Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিটার কানের ডিসেম্বর ডায়েরি, ১৯৭১

আন্দালিব রাশদী
৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৪

পিটার আর কান একজন প্রথিতযশা আমেরিকান সাংবাদিক। একাত্তরের ডিসেম্বরে তিনি ঢাকায়। তার ঢাকা ডায়েরি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয়।

ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান। শুক্রবার ৩ ডিসেম্বর

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের এলিভেটরে উঠতে যাচ্ছি, এমন সময় অন্য একজন রিপোর্টার দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি জানেন যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে? তখনো রাত ৮টা বাজেনি। এলিভেটরে নোটিশটির ওপর চোখ পড়ল : সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা ফুর্তির সময়, হ্যাপি আওয়ার্স, কেবল শুক্রবার বাদ। অন্যান্য সাংবাদিকের সঙ্গে সন্ধ্যার বাকি সময়টা কাটল দল বেঁধে শর্টওয়েভ রেডিও ঘিরে।

স্পষ্টত আজ অপরাহ্ণে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ লেগে গেছে। ভারত বলেছে পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করেছে, পাকিস্তান বলেছে ভারত। কে জানে? তবে দশ দিন ধরে ভারত পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সীমিত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। যখন যুদ্ধ লেগে যায় আর টেলিগ্রাফ অফিস বন্ধ থাকে, তখন আপনি কী আর করতে পারেন? পোকার খেলতে পারেন, ঘুমোতে যেতে পারেন।

শনিবার, ৪ ডিসেম্বর

দিনটা শুরু হলো আগেভাগে, ভোর ৩টার দিকে। এয়ারপোর্টের আকাশে পাকিস্তানি উড়োজাহাজ বিধ্বংসী কামানের গোলায় অদ্ভুত আতশবাজি চলছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ নাকি গোলন্দাজদের মহড়া। প্রশ্নটি তখনো অমীমাংসিত; কিন্তু সকাল নাগাদ ভারতীয় মিগ নিয়মিত রকেট আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। তখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ফটোগ্রাফার হলে ভাল ছিল। স্বচ্ছ নীল আকাশে মিগ ডাইভ দিচ্ছে। নিচ থেকে ছোড়া কামানের গোলার সাদা ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে। এমনকি হোটেলের ওপর আকাশে বেশ কটি ফলাফলশূন্য ডগফাইটও দেখা গেল। কয়েকটি ভারতীয় উড়োজাহাজ ভূপতিত হলো। কিন্তু সব পর্যবেক্ষকেরই নিজস্ব হিসাব রয়েছে। টেলিভিশনের একজন বলেছেন, ‘পার্ল হারবারের চেয়ে ভাল করছে’। ঘণ্টায় ঘণ্টায় সারাদিনই আকাশপথে আক্রমণ চলতে লাগল।

বিজ্ঞাপন

মাথায় তালপাতা লাগিয়ে অন্যান্য মিশ্রিত লতাগুল্মের ক্যামোফ্লেজ করে রাস্তায় বেরোনো কয়েকটি সামরিক যানবাহন ছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। রাস্তায় টহল দেওয়া পুলিশের মাথায়ও লতাপাতা বেঁধে রাখা হয়েছে। ঢাকার ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন নেপালের কনসাস অফিসে চলে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিরাজমান সংকট নিয়ে পর্যালোচনার জন্য ডিপ্লোমেটিক কোরের একটি সম্মেলন ডেকেছেন, কিন্তু সংকটের কারণেই এটি বাতিল করেছেন।

সোমবার, ৬ ডিসেম্বর

ঢাকা থেকে ৫০ মাইল পশ্চিমে সড়কপথে শিবালয়ের দিকে গেলাম। ধারণা হলো সরঞ্জামের অভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান হারাতে বাধ্য। রাস্তার পাশে স্বল্পসংখ্যক সৈন্যবাহী গাড়ি থেমে আছে। রেডিয়েটর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা। যখনই সেনা কনভয় থামে কৃষকরা আশপাশের জমি থেকে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যদের ট্রাক মানে মুক্তিবাহিনী অনুসন্ধান, গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিক জনগণ হত্যা করা। এখন আর এসব করার মতো সময় সেনাবাহিনীর নেই।

পরিহাস : যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বাঙালিরা এখন আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ

রাতেই ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফিরে আসি। হোটেলের সান্ধ্য আলফা : ঢাকা থেকে ১০ মিনিটের দূরত্ব পর্যন্ত এসে জাতিসংঘের উদ্ধারকারী উড়োজাহাজ ফিরে যাচ্ছে, কারণ ভারতীয় বিমানবাহিনী এয়ারপোর্টে আক্রমণ চালাচ্ছে। কাজেই একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা দরকার। বিকেলবেলা জেনারেল রাও ফরমান আলী খান একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পাকিস্তানি বাহিনী রসদ সরবরাহ সমস্যা মোকাবিলা করছে, সাময়িকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, কিছু সময়ের জন্য প্রতিরক্ষামূলক লড়াই করে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের জন্য সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা কৌশল হচ্ছে অগ্রসরমাণ ভারতীয় বাহিনীর কাছে কিছু জায়গা ছেড়ে দেওয়া। গত সপ্তাহে ফরমান আলীর বস জেনারেল নিয়াজি বলেছেন সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা হচ্ছে আক্রমণাত্মক হওয়া; কিন্তু সময় বদলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

আন্দালিব রাশদী পিটার কানের ডিসেম্বর ডায়েরি- ১৯৭১ ফিচার মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর