তালিবানের অন্ধকার যাত্রার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে আফগান নারী
৮ জুলাই ২০২১ ১৪:৩১
আফগানিস্তানের উগ্রবাদী গোষ্ঠি তালিবানের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিচুক্তির আওতায় সেদেশ থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। চুক্তি অনুযায়ী ১ মে’র মধ্যে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের আমলে তা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ২ জুলাই আফগানিস্তানের বাগরামে অবস্থিত সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়। মূলত মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই তালিবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিলে সাধারণ আফগানিরা সেসব হামলা প্রতিহতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার তালিবান আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে শত শত আফগান নারী। আফগানিস্তানের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের রাস্তায় শত শত নারী অ্যাসল্ট রাইফেল কাঁধে মিছিল করে এবং সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন।
সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় গত সাপ্তাহিক ছুটির দিন কেন্দ্রীয় গর প্রদেশে। শত শত নারী বন্দুক উঁচিয়ে তালিবান-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
যদিও আফগানিস্তানের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় আফগান নারীদের যুদ্ধের ময়দানে দেখার সম্ভাবনা কম, কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন প্রমাণ করে যে সেদেশে নারীরা তালিবান আগ্রাসনের ভয়ে কতটা ভীত। আফগানিস্তানে বিশ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতির আগে তালিবান আমলে এসব উগ্রবাদী গোষ্ঠির হাতে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার তারাই। সামাজিক ও পারিবারিক নানা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল তাদের। সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সেনা প্রত্যাহারের ঘটনায় তাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে তারাই। তাই নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে আফগান নারীদের এমন প্রতিবাদ।
তবে সবাই যে প্রতিকী প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তা না, অনেকেই সম্মুখ যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত। গর প্রদেশের মহিলা অধিদফতরের প্রধান হালিমা পরাস্তিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মাসখানেক আগেই তিনি প্রাদেশিক গভর্নকে জানিয়েছেন, তারা শুধুই নিরাপত্তা বাহিনীকে উৎসাহ দিতেই অস্ত্র হাতে বের হননি, প্রয়োজনে তিনিসহ অনেক নারীই সম্মুখযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
তালিবানরা আফগানিস্তানের অনেক প্রান্তিক জেলার দখল নিতে শুরু করছে যার অনেকগুলোই বিশ বছর আগে তালিবান-বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এমনই একটি উত্তরের বাদাখশান প্রদেশ যার কয়েক ডজন জেলা তালিবান আগ্রাসনের শিকার। এভাবে অনেক প্রদেশেরই রাজধানী দখলে নিয়ে নিচ্ছে তারা। আর দখলে নেওয়া এসব প্রদেশে ইতোমধ্যে নারীদের উপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে তারা। আন্দোলনকারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে মেয়েদের শিক্ষা, অভিভাবক ছাড়া বাইরে যাওয়া, ইচ্ছামত পোশাক পরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। একটি এলাকায় বিতরণকৃত লিফলেটে দেখা যায় সব মেয়েকে বোরখা পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই গরের মত কিছুটা অগ্রগণ্য প্রদেশের নারীদের এই অস্ত্র প্রদর্শন আসলে তাদের নিরুপায় প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে নিজেদের রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুতির বার্তাই যেন দিচ্ছে।
তবে শুধু অগ্রবর্তী এলাকাই নয়, তুলনামূলক রক্ষণশীল গ্রামীণ এলাকার নারীরাও শিক্ষার সুযোগ চান, চান চলাচলের স্বাধীনতা ও পরিবারে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে। সাম্প্রতিক এক জরিপে তাদের এসব ইচ্ছার কথা উঠে এসেছে। গত দুই দশকে এসব ক্ষেত্রে যে সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল তালিবান আগ্রাসনের কারণে তা বাঁধাগ্রস্ত হবে বা থেমে যাবে বলেই আশংকা।
আফগান নারীদের বক্তব্যে সেসব কথাই উঠে আসে। উত্তরাঞ্চলের যাওজিয়ান প্রদেশের বিশের কোঠার এক নারী সাংবাদিক বলেন, ‘কোন মেয়েই যুদ্ধ করতে চায় না। আমিও চাই না। আমি শুধু চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ও সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাকে প্রতিবাদী হতে বাধ্য করেছে।’ নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা হল না। অবশ্য যাওজিয়ানে মেয়েদের প্রতিবাদের ইতিহাস আছে। তিনি প্রদেশের রাজধানীতে অস্ত্র পরিচালনার বিষয়ে এক দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন, যা বর্তমানে অবরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেশটি এমন লোকদের নিয়ন্ত্রণে চাই না যারা মহিলাদের নিজেদের ইচ্ছামত চালাতে চায়। আমরা বন্দুক হাতে নেওয়ার মাধ্যমে দেখাতে চাই যে নিজেদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেও আমরা প্রস্তুত।’
এদিকে তালিবানরা আফগানিস্তানের অনেক প্রান্তিক জেলার দখল নিতে শুরু করছে যার অনেকগুলোই বিশ বছর আগে তালিবান-বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এমনই একটি উত্তরের বাদাখশান প্রদেশ যার কয়েক ডজন জেলা তালিবান আগ্রাসনের শিকার। এভাবে অনেক প্রদেশেরই রাজধানী দখলে নিয়ে নিচ্ছে তারা। আর দখলে নেওয়া এসব প্রদেশে ইতোমধ্যে নারীদের উপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে তারা। আন্দোলনকারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে মেয়েদের শিক্ষা, অভিভাবক ছাড়া বাইরে যাওয়া, ইচ্ছামত পোশাক পরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। একটি এলাকায় বিতরণকৃত লিফলেটে দেখা যায় সব মেয়েকে বোরখা পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই গরের মত কিছুটা অগ্রগণ্য প্রদেশের নারীদের এই অস্ত্র প্রদর্শন আসলে তাদের নিরুপায় প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে নিজেদের রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুতির বার্তাই যেন দিচ্ছে।
তবে শুধু অগ্রবর্তী এলাকাই নয়, তুলনামূলক রক্ষণশীল গ্রামীণ এলাকার নারীরাও শিক্ষার সুযোগ চান, চান চলাচলের স্বাধীনতা ও পরিবারে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে। সাম্প্রতিক এক জরিপে তাদের এসব ইচ্ছার কথা উঠে এসেছে। গত দুই দশকে এসব ক্ষেত্রে যে সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল তালিবান আগ্রাসনের কারণে তা বাঁধাগ্রস্ত হবে বা থেমে যাবে বলেই আশংকা।
