পারসোনাল ব্র্যান্ডিং: ব্যক্তিগত সাফল্যের নতুন মন্ত্র
৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৩৭
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং আপনার স্বপ্ন ছোঁয়ার চাবিকাঠি হতে পারে। চাকরি খোঁজা থেকে শুরু করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটি আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারে।
কখনো ভেবে দেখেছেন কি, একই সার্ভিস দিয়ে কেউ ৩০০ টাকা নিচ্ছে আবার কেউ ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে? কিন্তু কেন? এই দামের পার্থক্য কি শুধু সার্ভিসের কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে? অবশ্যই না। অন্য কোনো ব্যাপার এখানে আছে!
আবার দেখুন, আপনি যে সার্ভিসটা দিচ্ছেন, সেই সার্ভিসটা তো অনেকেই দিচ্ছে। তাহলে কাস্টমার কেন আপনার কাছ থেকেই সার্ভিসটা নিতে চাইবে?
এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কাস্টমারের এ ধরনের ডিসিশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে যে বিষয়গুলো তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং একটি পাওয়ার, একটি শিল্প, যা আপনার হাতে ক্ষমতা দেয় আপনার কাস্টমারের বিহেভিয়ারকে কন্ট্রোল করার। শুধু তাই নয়, সঠিকভাবে যদি নিজেকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এস্টাবলিশ করতে পারেন, তাহলে আপনার বিজনেসের গ্রোথ হতে পারে ১০ গুণ পর্যন্ত!
বেশি দূরে নয়, সোস্যাল মিডিয়ার দিকে তাকালেই ব্যারিস্টার সুমন, আয়মান সাদিক, মুনজেরিন শাহীদ, সোলায়মান সুখন কিংবা খালিদ ফারহানের মতো হাজারটা উদাহরণ খুঁজে পাবেন, যারা সফলভাবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের বিজনেসে গ্রোথ এনেছেন প্রায় ১০ গুণ কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। আপনার হয়তো এখনই জানতে ইচ্ছা করছে, আচ্ছা পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ব্যাপারটা আসলে কী?
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কী?
পারসোনাল ব্যান্ডিং মূলত নিজেকে একজন গাইড হিসেবে উপস্থাপন করা অথবা কোনো একটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধের একটি অনন্য মিশ্রণ। এর মানে এই নয় যে আপনাকে অনেক জ্ঞানী হতে হবে, আপনার বড় বড় ডিগ্রি থাকতে হবে। আপনি যতটুকু জানেন তা দিয়েই পারসোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করা সম্ভব।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনি যেকোনো স্তরের জন্যই করতে পারেন। যেমন— দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য একজন গাইড হতে পারে। আবার পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন, এমন যে কেউ কিন্তু তার ওই খাতের চাকরিতে যারা নতুন তাদের জন্য হয়ে উঠতে পারেন অনুসরণীয়। অনেক সময় মনে হতে পারে, এগুলো তো খুব মামুলি কথা, সবাই জানে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়গুলো তেমন নয়। বহু মানুষ খুব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে স্ট্রাগল করছেন, অভিজ্ঞ যে কেউ যেসব বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন।
আমি হ্যাপিনেস ও পারসোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে কথা বলি। সোস্যাল মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করি, সুযোগ পেলে ব্লগও লিখি এবং ট্রেনিং সেশন করি। আমি খুব কাছ থেকে দেখে বলছি, সহজ কথা ও প্রো-লেভেল কথা বলে তেমন কিছু হয় না। তবে বেসিক বা ফান্ডামেন্টাল লেভেল এবং অ্যাডভান্স লেভেল— আমরা কেবল এই দুইটা পার্থক্য করতে পারি।
