Saturday 13 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরজুড়ে আলোচিত ৭ নারী– দেশে


২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১৪ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:০৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে চলতি বছর আমরা প্রবেশ করেছি নতুন স্বাভাবিকে। এবছর আলোচিত নারীর তালিকা করার সময় স্বাভাবিকভাবেই করোনা মোকাবিলায় যারা এগিয়ে ছিলেন তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা সাতজনের মধ্যে ছয়জনই আলোচনায় এসেছেন করোনা মোকাবিলায় সাফল্যের চিহ্ন রেখে। করোনা মোকাবিলায় সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়েই শুধু নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও বারবার আলোচনায় উঠে এসেছেন। বাংলাদেশের নারীদের অগ্রযাত্রায় আলো হাতে আগে আগে পথ চলছেন তিনিই। তাই তালিকার সবার উপরে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান। এরপরেই আছেন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভার একমাত্র নারী সদস্য ডা. দিপু মনি। আছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক ও দুই মানবাধিকারকর্মী রিনা আক্তার ও রিমা সুলতানা রিমু।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা

২০২০ এ বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। দেশে তার উপর ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘুর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যা। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে মানুষকে বাঁচাতে বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা দেন ৭৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ।

বছরজুড়ে বিশ্বে আলোচিত নারীরা (পর্ব-১)

তার নির্দেশেই করোনার মধ্যেও থেমে ছিল না মেগা প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় এক বছরের ব্যবধানে ১৫৫ ডলার বেড়েছে। করোনা সংকটকালে বাজার পরিস্থিতিও ছিল সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে। কোভিড-১৯, আমফান, বন্যা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সফলভাবে সংকট মোকাবিলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিপু মনি

করোনাকালে সারা বিশ্বেই শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। চলতি বছর অনুষ্ঠেয় পাবলিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে যার আওতায় বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষাও বাতিল হয়ে যায়। এভাবে একে একে বাতিল হয় পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে শংকার মুখে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির দিকে তাকিয়ে ছিল সারা দেশ। এসময় এসএসসির ফলাফল ঘোষণা হলেও বলা হয় স্কুল পর্যায়ের সব শ্রেণিতে অটো পাশ দেওয়া হবে এবং এইচএসসির ফলাফল হবে জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে। এছাড়াও করোনার শুরু থেকেই সরকারিভাবে বিটিভির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। এবং বছর শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় অ্যসাইনমেন্ট। এভাবে করোনার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ নারী মন্ত্রী দিপু মনি।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে দেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন রোগতত্ত্ববিদ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। কেমব্রিজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ডা. ফ্লোরা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসির) পরিচালক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে সর্বশেষ আপডেট জানাতেন। মহামারীকালে নানা অনিয়মের অভিযোগে মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যাপক রদবদলের পর গত আগস্টে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান তিনি।
অধ্যাপক ফ্লোরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করার পর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান-নিপসম থেকে রোগতত্ত্বে স্নাতকোত্তর করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে সহকারী পরিচালক হিসেবে তিন বছর গবেষণা করেন। ২০১৬ সালে আইইডিসিআরের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। চীনে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি থেকে আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সবশেষ তথ্য তুলে ধরা শুরু করেছিলেন সেব্রিনা ফ্লোরা।

ড. সেঁজুতি সাহা

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স আবিষ্কার করা গবেষকদলের নেতৃত্বে ছিলেন ড. সেঁজুতি সাহা। বাবা বিখ্যাত অণুজীববিজ্ঞানী ও গবেষক ড. সমীর কুমার সাহা ও মা আরেক অণুজীবিজ্ঞানী ও গবেষক ড. সেতারুন্নাহার। বাংলাদেশ থেকে এ লেভেল শেষ করে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো কেমিস্ট্রিতে আন্ডারগ্রাজুয়েট করে মলিকিউলার জেনেটিকসে পিএইচডি করেন। পরে ২০১৬ সালে শিশু মৃত্যুহার কমাতে কাজ করতে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে যোগ দিয়ে দেশে চলে আসেন ও বাবার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এ যোগ দেন। সম্প্রতি বিল গেটস জার্নালে প্রতিভাধর এই তরুণ বিজ্ঞানী ও তাঁর বাবাকে নিয়ে প্রশংসা করেন বিল গেটস। বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা অন্যতম এই তরুণ বিজ্ঞানী ছিলেন বছরের আলোচিত ব্যক্তিত্বদের একজন।

