আবার বয়সকালে দাঁড়ি গোঁফ না গজালে যখন তাকে বলে ‘ছাগলা দাঁড়ি’? ঘন চুল গজানোর তেল যখন সে গালে মাখে ‘ইমামী ফেয়ার হ্যান্ডসাম’ এর সাথে খুব সঙ্গোপনে? সিগারেট না খেলে যখন সে নপুংসক, বন্ধুর সাথে খিস্তি না উড়ালে যখন সে ‘হাফ লেডিস’? মেয়েদের সম্মান দিলে ‘আঁতেল’ আর পরিবারের ভ্যালুস প্র্যাকটিস করতে গেলে ‘খালু’?

একটা গাছ আছে। নাম তার ‘স্নেক প্ল্যান্ট’। এই সর্পলতা গাছের আরেক নাম ‘Mother in laws tongue’— (বাংলায় শাশুড়ির জিহ্বা)। কারণ তার পাতাগুলো খুবই ধারালো আর ঊর্ধমুখী।  এই শাশুড়ি যখন একটি ছেলের মা। তখন এই সম্পর্কের মাঝে দাঁড়ানো ছেলেটার কেমন সময় কাটে সেই নিয়ে ছেলেরা কি ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেয়? বই লিখে? কবিতা পড়ে? আমি পড়িনি কোনদিন।

ব্রোকেন ফ্যামিলি শব্দটা বলতে শুধু মা বাবার বিচ্ছিন্নতাকেই বোঝায় কিন্তু নিজের মাকে ফেলে যখন নিজের সন্তানের মায়ের হাত ধরে তাকে চলে যেতে হয়, কেমন লাগে তার? শিলপাটার ঘষাঘষিতে যখন সে কেবলই মরিচ বাটা – কেমন জ্বলে তার ভেতরটা? চিরকালের চেনা মা যখন ‘স্নেক প্ল্যান্ট’ হয়ে ওঠে কেমন লাগে তার?

আইনগুলোতে পুরুষতন্ত্রের দিনও ক্ষীণ হয়ে আসছে। প্রেমিকার সম্মতিতে ভালবাসার চরম মুহূর্তগুলো হতে পারে পুরুষের চরম মূল্যের কারণ। মিথ্যা মামলার ভয়ে আড়ষ্ট অফিসের পুরুষ সহকর্মী – সিনেমায় দেখলাম, নায়ক গলায় ফাঁস দেয় মিথ্যা ধর্ষণ মামলার অপমান বইতে না পেরে৷ বসের কাছ থেকে বাড়ি গাড়ি হাঁকিয়ে শাহবাগে দাঁড়ালে অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট বক্সে বিপ্লব হবে নিশ্চিত। প্রেমের ফাঁদ এখন পাটকেল। অতএব সাধু সাবধান।

মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা নিপীড়িত হলেও পুরুষ শিশু ধর্ষণ বাংলাদেশে ‘ধর্ষণ’ এর আইনি সংজ্ঞা বহির্ভূত। ৩০ বছর পর ইংল্যান্ডের পার্থ রোভারস ক্লাবের খেলোয়াড়েরা বিচার পেয়েছিল কৈশোরকালে তাদের উপর যৌন নির্যাতনের। রাস্তায় ‘যা ফোট’ শুনতে শুনতেই রণবীর টোকাইরা কিশোর গ্যাং লিডার হয়ে উঠে। ছোটবেলায় এক আর্মি অফিসারের গল্প শুনেছিলাম। বসের ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী’ শ্যালিকাকে হাসিমুখে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে। বৌ পেটানোর মতো কোনো কোনো স্কুলে ছাত্র পেটানোর যন্ত্রণা ছেলেদের প্রাপ্য হিসেবেই বুঝে নিতে হয়। মাইর খেয়ে ‘পুরুষ মানুষ’ ‘মেয়েদের’ মতো কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে পারে না। শিক্ষকের ‘বেত্রাঘাত আশীর্বাদ না অভিশাপ’ এই তর্কে যুগের পর যুগ বেত্রাঘাত জয়যুক্ত  হয়েছে।

উত্তরাধিকার আইনগুলোও পক্ষ বদলাতে শুরু করেছে। যতই কাঁধে লাশ বইবার ভার নাও, সারাজীবন জড়িয়ে থাকার দাবীতে সন্তানের সমঅধিকারে জোট বাধতে শুরু করেছে সচেতন সমাজ। শুধু মুখে হোম মিনিস্টার বললে হবে না, এপার্টমেন্টের দরজার নেমপ্লেটে এখন স্বামী-স্ত্রীর যুগল নামই সুশিক্ষিত পুরুষের পরিচয়। ফিমেল লিডারশিপ অফিস প্রধানের কেপিআই’তে যুক্ত হওয়ার পর অফিসগুলো হয়ে উঠছে মৌচাক— রানী মৌমাছি আর পুরুষকর্মী প্রথায় পুরুষের চাকরির বাজারও সংকুচিত। ‘Women are strongly encouraged to apply’ বলতে লিঙ্গ বৈষম্য বোঝায় না কোন আইনে। নারী দাঁড়িয়ে থাকলে সিট ছেড়ে দেওয়াই সমঅধিকার।

একটা সত্যি গল্প। গত বছর আমাদের অফিসে পুরুষ দিবস পালিত হয়েছে। একজন পুরুষ সহকর্মীকে শুভেচ্ছা জানানো হলো সকালে। ভদ্রলোক অনেক বই পড়েন, দেশ বিদেশ সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান। কিন্তু তিনিও আগে শোনেননি ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’-এর কথা।  ভদ্রলোক ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখেন ১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’। উনি ধরেই নিলেন— তার হাতের ফুল, কার্ড, স্যুভেনির সবটুকু নিতান্তই কৌতুক।

কিন্তু পুরুষ দিবস আছে। নীরবে নিঃশব্দে আছে ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দিবসটির জন্ম। খুবই যুক্তিসঙ্গত প্রতিপাদ্য।

ভালো থাকুন বাবা, চাচা, মামা, খালু, ফুপা, ভাই, বন্ধু, সুহৃদ, সহকর্মী আর আমাদের ছেলে সন্তানেরা। এ বিশ্বের জন্য বরাদ্দ হোক বিশ্ব মানব দিবস। কারণ ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান, চিরকল্যানকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর