Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি- মুক্তিযদ্ধের মহান সংগঠক

মাহাবুব মাসফিক
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৪৪

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে মনোবল বাড়িয়ে, আশ্রয় দিয়ে এবং সংগঠিত করেছিলেন তিনি পাবনার কৃতি সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি। বর্বর পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতার এক নির্মম ইতিহাস বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। বিজয়ের একদিন আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এদেশীয় রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা করে ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চোখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন বধ্যভূমিতে। ডা. ফজলে রাব্বি তাদেরই একজন।

বিজ্ঞাপন

ফজলে রাব্বির জন্ম ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী গ্রামে। বাবা আফসার উদ্দিন আহমেদ। মা সুফিয়া খাতুন। পাবনা জেলা স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে থেকে ১৯৫৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পাস করেন।

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ডা. রাব্বি যুক্তরাজ্যের এডিনবারা থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। তিন বছর পর দেশে ফিরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৬৮ সালে তিনি একইসঙ্গে মেডিসিন ও হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক হন। অধ্যাপনা ও চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি গবেষণার কাজও করতেন। ‘ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল’ ও ‘ল্যান্সেট’ সাময়িকীতে তার প্রচুর গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ই তিনি ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

রাব্বি চিকিৎসক হিসেবে যেমন খ্যাতিমান ছিলেন তেমনি ছিলেন প্রগতিমনষ্ক, সংস্কৃতিবান এবং রাজনীতি সচেতন একজন দেশব্রতী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ডা. রাব্বি আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সহকর্মীদের নিয়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে সব ধরনের প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র ও সহকর্মী শিক্ষকদের মধ্যে তিনি তার আদর্শ ছড়িয়ে দিতেন।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খুব গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ, আহতদের ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিতেন। সেসব কর্মকাণ্ডের জের ধরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার ওপর পাকিস্তানি ও রাজাকার-আলবদরদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিপদের আশঙ্কাকে তুচ্ছ করে অসীম সাহসে তিনি তার কাজ চালিয়েছেন। কিন্তু শেষ কাজটা আর শেষ করতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র একদিন আগে ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন সেনাসহ রাজাকার-আলবদররা ডা. ফজলে রাব্বিকে তার সিদ্ধেশ্বরীর বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ডা. ফজলে রাব্বির নামানুসারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি স্মারক ডাকটিকেট।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ফিচার মাহাবুব মাসফিক মুক্তিযুদ্ধ শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর