‘মা’—ছোট একটি মধুর শব্দ, অথচ এর গভীরতা মাপার মতো কোনো যন্ত্র এখনও পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। মা মানেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, মা মানেই আত্মত্যাগ, মা মানেই পৃথিবীর প্রথম আশ্রয়। একমাত্র মা-ই পারেন নিজের স্বপ্ন, আরাম এমনকি অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য বাঁচতে।
গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে সন্তান জন্মানো পর্যন্ত একজন মা যে যন্ত্রণা ও ত্যাগ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন, তা কেবল একজন মা-ই অনুভব করতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মা প্রতিদিন হাজার কাজের মধ্যেও ভাবেন—তার সন্তানের নিরাপত্তা, খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ—সবকিছু নিয়ে। অথচ সেই সন্তান অনেক সময় বড় হয়ে ভুলেই যায় মায়ের অবদান, ভুলে যায় তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
আজ মা দিবস। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছে মা-কে নিয়ে পোস্ট, ছবি ও স্ট্যাটাসে। এ এক মধুর ব্যস্ততা। তবে একটু ভাবুন তো—শেষ কবে আপনি মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘মা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। শেষ কবে মায়ের কপালে একটি আদরভরা চুমু এঁকেছিলেন? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সম্পর্কগুলো হয়ে উঠছে ভার্চুয়াল, কিন্তু একজন মা আজও সন্তানকে আগের মতোই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, মনের গভীর থেকে করেন প্রার্থনা।
মা দিবস কেবল একদিন মাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানোর দিন নয়—মা দিবস হওয়া উচিত প্রতিদিনের যত্ন, ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতিফলন। কারণ, তিনিই আমাদের পৃথিবীতে এনেছেন, আমাদের নাড়িছেঁড়া ধন বলে বুকে আগলে রেখেছেন।
চলুন, আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা একটি অঙ্গীকার করি—
আর কোনো মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।
আর কোনো মাকে যেন সন্তান থাকা সত্ত্বেও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে না হয়।
আজ পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসা। মায়ের মুখে হাসি ফোটানোই হোক আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস উদযাপিত হয়। আধুনিক মা দিবসের সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, তবে এখন এটি বিশ্বজুড়ে একটি আবেগঘন সংস্কৃতি হিসেবে গৃহীত।
মা দিবসের মূল প্রবর্তক হিসেবে যার নাম ইতিহাসে লেখা আছে, তিনি হলেন অ্যানা জার্ভিস। ১৯০৫ সালে তাঁর মা অ্যান রিভস জার্ভিস-এর মৃত্যু হয়। এই মায়ের প্রতি সম্মান জানাতে অ্যানা জার্ভিস ১৯০৮ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস উদযাপন করেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গাফটন শহরে। এরপর একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
দিবসটি সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপনের তারিখ ভিন্ন, তবু মে মাসের এই বিশেষ রবিবারই সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে গৃহীত।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক