পুরান ঢাকায় বাহারি রুটির পসরা
২১ এপ্রিল ২০১৯ ২০:০৪
ঢাকা: রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টা। সরেজমিনে গেন্ডারিয়ার লোহারপুল এলাকা। রাস্তার পাশে পসরা বসিয়েছেন আলতাফ মিয়া। তার কাছে বেশ কয়েক প্রকার রুটি দেখা যায়। তিনি নিজে এসব রুটি তৈরি না করলেও প্রতিবছরের মতো এবারও বেকারি থেকে রুটি এনে দোকান দিয়েছেন। মাছ, কুমির, হাঁসের আদলে বেশ কয়েকপ্রকার রুটি রয়েছে তার কাছে। আজ শবে বরাত তা যেন পুরান ঢাকার মোড়ে মোড়ে পসরা সাজিয়ে বসানো বরাতি রুটির দোকানগুলো বলে দিচ্ছে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যে মিশে আছে বিশেষ এই রুটি। ছোট-বড় বয়স নির্বিশেষে এ বরাতি রুটি খেয়ে পুরান ঢাকার মুসল্লিরা শবে বরাত পালন করে থাকেন। এই রুটি সবার মাঝে যেন বাড়তি আনন্দ যোগ করে।
বিশেষ করে ছোটরা এসব বরাতি রুটির মধ্যে কুমির, কচ্ছপ, মাছ ইত্যাদির আদলে তৈরি রুটিগুলো বেশি পছন্দ করে থাকে।
রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর লালবাগ, চকবাজার, সাতরওজা, বংশাল, রায় সাহেববাজার মোড়, নারিন্দা, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, ইসলামপুর, নাজিম উদ্দিন রোড ও নবাবপুর বাজার ঘুরে বরাতি রুটির বাহারি সব দোকান দেখতে পাওয়া যায়।
গেণ্ডারিয়ার দোকানি আলতাফ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব রুটি তৈরিতে ময়দার সঙ্গে দুধ, ডিম, ঘি, কিসমিস, সাদা তিল ও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়েছে। রুটির দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা।’
পুরান ঢাকার অন্য এলাকা নারিন্দায় দোকান বসিয়েছেন সুরুজ মিয়া। তার কাছে ১০ প্রকারের বাহারি রুটি রয় দিয়ে বসেছেন সুরুজ মিয়া। তার কাছে ১০ প্রকারের বাহারি রুটি রয়েছে। সবচেয়ে বড় রুটির ওজন ১০ কেজি। দাম এক হাজার ৮০০ টাকা। দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে রুটি কিনতে লোকজন আসেন। সকালের দিকে বেচাকেনা কম হলেও বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে তার দোকানে লোকজনের ভিড় বাড়ে।
এমনকি শেষ সময়ে এসে অনেকেই রুটি পান না বলে জানান তিনি।
পুরান ঢাকার বাসিন্দারা শবে বরাতকে ধর্মীয় বিশেষ ঐতিহ্য মনে করেন। বংশাল নাজিরা বাজার লেনের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘শত শত বছর থেকে এই প্রথা চলে আসছে। বাপ-দাদারা পালন করে গেছে আমরাও করছি। পুরান ঢাকায় এই দিনটি উৎসবে পরিণত হয়। সবাই আনন্দ করে। রাতভর ইবাদত করে। হালুয়া রুটি, পায়েস, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, মাংস, পোলাওসহ নানান পদের খাবার তৈরি করা হয়। এক বাড়ির খাবার আরেক বাড়িতে পাঠানো হয়। খুবই মজা লাগে।’
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ‘ঢাকাই খাবার’ বই থেকে জানা যায়, বাংলার নবাবেরা বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে শবে বরাতের দিনটি পালন করতেন। এ উপলক্ষে ঘরে ও আশেপাশের এলাকায় আলোকসজ্জা করা হতো। শবে বরাতে পুরুষেরা মসজিদে আর নারীরা ঘরে নফল নামাজ আদায় করতেন। শবে বরাতে ভোজের আয়োজন থাকত। বিকেল থেকেই দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হতো।
বই থেকে আরও জানা যায়, সামর্থ্য অনুযায়ী আটা বা ময়দার রুটি, দোস্তি রুটি, রুমালি রুটি তৈরি করা হতো। অনেকে অবশ্য শখ করে চালের রুটিও বানাতেন। পাশাপাশি ঘরে তৈরি হতো বুটের ডাল, সুজি বা মৌসুমি গাজরের হালুয়া।
সারাবাংলা/ইউজে/একে