Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভূমিতেই আটকে গেছে সড়ক, ৯ বছরে নির্মাণ ১০ শতাংশ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৫২

ঢাকা: ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় ৯ বছরে মূল সড়কের নির্মাণ কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ। গত মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত খরচ হয়েছে ৯৭ কোটি ২৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দেওয়ায় এক্ষেত্রে ব্যয় বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে এই অধিগ্রহণসহ ধরলে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ। ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন ধীর গতি।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় দেড় বছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু এক্ষেত্রে ৬টি শর্তে অনুমোদনের সুপারিশ দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোরেশেদ জামান সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রতিপালন করা না হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দেওয়া হবে। এরপরও যদি কিছু না হয় তাহলে মন্ত্রী পরিষদকে অবহিত করা হবে। শুধু সুপারিশ দিয়ে শেষ নয়, বিষয়টি সব সময় মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৯৮ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পরবর্তীতে বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ১২৬ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ফের ১৩২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এদিকে অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। দ্বিতীয়বার বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই তৃতীয়বার ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এবার ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই আবারও এক বছর ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বারবার মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পভুক্ত ৭ দশমিক ৩০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৫ দশমিক ১০২ একর ভূমি প্রথমে হস্তান্তর করা হয়। অবশিষ্ট ভূমি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যথা-খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির অধিগ্রহণ করা ভূমি। এই জমির মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ১ দশমিক ১৭৫ একর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের শূন্য দশমিক ৭ হাজার ৫২০ একর ভূমির মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ হাজার ৩০৫ একর ভূমি হস্তান্তর করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে দেরি হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বর্তমানে সড়কের রাইট অব ওয়ে বরাবর ভূমির দখল পাওয়া গেছে। অধিগ্রহণ করা ভূমির উপর স্থাপনা নিলামের ৬টি প্যাকেজের মধ্যে ৫টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট একটি প্যাকেজের স্থাপনা অপসারণ কাজ স্থানীয় জনসাধারণের আপত্তির কারণে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

সময় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য ই-জিপিতে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রটি অনুমোদনের জন্য সিসিজিপিতে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করা হয়। গত ১২ জানুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ইউটিলিটি শিফটিং, স্থাপনা অপসারণ এবং বিদ্যমান সড়কটি শহরের ব্যস্ততম রাস্তা হওয়ায় ট্রাফিক চলাচল ব্যবস্থা চালু রেখে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রিজ, কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর ৬ মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি প্রয়োজন।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আইএমইডির দেওয়া ৬ শর্ত হলো— বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম সমাপ্ত করতে কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক প্রকল্পের যাবতীয় কাজ আবশ্যিকভাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তীতে এ প্রকল্পের আর মেয়াদবৃদ্ধি করা হবে না। এছাড়া প্রকল্পের অবশিষ্ট স্থাপনা অপসারণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম দ্রুত করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। প্রকল্পের পূর্ত কাজ নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করতে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি, মালামাল ও লোকবল সরবরাহসহ যাবতীয় মোবিলাইজেশন কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

শর্তের মধ্যে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পভুক্ত সড়ক নির্মাণ কাজের বিভিন্ন লেয়ারগুলোর যথাযথ কম্প্যাকশন নিশ্চিত করার আগে বিটুমিনের কাজ শুরু করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে দেবে যেতে না পারে। নির্মাণাধীন সেতু বা কালভার্টেও ডেক স্ল্যাব ও এপ্রোচ সড়কের মধ্যে যেন কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ নেবে এবং সুপারিশ এক হতে ৬ এর আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইএমইডিকে অবহিত করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের সকল অঙ্গের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। মেয়াদ আর কোনো অবস্থাতেই বৃদ্ধি করা হবে না। প্রকল্পের কাজ নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ঠিকাদার নির্মাণকাজ সম্পাদনে ব্যর্থ হলে চুক্তির সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ এবং পিপিআর অনুযায়ী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর