Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হজ আল্লাহকে পাওয়ার সিঁড়ি

জহির উদ্দিন বাবর
২৬ জুন ২০২৩ ১৭:৩২

খেদমতে খালক বা সৃষ্টির সেবা একটি মহৎ গুণ। কথায় আছে, খেদমতে খোদা মেলে। জীবনে যারাই বড় হয়েছেন, সৃষ্টির সেবার মাধ্যমেই হয়েছেন। সেবার গুণটি আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়।

সেবা এমন একটি ইবাদত যার ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। শুধু মানুষকে খাওয়ালে-পরালে কিংবা আর্থিক সহযোগিতা করলেই সেবা হয় না। আপনি রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছেন, কেউ বোঝা একা উঠাতে পারছে না, আপনি তাকে সহযোগিতা করলেন- এটা অনেক বড় সেবা। তেমনিভাবে কোনো বৃদ্ধ লোক গাড়ির কারণে রাস্তা পার হতে সমস্যা হচ্ছে, তাকে রাস্তা পার করিয়ে দেন। কেউ বাসে উঠতে পারছে না, তাকে বাসে ওঠার ব্যবস্থা করে দিন। আপনি আগে বাসে উঠে সিটে বসলেন, এই মুহূর্তে কোনো মুরব্বি বা বৃদ্ধ ব্যক্তি চলে এলেন, নিজে উঠে তাকে জায়গা করে দিন। এমনিভাবে কোনো পিপাসার্তকে পানি পান করানো, কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া, পারস্পরিক বিবাদে লিপ্তদের মধ্যে সমঝোতা করা- এ সবই খেদমতে খালকের অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞাপন

সেবার ক্ষেত্রে ইসলাম ও বিধর্মীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একমাত্র মানবিকতার দিক বিবেচনা করে খেদমত করতে হবে। একজন বিধর্মীর সেবা করলে বা তার সঙ্গে কোনো সদাচরণ করলেও এর প্রতিদান মিলবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সারাবিশ্বের মানুষের জন্য রহমত হয়ে এসেছিলেন। একজন নগণ্য মানুষও যেকোনো সমস্যায় পড়ে তার কাছে গেলে তিনি তাকে কোনোদিন নিরাশ করেননি। তিনি নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানো, নিজে না পরে অন্যকে পরানো, নিজের আরাম-আয়েশ তুচ্ছ করে অন্যের অবস্থা পাল্টে দেওয়ার অসংখ্য নজির রেখে গেছেন

ঘোরতর শত্রুকেও মানবিক দিক থেকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখেননি মহানবী (সা.)। যারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার যাবতীয় কৌশল অবলম্বন করেছে, তাদেরও তিনি সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তার রহমত দ্বারা শুধু মানবজাতিই সিক্ত হয়নি, গোটা সৃষ্টিজগত পরিতৃপ্ত হয়েছে। জড়বস্তু ও তৃণলতা পর্যন্ত উপকৃত হয়েছে। তিনি মানুষ, পশুপাখি, বৃক্ষলতা সবকিছুকেই নিঃস্বার্থভাবে অন্তর থেকে ভালোবেসেছেন এবং সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রাসুল (সা.) নিজে যেমন সৃষ্টির সেবা করেছেন তেমনি তার উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এই কাজে। মুসলিম শরিফের হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তার কেয়ামতের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে কেউ আর্তপীড়িতের সেবা করতে যায়, সে আল্লাহর রহমতের সমুদ্রে প্রবেশ করে।’

নবীর সেই আদর্শ থেকে ছিটকে পড়ার কারণেই আজ মুসলমানদের এত দৈন্য দশা। মহৎ এ গুণটি মুসলিম জাতির মধ্যে আজ খুবই কম চোখে পড়ে। অথচ কোরআন-হাদিসে মানবসেবার প্রতি বারবার তাগিদ করা হয়েছে। সৃষ্টির সেবাকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সিঁড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর্তের সেবা, বিপদগ্রস্তের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, মানুষের সমস্যা-সংকটে পাশে দাঁড়ানো ঈমান ও ইসলামের দাবি। প্রত্যেক মুমিনের উচিত সেই দাবি পূরণ করা।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

জহির উদ্দিন বাবর ধর্ম ও জীবন ফিচার হজ আল্লাহকে পাওয়ার সিঁড়ি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর