রাইয়ান, রাজধানীর একটি নামী স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। একসময় স্কুল থেকে ফিরেই স্কুলে কাটানো দিনের গল্প বলতো মাকে, খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে যেত মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে। কিন্তু এখন? স্কুল থেকে ফিরে জামা বদলেই সোজা ট্যাব হাতে বসে পড়ে। মা বারবার বললেও সে আর খেতে আসে না, কথা তো দূরের কথা, মা যেন সেখানে নেই-ই।
এমন চিত্র শুধু রাইয়ানের নয়, বরং আমাদের সমাজের অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রেই আজ বাস্তবতা। স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ—এসব প্রযুক্তি ডিভাইস শিশুদের শিক্ষা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের দিক থেকে উপকার করলেও, এর অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মনন ও সামাজিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৭২ শতাংশ শিশু দিনে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার করে। এদের মধ্যে অনেকেই ভার্চুয়াল জগতে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ছে যে, বাস্তব জীবনে যোগাযোগ-সম্পর্ক তৈরি বা রক্ষা করতেও অনীহা দেখায়। খেলাধুলা, গল্প বলা, বই পড়া—এসব ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন থেকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা দেয়:
দৃষ্টিশক্তির ক্ষয় ও মাথাব্যথা
ঘুমের ব্যাঘাত
সামাজিকতা হ্রাস
মানসিক চাপ ও রাগ
শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস ও স্থূলতা
তবে আশার কথা, সময় থাকতেই সচেতন হলে এই আসক্তি থেকে শিশুদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য দরকার অভিভাবকদের আন্তরিকতা ও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ। যেমন-
মোবাইল আসক্তি থেকে উত্তরণের উপায়_
নিয়মিত সময় নির্ধারণ: পড়াশোনা, খাওয়া, বিশ্রাম ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন।
বিকল্প উৎসাহ: ট্যাব বা মোবাইলের পরিবর্তে বই পড়া, আঁকাআঁকি, সংগীত চর্চা বা ঘরের কাজ শেখানোর দিকে আগ্রহ তৈরি করুন।
খেলাধুলা ও সামাজিকতা: প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিন।
অভিভাবকদের সময় দেয়া: শিশুর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান। তাদের কথা শুনুন, প্রশ্ন করুন, বন্ধুর মতো আচরণ করুন।
ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ: প্রয়োজন ছাড়া ডিভাইস হাতে না দেওয়া এবং শিশুদের সামনে নিজেরাও অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
শিশুদের জীবনে প্রযুক্তির প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। তবে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। না হলে আজকের শিশুরা বড় হতে হতে তাদের শৈশবটাই হারিয়ে ফেলবে—যা আর কখনোই ফিরে পাওয়া যাবে না।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক