Monday 02 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুধ’ — অনুভূতি ও পুষ্টির নিঃশব্দ হিরো

ফারহানা নীলা
১ জুন ২০২৫ ১৫:০৯

দুধের গল্পটা কেবল পুষ্টির নয়, এটি আমাদের জীবনের এক নরম অনুভূতির অংশ। শৈশবে মা জোর করে খাইয়ে দিতেন— ‘হাড় শক্ত হবে’, ‘বুদ্ধি বাড়বে’। তখন সেটা বিরক্তির কারণ হলেও, এখন বুঝা যায়, এক গ্লাস দুধের মধ্যে থাকে মায়ের মায়া, যত্ন আর নিঃশব্দ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে পুষ্টি।

পুষ্টির নিঃশব্দ হিরো ‘দুধ’

এক গ্লাস গরম দুধ। শিশুর কাঁচা ঘুমের আগে, অথবা বৃদ্ধ বাবার রাতে ওষুধ খাওয়ার পর, অথবা মায়ের হাতে তৈরি হলুদ মেশানো দুধ—এই এক গ্লাস দুধ যেন কেবল একটি পানীয় নয়, একেকটি আবেগ, একেকটি দৃশ্যপট।

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা নানা ধরণের খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ি—ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড কিংবা চটজলদি স্ন্যাকস। কিন্তু এই সব খাবারের ভিড়ে একদম নিরবে, নিঃশব্দে আমাদের শরীরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে একটি অমূল্য উপাদান—দুধ। সহজলভ্য, স্বাদে মোলায়েম আর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই পানীয়টি আমাদের খাদ্যতালিকার একটি নীরব নায়ক।

বিজ্ঞাপন

দুধ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিজ্ঞান বলছে, দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি১২, এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিশুদের হাড়ের গঠন থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের হাড় মজবুত রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু হাড়ই নয়, চুল, ত্বক ও দাঁতের স্বাস্থ্যেও দুধের অবদান অপরিসীম।

কিন্তু বিজ্ঞানের বাইরে গিয়ে, দুধ মানেই একধরনের আরাম—একটা সান্ত্বনার অনুভব। ক্লান্ত শরীরে এক কাপ গরম দুধ যেন বলে—’আরও একটু এগিয়ে যাও, আমি আছি তোমার পাশে।’

প্রতিদিন এক গ্লাস

দিনের শুরুতে এক গ্লাস গরম দুধ আপনার শরীরকে জোগাতে পারে প্রয়োজনীয় শক্তি আর মনকে দিতে পারে প্রশান্তি। অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন না, তবে একে বিভিন্ন রূপে উপভোগ করা যায়—মধু মিশিয়ে, ফল মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে, কিংবা সকালের কফির সঙ্গী হিসেবে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য

দুধ শুধু আধুনিক পুষ্টির উৎস নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলার মিষ্টান্ন শিল্প দুধ ছাড়া কল্পনাই করা যায় না—রসগোল্লা, সন্দেশ, দই, ক্ষীর, সবকিছুর মূল উপাদানই দুধ। মায়ের হাতে বানানো গরম দুধ আর গুড়ের স্বাদ যে একবার পেয়েছে, সে জানে এই ছোট্ট উপাদানে কতটা ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।

গ্রামের দুধ আর শহরের প্যাকেট

আজ শহরে দুধ আসে প্যাকেটে, ফ্রিজ থেকে গ্লাসে। কিন্তু গ্রামে এখনো ভোরবেলা গরুর গোয়ালঘরে দুধ দোয়ানোর শব্দ শোনা যায়। দুধ গরম করে তার ওপর জমে ওঠা সাদা সর, অথবা খাঁটি গাভীর দুধে তৈরি দই—এই সবকিছু একধরনের জীবন্ত সংস্কৃতি, যা আজও বাংলার ঘরে ঘরে টিকে আছে।

স্মৃতির স্বাদে এক চুমুক

অনেক স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এক গ্লাস দুধ—পরীক্ষার আগের রাত, অসুস্থতায় মায়ের কোল, অথবা ঈদের সকালে শিরনি। দাদির হাতের বানানো ‘দুধ চিঁড়া’ স্বাদের চেয়ে যেনো অনুভবটাই বেশি।

শেষ কথা …

এই আধুনিক, ব্যস্ত জীবনে হয়তো আমরা দুধকে কেবল একটি পুষ্টিকর পানীয় হিসেবেই দেখি। কিন্তু এর মধ্যে যে একধরনের কোমলতা, স্নেহ আর সংস্কৃতি লুকিয়ে আছে, সেটি মনে রাখা জরুরি। দুধ শুধু শরীরের জন্য নয়, মনেরও একটা নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। আপনার ডায়েট প্ল্যানে দুধকে একটু জায়গা দিন। হয়তো প্রতিদিনের একটু সচেতনতা আপনাকে দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা আর প্রশান্তি।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

অনুভূতি দুধ পুষ্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর