Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোজার মাসে বান্দার পরিবর্তন

মিসবাহুল ইসলাম
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪৭

আত্মশুদ্ধি ও বিশুদ্ধতার মাস বলা হয় রমজান মাসকে। চারিত্রিক মহা গুণগুলো জাগ্রত হয় এই মাসে। সংযমতা ও নীরব সাধনায় একমাস ব্যাপী আমরা রোজা রাখি। পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতাকে জাগ্রত করি। নতুন করে আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চার হয়। কেননা রোজার উদ্দেশ্যই হলো আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করা এবং আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটা। তাই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৩ নং আয়াত)।

বিজ্ঞাপন

আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বলেন, “মানুষের আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তি সংরক্ষণের এক মহা অনুশীলন এই রমজান মাস”। একদিকে মানুষের দৈহিক চাহিদা কমে যায় যা শারীরিক সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়, অন্যদিকে চারিত্রিক কুলষিত ও মন্দা নীতির নির্বাসন হয় এবং নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন হয় যা মানবতাবোধকে জাগ্রত করে। ফলে, ধনী গরিবের মর্যাদা এক সুতায় গেঁথে যায়। রমজানের এই মাসব্যাপী ইবাদতের প্রস্তুতি স্বরুপ শুধু জমিন বাসীদের আয়োজন নয়, আসমানকেও সাজানো হয়। আল্লাহ জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন, বয়ে বেড়ায় রহমতের বাতাস। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাকওয়ার পথে হাঁটতে এবং অন্তরের ব্যাধি দূর করতে শয়তানকেও দূরে রাখা হয় তার কর্ম থেকে। ইবাদতের উৎকর্ষ সাধন করতে একনিষ্ঠভাবে মহান রবের ইবাদত করার এক মহা সাধনার সূচনা হয়। মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আমরা রোজা রাখি। চরম তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ও আমরা রোজা ভঙ্গ করি না। সেহেরী, ইফতার, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবিহের নামাজ, ক্বিয়ামূল লাইল,তাহাজ্জুতের নামাজসহ অন্যান্য সব আমল করি। আর এই সবগুলো আমলের সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় বহু গুণ বেশি হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই দশগুণ থেকে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো। সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে। রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে। রোজা পালনকারীর মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১) তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি লাভ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রবল উদগ্ৰীব থাকি আমরা। এই রহমত, নাজাত এবং মাগফেরাতের দিনগুলো এক মাস পরে চলে যায়, কিন্তু রমজানের এই আমলের নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখলে সবসময়ই সেগুলো রয়ে যাবে। এজন্য রমজানের মাস ব্যাপী অনুশীলনের দৃঢ় ইচ্ছা এবং প্রতিজ্ঞা আমাদের থাকা চাই। কারণ, রমজান অনুশীলনের মাস। আল্লাহ হেদায়েত ও তাকওয়ার পথে চলার জন্য বান্দাকে অনুশীলনের সুযোগ দেন যেন বাকি জীবন এ পথ ধরে হাঁটতে পারে। তাই রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই।

আত্মশুদ্ধি অর্জনের একমাত্র এই মাসে নিজের পরিবর্তন এনে পাপাচারে নিমজ্জিত জাহান্নামের প্রান্তে দাঁড়ানো মানুষদের পরিবর্তনের আহ্বান জানাই। কারণ মানুষের বাহ্যিক অসুস্থতা যেমন: জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি নানা ব্যাধি থাকে, ঠিক তেমনি অন্তরের ব্যাধি যেমন : অহংকার, গীবত, হিংসা, বিদ্বেষ, লৌকিকতা ইত্যাদি কিছু এই কলুষতা মানুষকে গ্রাস করে তিলে তিলে অন্ধকার পাপাচারে নিমজ্জিত করতে পারে। তাই রমজান আমাদেরকে এইসব ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে এবং গুনাহ মুক্ত পথে হাঁটতে শেখায়। আমাদের উচিত রমজানের সম্মান ধরে রাখা এবং নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা। আসুন আল্লাহর অসন্তুষ্ট সব মন্দা কাজ ভুলে গিয়ে রহমত, বরকতময় এবং মাগফেরাতের ছায়ায় আবদ্ধ হই। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে এ বৎসরের রোজা গুলো পালন করার তাওফিক দান করুন।

সারাবাংলা/এজেডএস

মিসবাহুল ইসলাম রোজার মাসে বান্দার পরিবর্তন