বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে ভারতীয় বাঙালিরা
২ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫৩
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় বাঙালিরা। আগামী বছর ২০২০ সালে লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্দশ বঙ্গ সম্মেলনে এ আয়োজন করছে বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ। বহির্বিশ্বের অন্যতম বড় এই বাংলা উৎসবে নয় হাজারের বেশি বাঙালি অংশ নেবেন। সম্প্রতি নিউইয়র্কে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বঙ্গ সম্মেলন নিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী ‘কিক-অফ বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠান। এতে দুই বাংলা তথা বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীদের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তরা বলেন, বঙ্গ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় মঞ্চটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা হচ্ছে। এই মঞ্চে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করা হবে। নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় ও কথামালায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ এ পরিবেশনায় অংশ নেবে দেশ ও প্রবাসের শতাধিক শিল্পী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের আমন্ত্রণের চিঠি তুলে দেওয়া হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের হাতে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি সঙ্গীতশিল্পী অনিন্দিতা কাজী, জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলসের হামিন আহমেদ, অভিনয়শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘের উপদেষ্টা প্রবীর রায়, সভাপতি দিলীপ চক্রবর্তী, বঙ্গ সম্মেলন লাস ভেগাস ২০২০-এর আহ্বায়ক মিলন আওন ও বঙ্গ সম্মেলনের সহযোগী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বায়েস্কোপ ফিল্মসের সিইও ডা. রাজ হামীদ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, মনজুর আহমদ, নিনি ওয়াহেদ, হাসান ফেরদৌস, অভিনয়শিল্পী রেখা আহমেদ, সঙ্গীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, ব্যান্ড দল মাইলসের কি-বোর্ডিস্ট মানাম আহমেদ, অভিনয়শিল্পী টনি ডায়েস, মোজেজা আশরাফ মোনালিসা, নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস, আবৃত্তিশিল্পী শাহীন তরফদার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেক-আপ আর্টিস ম. ম. জসীম, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্রেস ডিপার্টমেন্টের সাবেক প্রধান মেরীনা ইয়াসমীন, ইত্তেফাকের বিনোদন সাংবাদিক ও সঙ্গীত শিল্পী তানভীর তারেক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী।
নিউইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফরমিং আর্টস-বিপার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এ্যানি ফেরদৌস ও জাফর ফেরদৌস, বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস-বাফার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমীন, অনুপ কুমার দাশ, উদীচীর সহ-সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, আনন্দধ্বনির সভাপতি ডা. প্রতাপ দাস ও সাধারণ সম্পাদক অর্ঘ সারথী সিকদার, শিল্পাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ড. নজরুল ইসলাম।
আয়োজকরা জানান, বঙ্গ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও সেতার বাদক পন্ডিত রবি শংকর ও সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখপোধ্যায়ের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। প্রতি বছর বঙ্গ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বেশকিছু সংখ্যক বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবার বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশির অংশগ্রহণ আশা করছেন ভারতীয় আয়োজকরা। তারা জানান, বলিউড এবং টালিউড ছাড়াও বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, টিভি ও সঙ্গীতের বিশিষ্টজনদের লাস ভেগাসের উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
কিক-অফ অনুষ্ঠান শুরু হয় রবীন্দ্র সংগীতের ফিউশন দিয়ে। এর সাথে ফ্যাশন শোয়ে অংশ নেন দেশি-বিদেশি ছয়জন মডেল। ফ্যাশন শো পরিচালনা করেন ডিজাইনার পিয়াল হোসেন।
এরপর বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস-বাফা’র শিল্পীরা রবীন্দ্র ও নজরুলের গানে দুটি নাচ পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার দম্পতি ফিরোজা বেগম ও কমল দাসগুপ্তের একটি গান পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী শাহ মাহবুব ও শেখ নীলিমা শশী। এরপর তানভীর শাহীন গেয়ে শোনান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একটি গান। পরে রবি শংকরকে স্মরণ করা হয় সেতার বাজিয়ে। সেতার পরিবেশন করেন মোর্শেদ খান অপু। তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন তপন মোদক।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ওপর পরিবেশনায় অংশ নেন নিউইয়র্কের আবৃত্তিশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পীরা। কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা ‘বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়ি’ আবৃত্তি করে শোনান গোপন সাহা এবং সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘বাঙালির পরিচয়’ আবৃত্তি করেন নতুন প্রজন্মের আবৃত্তিশিল্পী আবিবা দ্যুতি। পরে ‘যদি একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ’ গানটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন আনন্দধ্বনির শিল্পীরা।
শেষে বঙ্গ সম্মেলন ২০২০ এর থিম সঙ্গীত ‘হাতে হাত ধরে চলি’ পরিবেশন করা হয়। প্রবাসে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় বাঙালি ও বাংলাদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।