আফগান নারীদের বক্তব্যে সেসব কথাই উঠে আসে। উত্তরাঞ্চলের যাওজিয়ান প্রদেশের বিশের কোঠার এক নারী সাংবাদিক বলেন, ‘কোন মেয়েই যুদ্ধ করতে চায় না। আমিও চাই না। আমি শুধু চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ও সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাকে প্রতিবাদী হতে বাধ্য করেছে।’ নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা হল না। অবশ্য যাওজিয়ানে মেয়েদের প্রতিবাদের ইতিহাস আছে। তিনি প্রদেশের রাজধানীতে অস্ত্র পরিচালনার বিষয়ে এক দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন, যা বর্তমানে অবরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেশটি এমন লোকদের নিয়ন্ত্রণে চাই না যারা মহিলাদের নিজেদের ইচ্ছামত চালাতে চায়। আমরা বন্দুক হাতে নেওয়ার মাধ্যমে দেখাতে চাই যে নিজেদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেও আমরা প্রস্তুত।’
তার কথাতেই উঠে আসে নারীদের এই যুদ্ধ করতে চাওয়ার গুরুত্ব আসলে কতটা। তালিবান পুরুষদের জন্য নারী সৈন্যদের মুখোমুখি হওয়া বা মারা যাওয়াটা বেশি লজ্জার। এর ফলে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলেইমনে করছেন তিনি। আর এই সাহসটুকু ভর করেই কয়েক ডজন বিভিন্ন বয়সী অনভিজ্ঞ নারী অস্ত্র চালনাত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। উল্লেখ্য সিরিয়ার আইসিস যোদ্ধারা পুরুষ কুর্দি সৈন্যর চেয়ে নারী সৈন্যদের হাতে মারা পড়াকে বেশি ভয় পান। গোড়া রক্ষণশীল এসব জঙ্গিদের জন্য এটি চরম লজ্জার।
আফগানিস্তানে কিছুটা কম রক্ষণশীল অংশে নারীদের অস্ত্র তুলে ধরা বিরল হলেও নজিরবিহীন নয়। গত বছরই কিশোরী কামার গুল তার মা-বাবাকে হত্যাকারী একদল তালেবানের সঙ্গে লড়াই করার পরে দেশজুড়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন। জঙ্গিদের মধ্যে তার নিজের স্বামীও ছিল।
গরের মহিলা অধিদফতরের প্রধান পরাস্তিড বলেন, তাদের প্রদেশে তালিবানদের রক্ষণশীল নিয়ম মানা হবে না। এখানকার নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি ক্ষেত এবং গ্রামে কাজ করে। তারা কাজের সুবিধার জন্যই পুরো শরীর বোরখায় না ঢেকে শুধু মাথায় স্কার্ফ পরে থাকেন। কিন্তু এখন তালিবানরা গরের যেসব এলাকা দখলে নিয়েছে সেখানে মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুধু মাঠে কাজ করাতেই নিষেধাজ্ঞা আসে নি, এমনকি তাদের গৃহপালিত পশুর যত্ন নিতেও নিষেধ করা হয়েছে বলে পরাস্তিশ জানান। তারা ইতোমধ্যে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে এমনকি বিয়েবাড়ি যাওয়াও মানা। বিয়ে বা অন্য সামাজিক অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র পুরুষরাই অংশ নিতে পারবে বলে নিয়ম জারি করেছে তারা।
পরাস্তিশ জানান মূলত এসব অঞ্চলের নারীরাই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে শাহরাক জেলার আল্লাহ্য়ারের কাছ থেকে এক ডজনেরও বেশি নারী পালিয়ে আমাদের কাছে আসে। তারা তাদের জমি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার জন্য বন্দুক চেয়েছে। চরসদ্দা অঞ্চলেও একই অবস্থা’, যোগ করেন তিনি।
এসব নারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘আমরা আত্মরক্ষা করতে পারছি না। প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছি, আহত হচ্ছি, মারা পড়ছি। তাই কেন লড়াই করব না?’ এমনকি তালিবানি বিধিনিষেধের কারণে ওইসব এলাকায় নারীরা সন্তান প্রসবের জন্যও হাসপাতালে যেতে পারছে না। তারা জানায় কমপক্ষে দু’জন নারী কোনরকম মেডিকেল সাহায্য ছাড়া ঘরেই প্রসব করতে বাধ্য হয়। এমনকি নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্য নারীরাও যেতে পারে নি।’
তিনি বলেছিলেন, এই মুহুর্তে নারীদের পিছনে টেনে রেখেছে ক্ষমতাসীন পুরুষরা। গভর্নর তাকে জানিয়েছেন যে এখনই যুদ্ধের ময়দানে নারীদের দরকার নেই কিন্তু প্রয়োজন হলে তারা আমাদের জানাবে বলেছে।’
কাবুল থেকে নিউজ করেছেন দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদক এমা গ্রাহাম হ্যারিসন। আখতার মোহাম্মদ মাকোই এই নিউজ তৈরিতে তাকে সাহায্য করেছেন।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানা।