রমজান যেভাবে সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ নিয়ে আসে
৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৪৩
সঠিক ও সুন্দর পথে জীবনযাপন করা সবার কাঙ্ক্ষিত। অনেকেই চায় জীবনের গতিধারায় পরিশুদ্ধি আনতে। কিন্তু চাইলেও সবসময় তা হয়ে ওঠে না। কারণ পশুপ্রবৃত্তি ও কুমন্ত্রণা মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় সবসময়। সুযোগ পেলেই বিপথে পরিচালিত করে। অসমর্থিত ও অন্যায় পথের মোহনীয় হাতছানি সহজে এড়ানো যায় না। তবে পাপবোধ সবসময় মানুষকে তাড়িত করে। জীবনপ্রবাহ সঠিক পথে পরিচালিত করার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। যারা সত্যিকার অর্থে জীবনের গতিপথ পাল্টে দিতে চান তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ পবিত্র রমজান। কারণ মানুষের জীবনকে সামগ্রিকভাবে সব উপকরণ ও ব্যবস্থা এ মাসে রয়েছে। মানুষের কুপ্রবৃত্তি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে এ মাসের চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়।
পাপ-পঙ্কিলতায় দূষিত আত্মাকে রহমতের বারিধারায় পবিত্র করা রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য। হৃদয়ের যত কামভাব আছে তা দূর করা; মুমিনজীবনে নতুন গতি আনা; মানুষের পাশবিক ইচ্ছা ও জৈবিক চাহিদায় নিয়ন্ত্রণ রোজা বিশেষ দাবি। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করতে পারে। চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে। কারণ ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছায় ভাটা পড়ে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। দারিদ্র্যপীড়িত অগণিত মানুষের অনাহারক্লিষ্ট মুখ তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক করে। তখন অন্তর বিগলিত হয় রাব্বুল আলামিনের কৃতজ্ঞতায়। মহৎ এই উদ্দেশ্যের কারণেই সিয়াম আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। অন্য কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘোষণা নেই।
রমজান মানুষকে নতুন জীবনদান করে। রমজানের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে একজন মুমিন তার জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেতে পারে। অল্পদিনের বিচরণস্থল এ দুনিয়ায় অনন্ত জগতের পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য রমজানের চেয়ে বেশি সম্ভাবনা আর কিছুতেই নেই। এ জন্যই রাসুল (সা.) আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেল কিন্তু তার জীবনের বিচ্যুতিকে ক্ষমা করাতে পারল না সে বড়ই দুর্ভাগা!’
রমজানের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে আমাদের রোজাটি হতে হবে নিষ্কণ্টক ও সুনির্মল। রোজার প্রকৃত দাবি ও চাহিদা পূরণ করতে হবে যথার্থভাবে। না খেয়ে উপাস থাকাই যে রোজা নয় তা আমাদের সবার জানা। নিজের সত্তাকে যেমন সংযমের মধ্যে আবদ্ধ করতে হবে তেমনি রোজাদারের ওপর কিছু দায়-দায়িত্বও বর্তায়। বিশেষত রমজানে অধীনদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা সবার কর্তব্য। এ মাসে অধীনদের ওপর থেকে কাজের চাপ কমিয়ে দিলে আল্লাহ তার ওপর থেকে জাহান্নামের আগুন সরিয়ে দেবেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো রমজানের অন্যতম লক্ষ্য।
রোজা ফরজ করার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো দুস্থ অসহায় মানুষের ব্যথানুভূতি। যারা প্রাচুর্যের খনিতে বাস করেন তারা এ মাসে গরিব-দুঃখীদের ব্যথা কিছুটা হলেও বোঝেন।
রমজানের দাবি হলো, ওই লোকদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া। কারণ এই মাসের দান-সদকা অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে উত্তম। রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। এ জন্য আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অতি মূল্যবান। হেলায়-খেলায় এ মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
সারাবাংলা/এসবিডিই