Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দাহ্য না হয়েও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটালো?

ফিচার ডেস্ক
৭ জুন ২০২২ ১৪:০৩

চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আগুন ও বিস্ফোরণে মৃত্যুর ভয়াবহতায় এখনো শোকে মুহ্যমান গোটা বাংলাদেশ। আগুন, আগুনের উৎস ও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে এখনো চারধারে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সূত্রমতে একটা কথা স্পষ্ট, কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামে রাসায়নিক থাকার কারণেই সেখানে বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং এতো দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

আগুন লাগলেই সেটা নেভানোর জন্য প্রথমেই পানির কথা মাথায় আসে। কিন্তু পানি দিয়েই সব আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগলেই পানি যে সবসময় সমাধান নয়- সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এই আলোচনা আবারও সামনে এসেছে। যে রাসায়নিককে এই বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে সেই হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা। সেই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আসলে কী? এবং দাহ্য না হয়েও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটালো?

বিজ্ঞাপন

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী

হাইড্রোজনের পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটা বর্ণহীন তরল। একে রাসায়নিক ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা যায় অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে। সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট।

পানি দিয়েই সব আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগলেই পানি যে সবসময় সমাধান নয়

পানি দিয়েই সব আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগলেই পানি যে সবসময় সমাধান নয়

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ব্যবহার

বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি এখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এর ব্যবহার আছে, যেমন – ব্লিচিংয়ের জন্য টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে ডাইং ইন্ডাস্ট্রিতে, লেদার ইন্ডাস্ট্রিতে, উচ্চচাপে অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে, ওয়াটার ট্রিটমেন্টের কাজে, এছাড়া বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় এটি। নানা কাজে এর ব্যবহার হলেও সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার না করলে বিপজ্জনক হতে পারে।


আরও পড়ুন: রাসায়নিকে আগুন লাগলে কী করতে হয়?


হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কতটা বিপজ্জনক

সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক। এর স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি। সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এর উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর রোববার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপো

রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর রোববার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপো

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কীভাবে বিস্ফোরিত হয়

পারিপার্শ্বিক অনেকগুলো অবস্থার উপর নির্ভর করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হবে কিনা। তবে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সাধারণত বিস্ফোরকের মতো আচরন করে না। এটা দাহ্য পদার্থ না হলেও এটা অক্সিডাইজিং এজেন্ট। অর্থাৎ এটা অক্সিডাইজার হিসেবে কাজ করে। আর অক্সিডাইজারে অক্সিজেন বা ফ্লোরিন বা ক্লোরিনের মতো পদার্থ যুক্ত থাকে যা দাহ্য পদার্থের মতো আচরণ করতে পারে।

আগুন লাগলে তার আশেপাশে কোন অক্সিডাইজিং এজেন্ট থাকলে সেটা আগুনের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়, পর্যাপ্ত তাপ ও জ্বালানি পেলেই আগুনের তীব্রতা বাড়ে এবং এই তীব্রতায় বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শ পেলে এটা বিক্রিয়া করে। তাছাড়া উচ্চ তাপে এটা বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে। তাছাড়া পানির সংস্পর্শে এলেও বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোয় শনিবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোয় শনিবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের আগুন নেভাতে হয় যেভাবে

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যেহেতু রাসায়নিক যৌগ সেই কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণে কোন আগুন লাগলে সেটি পানি দিয়ে নেভানো যায় না। এ ধরনের আগুন নেভাতে হয় অন্য কৌশলে। ফগ সিস্টেমে এ ধরনের আগুন নেভানো সম্ভব। এছাড়া ফোম বা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র দিয়ে এমন আগুন নেভাতে হয়।


আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম যেন আরেক বৈরুত


মানবদেহ হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সংস্পর্শে এলে কী হয়

শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মানবদেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা বা বমিও হতে পারে। অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ফুসফুসেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। ত্বকে ও চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এরকম রাসায়নিক যেন চোখ আর ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ড্রাম

সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ড্রাম

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সংরক্ষণ

দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে এটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ কোন দাহ্য পদার্থের কাছে থাকলে বা আগুন লাগার জায়গায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলে আগুন বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে , বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শ পেলে এটা বিক্রিয়া করে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এটা শীতল, শুষ্ক, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। বিশেষ করে ফ্লেমেবল কেমিক্যাল অর্থাৎ দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এটা রাখা বিপজ্জনক। আর তাই রাসায়নিক সংরক্ষণের বৈশ্বিক নিয়ম ‘ম্যাটারিয়াল সেইফটি ডেটাশিট’ অনুযায়ী হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হবে গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম অথবা প্লাসটিক কনটেইনারে।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

দাহ্য না হয়েও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটালো? পাঁচমিশেল ফিচার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর