ভোটে হেরেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন যারা
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৫ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:১৪
যুক্তরাষ্ট্রে আজকের এই বহুল আলোচিত নির্বাচনে আগে দেশটির ইতিহাসে ৫৮ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ৫৮টি নির্বাচনের মধ্যে ৫৩ বারই নির্বাচিত প্রেসিডেন্টরা জনগণের ভোটসহ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের অত্যাবশ্যকীয় ইলেকটোরাল কলেজে জিতে দেশটির মসনদে বসেছিলেন। কেবল পাঁচবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে। দেশটির পাঁচজন প্রেসিডেন্ট রয়েছেন যারা জনগণের ভোটে না জিতেও ইলেকটোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে পৌঁছে গেছেন হোয়াইট হাউসে। অপরদিকে এমন পাঁচজন দুর্ভাগা রয়েছেন যারা জনগণের তরফে বেশি ভোট পেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। এই পাঁচজনের মধ্যে দুইজন দুর্ভাগা আবার চলতি একবিংশ শতাব্দীর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন।
হিস্ট্রি ডট কমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সাধারণত প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়লাভ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটারের ভোট (পপুলার ভোট) পাওয়ার পরও অনেক সময় বিজয়ী নাও হতে পারেন। কারণ দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ একটি ব্যবস্থায়। এক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
কেমন এই বিশেষ নিয়ম? যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ হলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। ধরুন, একটি অঙ্গরাজ্যে ৮টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। ইলেকটোরাল কলেজের ‘উইনারস টেইকস অল’ নীতি অনুযায়ী যে ওই অঙ্গরাজ্যটিতে বিজয়ী হবে তিনি ওই ৮টি ইলেকটোরাল ভোটের সবকটি নিয়ে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। মাইন ও নেব্রাসকা- এই দুটি অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বিজয়ী প্রার্থীর প্রার্থীর রানিং মেট হবেন দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
সাধারণ ভোটারদের ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যার মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ ডব্লিউ বুশও রয়েছেন। তবে জনগণের ভোটে হেরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮২৪ সালে। সে বছরটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর। স্যার এন্ড্রু জ্যাকসনকে হারিয়ে জন কুইন্সি অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মজার বিষয় হচ্ছে জন কুইন্সি অ্যাডামস যে মোট ভোটে স্যার এন্ড্রু জ্যাকসন থেকে পিছিয়ে ছিলেন- সেটি দেশটির নির্বাচনের দায়িত্বরতরাও প্রথমদিকে ধরতে পারেননি। পরে নানা হট্টগোলের শেষে জন কুইন্সি অ্যাডামসকে যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়।
এরপরের ঘটনাটি ঘটে ১৮৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে। সেবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রার্থী ছিলেন রাদারফোর্ড বি হায়েস আর ডেমোক্রেটদের প্রার্থী ছিল স্যামুয়েল টিলডেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সেবার ১৮৫ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাদারফোর্ড বি হায়েস। ডেমোক্রেটদের প্রার্থী স্যামুয়েল টিলডেন পেয়েছিলেন ১৮৪টি ইলেকটোরাল ভোট। রাদারফোর্ড বি হায়েসকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তখনও কিছু ভোট গণনা বাকি ছিল। সেই ভোটগুলো গণনার পর দেখা যায়, রাদারফোর্ডের তুলনায় স্যামুয়েল টিলডেন বেশি ভোট পেয়েছেন।
পরের ঘটনাটি ১৮৮৮ সালের। সেবার ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লেভল্যান্ডের প্রতিদ্বন্দী ছিলেন রিপাবলিকানদের বেঞ্জামিন হ্যারিসন। সেবার প্রেসিডেন্ট ক্লেভল্যান্ড প্রায় ৯০ হাজার ভোটে এগিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে ব্যাপক ব্যাবধানে হেরে গিয়েছিলেন। দেশটির সুইং স্টেটগুলোর ইলেকটোরাল ভোটের হিসেবে ক্লেভল্যান্ড পেয়েছিলেন ১৬৮ ইলেকটোরাল ভোট। অপরদিকে সর্বোচ্চ ২৩৩ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন।
বেঞ্জামিন হ্যারিসনের পরে ভোটে হেরেও প্রেসিডেন্ট হবার ঘটনা দেখা যায়নি প্রায় এক শতাব্দীর বেশি সময়। এরপর এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে আবার অষ্টাদশ শতকের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ (জুনিয়র) ও ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছিল মার্কিন জনগণ। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট আল গোর পপুলার ভোটে জিতলেও ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল ফ্লোরিডা রাজ্যে। সেখানকার স্থানীয় নির্বাচনে মোট ভোটের ১ শতাংশেরও কম ব্যবধানে আল গোরকে হারিয়েছিলেন বুশ। সংখ্যার হিসাবে ব্যবধান ছিল ৫৩৭ ভোট। কিন্তু শতাংশের হিসাবে তা ছিল ১-এরও কম।
বুশ জুনিয়র ও আল গোরের পর ভোটে হেরেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির আরও একবার দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। আর ২০১৬ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে হেরেও যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি আর কেউ নন এবারের ৫৯তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেবার নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ৩০ লাখের বেশি ব্যবধানে ভোটে জিতলেও ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে হোয়াইট হাউসে বসেছিলেন এবারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সারাবাংলা/এসবিডিই