ড. রুবানা হক

আমরা সবাই জানি দেশের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক সংগঠন বিজিএমইএ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সারাবছরই আলোচনায় ছিলেন ড. রুবানা হক। গত বছরের ২০ এপ্রিল সংগঠনটির ৩৬ তম সাধারণ সভায় সংগঠনটির ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে যাত্রা শুরু হয় তার।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে যখন সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন গার্মেন্টস খোলা আর বন্ধ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। করোনার প্রভাব বিবেচনায় রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দেয় সরকার। সেই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ নিয়ে এপ্রিল-জুনে ৩৫ লাখ পোশাক কর্মীকে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে বেতন দেওয়া হয়। শর্ত ছিল এ ঋণ ১৮ মাসে পরিশোধ করতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউর প্রসঙ্গে তুলে ধরে বিজিএমইএ এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করার প্রস্তাব দিয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবিলায় গেল ৭ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি জানান। আর পোশাক শিল্প মালিকদের এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে নতুন প্রণোদনার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়া পোশাক মালিকদের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়েছে। এভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিদেশি বাজার নির্ভর তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আলোচনায় ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।

রিনা আক্তার

প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকা প্রকাশ করে বিবিসি। তালিকায় জায়গা করে নেন দুই বাঙালি নারী। পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মহামারির এই কঠিন সময়ে কাজের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন এমন নারীদেরকেই এই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিবিসি। তালিকায় ছয় নম্বরে জায়গা করে নেন মানবাধিকারকর্মী রিনা আক্তার। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি।

রিনা আক্তার সম্পর্কে বিবিসি’র বর্ণনায় বলা হয়েছে মাত্র আট বছর বয়সে এক আত্মীয় তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা ও পরে যৌনকর্মীতে পরিণত হওয়া রিনার। সেই রিনাই এখন অন্য যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে রিনা ও তার দল ঢাকায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত চারশ যৌনকর্মীকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এসব যৌনকর্মীরা মহামারির কারণে চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়েছেন। রিনা আক্তার বিবিসিকে বলেছেন, ‘লোকজন আমাদের পেশাকে ছোট করে দেখে। কিন্তু আমরা এটি করি খাবার কেনার জন্য। আমি চেষ্টা করছি যেন এই পেশার কেউ না খেয়ে থাকে এবং তাদের বাচ্চাদের যেন এ কাজ করতে না হয়।’

রিমা সুলতানা রিমু

বিবিসির তালিকায় ৮৭ নম্বরে জায়গা করে নেওয়া আরেক বাঙালি রিমা সুলতানা রিমু। পেশায় শিক্ষক্ল রিমু কক্সবাজার ভিত্তিক ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিসের একজন সদস্য। এ কর্মসূচিটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ উইমেন পিস বিল্ডার্সের অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য সংঘাতসঙ্কুল দেশগুলো থেকে আসা তরুণ নারীদের ক্ষমতায়ন করা, যেন তারা নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শান্তির দূত হতে পারেন।

রিমা তার মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবিলায়। রোহিঙ্গা শরণার্থী, বিশেষ করে যেসব নারী ও শিশুর শিক্ষার সুযোগ নেই তাদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীল ও বয়সভিত্তিক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি।

রেডিও ব্রডকাস্ট ও থিয়েটার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করেছেন। ‘আমি বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অধিকার আদায়ের জন্য নারীর শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি,’ বিবিসিকে বলেন রিমা।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর