‘বাড়তে পারে করোনা’— মোকাবিলায় চার সুপারিশ কারিগরি কমিটির
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:২৮
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে চীনে। সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কোভিড-১৯—এর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন উপধরণ ‘বিএফ.৭’। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় শক্তিশালী এই উপধরণের সংক্রমণ ছড়ানোর মাত্রা অনেক বেশি হলেও এটি শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেও পাওয়া গেছে এই উপধরণে সংক্রমিত রোগী। বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশে বাড়তে পারে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা— এমন আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কোভিড-১৯ সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় চার দফা সুপারিশ জানিয়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয়— শিরোনামে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
তিনি বলেন, ‘চীন-ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছে। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে গতকাল জাতীয় কারিগরি কমিটির বৈঠক ছিল। কমিটি চারটি বিষয়ে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে।’
অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটির ভয়াবহতা অনেক বেশি। তাই যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদেরকে দ্রুত নিয়ে নেওয়ার জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সেকেন্ড বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির বিষয়েও বলেছে কমিটি। যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, গর্ভবতী নারী ও ষাট বছরের বেশি বয়সী যারা আছেন, তাদেরকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় সুপারিশ হলো যাদের অন্যান্য রোগ থাকার ইতিহাস বা কো-মর্বিডিটি আছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রটেকটিভ কেয়ার যেমন- মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে কারিগরি কমিটি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারিগরি কমিটির সভায় তৃতীয়ত যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা হলো বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সকল পোর্টগুলোতে পরীক্ষা জোরদার করা। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন বন্দর এলাকার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে তাদেরকে আইসোলেট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ডা. কবির বলেন, ‘যেসব দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানা যাচ্ছে সেসব সন্দেহভাজন দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যেই আমরা আইইডিসিআরকে নির্দেশনা দিয়েছি, যদিও দেশে বর্তমানে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি হচ্ছে না, তারপরও আমরা বলেছি যাদেরই সংক্রমণ পজেটিভ আসবে, তাদের যেন জিনোম সিকোয়েন্স করে সংক্রমণের নতুন ভেরিয়েন্ট আছে কিনা সেটি যেন পরীক্ষা করা হয়।’
ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘কারিগরি কমিটির সভায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বুস্টার ডোজে ফাইজারের যে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেটির মেয়াদ ফাইজার কোম্পানিই এক্সটেনশন করেছে। এ বিষয়ে ডিজিডিএ এপ্রোভাল দিয়েছে, নাইট্যাগও বলেছে সেই ভ্যাকসিনটি দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে এটি নিয়ে যেন কোন কনফিউশান তৈরি না হয়, সে ব্যাপারেও কারিগরি কমিটি নির্দেশনা দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘কোভিড সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদেরকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে সতর্কতা নেই বললে চলে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ একদম স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ভুলে গেছে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে তাই আবারও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। আবারও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বুস্টার ডোজ যারা নেয়নি, তাদেরকে দ্রুত সেটি নিয়ে নিতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, ‘ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে কনফিউশানের কারণ নেই। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শেই ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে কোভিডের মহামারি বেড়ে গেছে। চীনে অসংখ্য মানুষ আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ভয় বেশি। যাদের অন্যান্য রোগের ইতিহাস বা কো-মর্বিডিটি আছে, তারাও কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন। তাই সবাইকে ভ্যাকসিন নিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।’
সংক্রমণ আবারও বাড়লে স্বাস্থ্য অধিদফতর সতর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসিসহ কোভিড হাসপাতাল যেগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। আইসোলেশন ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। অধিদফতর সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক এবং প্রস্তুত আছে।’
সারাবাংলা/এসবি/ইআ