আমি পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের অ্যাডভান্স লেভেল নিয়ে কথা বলি না। আমি কেবল মানুষকে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ শুরু করতে উৎসাহিত করি। কেন পারসোনাল ব্র্যান্ড দাঁড় করানো উচিত, কীভাবে এটা করতে পারেন, ঠিক কী কী বাধা আসতে পারে, কী ভুল মানুষ সাধারণত করে, পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের প্ল্যানিং কীভাবে করবেন— এসব নিয়ে কথা বলি। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই অডিয়েন্সটাই এখন বেশি।
বেশির ভাগ মানুষই যখন পাবলিকলি কিছু নিয়ে কথা বলেন, তিনি নিজে যা জানেন, তার চেয়েও বেশি কিছু বলার চেষ্টা করেন। আমি এটার পক্ষে না। আপনি যা জানেন, যা আপনি করেন, তার মধ্যে থাকলেই আপনার অথেনটিক অডিয়েন্স তৈরি হবে। অডিয়েন্সের মধ্যে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
একটি কথা মনে রাখবেন, পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কাজগুলো মার্কেটিংয়ের কাজ নয়। এটি কেবল নিজেকে এক্সপোজ করা, নিজেকে প্রকাশ করা, নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এবং নিজের প্রতি অন্যদের বিশ্বাস বাড়াতে কাজ করা। আমি এটাও মনে করি, আপনার টার্গেট অনুযায়ী অডিয়েন্স তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কিছু বিক্রির অফার না করাও ভালো।
বিজনেস লিডার বা ব্যবসায়িক নেতারা প্রথম দর্শনেই ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন কীভাবে— তা নিয়ে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন হার্ভার্ড বিজনেস অধ্যাপক এমি ক্যাডি। তার সমগ্র গবেষণাকে মানুষের অবচেতনে হওয়া দুটি প্রশ্নের আলোকে সাজিয়েছিলেন ক্যাডি— ‘আমি কি এই ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে পারি?’ এবং ‘আমি কি এই ব্যক্তিকে সম্মান করতে পারি?’ ক্যাডি তার ‘প্রেজেন্স’ বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ ভরসা ও বিশ্বাসকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেবল বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই একজন আরেকজন সম্পর্কে আরও জানার ব্যাপারে বিবেচনা করতে শুরু করে।
যখন আমরা এমপ্যাথি বা সহানুভূতি প্রকাশ করি তখন আমরা আমাদের অডিয়েন্স অথবা গ্রাহকদের ক্যাডির প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করি, ‘আমি কি এই ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে পারি?’ আমাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রদর্শন গ্রাহকদের দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়তা করে, ‘আমি কি এই ব্যক্তিকে সম্মান করতে পারি?’
এই এক এবং দুই বৈশিষ্ট্য যেমন পার্টিতে অন্য মানুষের কাছে প্রথম দর্শনেই আমাদের ব্যক্তিত্বের দুর্দান্ত ছাপ রাখতে পারে, সেইসঙ্গে সম্ভাব্য অডিয়েন্স বা গ্রাহকদের মনেও আমাদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে প্রথম দর্শনেই ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
একবার আমরা সহানুভূতি ও পারদর্শিতার প্রকাশ করলে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডকে লোকেদের সন্ধান করতে থাকা গাইড হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হতে পারি। ঠিক যেন আমরা তাদের বলছি— এই দেখুন, প্রথমে এই পাথরে পা দিন, দেখেছেন কত সহজ। তারপর এখানে পা দিন, তারপর এখানে, তারপর আপনি অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাবেন এবং আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এভাবে লোকেদের ভরসা আসে। এভাবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের ভরসা জিতলেই সাকসেসফুলি দাঁড় হয় পারসোনাল ব্র্যান্ড। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ যখন স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন, দেশের মানুষ তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। জনতা একটি পথের দিশা পায়। তারা জানতে পারে, তারা এখন কী করবে।
একটি গুড পারসোনাল ব্র্যান্ড আসলে একজন গাইড। প্রতিটি মানুষ অবচেতন মনে একজন গাইড বা একজন মেন্টরের সন্ধান করতে থাকেন, যারা চায় আপনি তাদের একটা অন্ধকার রাস্তা বা একটা কঠিন সময় পার করতে সাহায্য করবেন। এ ব্যাপারে আপনি যতটা মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারলেন আপনি তত বড় পারসোনাল ব্র্যান্ডের অধিকারী হবেন। আমার মনে হয় আপনাকে সহজ করে বুঝিয়ে বলতে পেরেছি। তারপরও আরেকবার রিচেক করি।
ব্যারিস্টার সুমন, আয়মান সাদিক, মুনজেরিন শাহীদ, সোলায়মান সুখন কিংবা খালিদ ফারহান— এদের কাউকে না কাউকে আপনি হয়তো চেনেন। খুব সহজ করে বলতে চাই, এরা প্রত্যেকেই তার টার্গেট অডিয়েন্সের ভরসা জিতেছে, বিশ্বাস অর্জন করেছে এবং এর ফলে অডিয়েন্স তাদের প্রত্যেককেই নিজেদের গাইড হিসেবে মেনে নিয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা একেকজন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব
১. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনাকে আলাদা করে: বাজারে অসংখ্য মানুষ আছে, যারা আপনার মতো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ধারণ করেন। পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনাকে তাদের থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। আমার বিচারে এটা হওয়া উচিত প্রথম লক্ষ্য।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়: একটি শক্তিশালী পারসোনাল ব্র্যান্ড আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করে।
একটু মনে করে দেখুন তো, আপনার ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যে ইনফ্লুয়েন্সারের কথা আপনি শোনেন, যার কথা আপনি মেনে চলেন, আপনি তাকে বিশ্বাস করেন বলেই তো করেন, তাই না?
কখনো যদি আপনার সঙ্গে তার দেখা হয়, আপনি এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনিও আপনাকে চেনেন। অথচ এ ক্ষেত্রে হয় উলটোটা। আপনি কেবল তাকে চেনেন, তিনি আপনাকে চেনেন না। কিন্তু কথা বলার সময় আপনার মাথায় কি এই বিষয়টা থাকে? নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন তো।
৩. নতুন সুযোগ তৈরি করে: পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনাকে নতুন চাকরির সুযোগ, ক্লায়েন্ট ও সহযোগিতা পেতে সাহায্য করে। দোকানে গিয়ে মানুষ সেটাই আগে কিনে নেন, যেটা শেলফে আগে চোখে পড়ে। এখানেও ঠিক একই পদ্ধতি কাজ করে। মানুষ যখন তার প্রতিষ্ঠানে এক্সপার্ট কাউকে খোঁজেন, তখন যার পারসোনাল ব্র্যান্ড এক্সপোজার ভালো, তার কাছেই অপরচুনিটি নিয়ে আসেন।
৪. ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করে: পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনাকে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ ও সেগুলো অর্জনে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। একইভাবে আপনি যখন মানুষকে সচেতন করতে যাবেন তখন কোনো না কোনোভাবে নিজের সবকিছুর ব্যাপারেও আপনি গভীরভাবে সচেতন হয়ে উঠবেন। আর এ বিষয়টি আপনাকে আরও উন্নত জীবন পেতে সাহায্য করে। এ জন্যই প্রবাদে বলে, বিদ্যাধন দান বাড়ে।
যেভাবে শুরু করবেন পারসোনাল ব্র্যান্ডিং
১. নিজেকে চিহ্নিত করুন: আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হোন, নিজেকে চিহ্নিত করতে পারবেন। আর এসবের মধ্যে থেকে আপনি বেছে নিন আপনার বিষয়বস্তু। অবশ্যই মাথায় রাখবেন, যেন ভবিষ্যতে আপনাকে ভালো বিজনেস অথবা জব অপরচুনিটি এনে দিতে পারে সেই বিষয়টা। কারণ আপনি তো সারা জীবন এই কাজটি চ্যারিটি হিসেবে করতে পারবেন না। আপনার উদ্দেশ্য অবশ্য সেটা হলে আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: আপনি আপনার ব্র্যান্ডিং দিয়ে কী অর্জন করতে চান তা নির্ধারণ করুন। এই লক্ষ্য নির্ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কনটেন্টের ধরন, টার্গেট অডিয়েন্স সব নির্ধারণ হয়ে যাবে। অনেক ইনফ্লুয়েন্সারকে আমি দেখেছি মাঝপথে হারিয়ে যেতে। কারণ একটাই— তারা তাদের লক্ষ্য ঠিক করেনি। ফলে তারা একটি ভুল অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে গেছে, যেটা তার পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কোনো কাজে লাগেনি।
৩. নিজের হিরো ইন্ট্রোডাকশন তৈরি করুন: নিজের একটি আকর্ষণীয় হিরো ইন্ট্রোডাকশন তৈরি করুন। আপনার হিরো ইন্ট্রোডাকশন বলতে বোঝাতে চাইছি সেই কয়েকটি কথা যা আপনি আপনার সম্পর্কে আপনার অডিয়েন্সের উদ্দেশ্যে বলবেন। কথা বলার এই শুরুটা নাম আমি দিয়েছি ‘হিরো ইনইন্ট্রোডাকশন’। অডিয়েন্সকে রিকল করার জন্য দারুণভাবে এটি কাজ করে।
‘হাই! আমি জোবায়ের রুবেল। ফাদার অব আয়মান সুখ, আযান সুখ। হাসব্যান্ড অব আ সুপারওম্যান। বেস্টসেলার অথর, হ্যাপিনেস কোচ, বিজনেস স্টোরিটেলার। ফাউন্ডার— স্টোরি টেলার ও সুখের স্কুল। আমি আমার জীবনের ছন্দ খুঁজে পেয়েছি। আপনার জীবনের ছন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে চাই। এটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য।’
এভাবে আমি ২০ সেকেন্ডের একটি হিরো ইন্ট্রোডাকশনে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। এই হিরো ইন্ট্রোডাকশন দেওয়ার পর থেকে লোকে আমাকে মনে রাখতে শুরু করেছে, বিশেষ করে নারীরা। বিজনেসে যেমন স্লোগান থাকে, তেমনি পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আমি মনে করি একটা হিরো ইন্ট্রোডাকশন থাকা উচিত। আপনিও আপনার অডিয়েন্স মাথায় রেখে নিজের জন্য একটি হিরো ইন্ট্রোডাকশন তৈরি করে নিন।
৪. কনটেন্ট তৈরি করুন: আপনার ব্র্যান্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কনটেন্ট আপনাকে আপনার অডিয়েন্সের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে এবং আপনার প্রতি আগ্রহী করতে সাহায্য করবে।
কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করবেন
১. ব্লগ পোস্ট: আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্লগ পোস্ট লিখুন। অবশ্যই আপনার নিজের নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন।
২. নিবন্ধ: আপনার ক্ষেত্রের সম্পর্কে নিবন্ধ লিখুন এবং বিভিন্ন নিউজপেপার ও ওয়েবসাইটে গেস্ট পোস্ট হিসেবে প্রকাশ করুন।
৩. ই-বুক: আপনার বিশেষজ্ঞতার ওপর একটি ই-বুক লিখুন এবং বিনামূল্যে অথবা অর্থের বিনিময়ে পড়তে দিন।
৪. ভিডিও: আপনার কাজের ওপর ভিডিও তৈরি করুন। এসব ভিডিও ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকে আপলোড করুন।
৫. পডকাস্ট: আপনার ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পডকাস্ট তৈরি করুন।
৬. ইনফোগ্রাফ: আপনার বিষয় নিয়ে আকর্ষণীয় ইনফোগ্রাফ তৈরি করুন।
৭. সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট: ফেসবুক, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত আকর্ষণীয় পোস্ট করুন।
ওপরে উল্লেখিত সবগুলো ক্ষেত্রেই আপনাকে কন্ট্রোল তৈরি করতে হবে, এমনটা নয়। আপনি যেকোনো দুটি বিষয়কেও বেছে নিতে পারেন। কনটেন্ট তৈরির সময় অবশ্যই আপনার অডিয়েন্সের চাহিদা বুঝে সে অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করুন।
আরেকটি বিষয় অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে— পারসোনাল ব্র্যান্ডিং রাাতারাতি তৈরি হয় না। এর জন্য সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তাই লেগে থাকতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে, ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না।
যেসব ভুল থেকে আপনার শিক্ষা নেওয়া উচিত
অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিও পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন, যা তাদের সাফল্যের পথে বাধা তৈরি করতে পারে। এই ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সেগুলো এড়িয়ে চলা আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টাকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
কনসিসটেন্সি, কোয়ান্টিটি ও কোয়ালিটির দিকে মনোযোগী হতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করার সময় কোয়ালিটির দিকে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করেন। ঠিক এ কারণেই বহু মানুষ শুরুই করতে পারে না। তাই আপনার প্রথম নজর দেওয়া উচিত কনসিসটেন্সির দিকে। ভালো হোক, মন্দ হোক, সহজ বা কঠিন হোক— আপনার প্রথম কাজ হবে নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করা। শুরুতে কাছের পরিচিতজনেরা আপনাকে অপমান করে অনেক কথা বলতে পারে, সেগুলো সহ্য করতে হবে। এরপর নজর দেওয়া উচিত কোয়ান্টিটির দিকে। কতটা কনটেন্ট আপনি দিনে বা সাপ্তাহে তৈরি করতে পারেন সেটি হিসাব করে নিন। সবশেষে আপনি নজর দেবেন কোয়ালিটির দিকে। এই ফর্মুলা না মানলে আপনি শুরু করতে পারবেন না, শুরু করলেও বেশি দিন ধরে রাখতে পারবেন না।
আমার পরিচিত অনেক অভিজ্ঞ মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, যারা পারসোনাল ব্রান্ড তৈরির ক্ষেত্রে মাঝপথে বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এর পেছনের কারণ ছিল কোয়ালিটি, কোয়ালিটি ও কনসিসটেন্সি। শুরুতে কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপনাকে এই কথাটা মানতে হবে। একদিনে কোয়ালিটি আসবে না, এটা মানতে হবে। কিন্তু শুরুতে বারবার একই কাজ করে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন সেটায় অভ্যস্ত হবেন, তখন এই কাজের পরিমাণ কতটা বাড়াতে পারেন সেটার দিকে মনোযোগ দিন। তারপর ধীরে ধীরে আপনার কোয়ালিটি এমনিই তৈরি হবে। মনে রাখবেন কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি ও কনসিসটেন্সি নয়; ধারাক্রমটা হবে কনসিসটেন্সি, কোয়ান্টিটি ও কোয়ালিটি। এর ব্যতিক্রম করার চেষ্টা করলে আপনি মার্কেট থেকে হারিয়ে যাবেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আপনি আপনার জীবনের যে অপরচুনিটিগুলো পেতে চাইছেন তার সবগুলো পাওয়া সম্ভব আপনার পারসোনাল ব্যান্ডিং তৈরির মাধ্যমে। আর এ জন্য আপনাকে শুরু করতে হবে কনটেন্ট তৈরির মধ্য দিয়ে। বয়স, স্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা কোনো ব্যাপারই নয়। আশা করি, এ আলোচনা আপনাকে নিজের মতো করে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।
লেখক: পারসোনাল ব্র্যান্ড বিল্ডিং প্রফেশনাল; সিইও, স্টোরিটেলার
[email protected]
সারাবাংলা/টিআর
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদুল ফিতর ২০২৪ জোবায়ের রুবেল পারসোনাল ব্র্যান্ডিং: ব্যক্তিগত সাফল্যের নতুন মন্ত্র ফিচার