রোজ সকালে যখন শহর জেগে ওঠে, তখন একদল মানুষ ব্যস্ত হয়ে ছুটছে অফিসমুখো বাসে, রিকশায় কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে। এই ভিড়ের ভেতরেও চোখে পড়ে কিছু মানুষের মুখে প্রশান্তির ছায়া— তারা চলেছে সাইকেলে চেপে। কোনো হর্ন নেই, কোনো তাড়াহুড়া নেই, নেই জ্বালানির চিন্তা। শুধু আছে ছন্দময় ও দুরন্ত ছুটে চলা।
এক সময়ের স্কুলে যাওয়া কিংবা বিকেলের খেলার সঙ্গী ছিলো এই সাইকেল। হঠাৎ-ই-স্কুটি আর পাঠাও, সেই জায়গাটি দখল করে নেয়।

সাইকেল হয়ে উঠছে বিকল্প এক শক্তি
তবে আবারও সময় বদলে যাচ্ছে। সেই পুরনো সঙ্গী আবার ফিরছে নতুন পরিচয়ে—পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকর একটি বাহন হিসেবে। ঢাকাসহ বাংলাদেশের নানা শহরে এখন আবার সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। শুধু ছেলেমেয়েদের নয়, প্রফেশনালরাও ফিরছেন সাইকেলে।
শহরের গলি থেকে গ্রামীণ পথে দু-চাকার বাহন
রাজধানীর ধানমণ্ডি, উত্তরা বা মিরপুরের রাস্তায় এখন প্রায়ই দেখা যায় সাইকেল চালিয়ে অফিসগামী তরুণ-তরুণীদের। কেউ কেউ চালায় সময় বাঁচাতে, কেউবা শরীরচর্চার জন্য। আবার কেউ চালায় পরিবেশের প্রতি সচেতনতা থেকে। আবার স্বল্প খরচে সময় বাচানোর বাহন হিসেবেও অনেকে বেছে নেন সাইকেল। আর গ্রামীণ পথেও এখন বেশ চলছে এই দুই চাকার বাহন।

সেই পুরনো সঙ্গী আবার ফিরছে নতুন পরিচয়ে—পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকর একটি বাহন হিসেবে
বিশ্বজুড়ে যখন জ্বালানি সংকট এবং পরিবেশ দূষণের কথা বলা হচ্ছে, তখন সাইকেল হয়ে উঠছে বিকল্প এক শক্তি। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কের মতো দেশে যেখানে সাইকেলই প্রধান বাহন, সেখানে বাংলাদেশের শহরগুলোতেও ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে সেই একই ধারা।
সাইকেলে জীবনযাপন
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফারহানা রহমান প্রতিদিন অফিসে যান সাইকেলে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটু ভয় লাগত। রাস্তায় গাড়িগুলোর গতি, শব্দ—সবই নতুন মনে হত। আবার একজন নারী হয়ে সাইকেল চালাচ্ছি এই বিষয়টি সমাজের মানুষরা কিভাবে দেখবে সেটাও একটু সংকোচে ছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর বুঝলাম, এই ছোট বাহনই আমাকে সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা দিয়েছে।’

নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কের মতো দেশে যেখানে সাইকেলই প্রধান বাহন, সেখানে বাংলাদেশের শহরগুলোতেও ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে সেই একই ধারা
একই কথা বললেন উত্তরার এক তরুণ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, রাহুল। ‘জিমে যাওয়ার সময় পাই না, কিন্তু প্রতিদিন ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালানোই এখন আমার এক্সারসাইজ।’
চ্যালেঞ্জের কথাও বলতে হয়
তবে সমস্যা যে নেই, তা নয়। শহরের সাইকেল চালকদের জন্য আলাদা লেন নেই বললেই চলে। অনেক সময় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়, যা বিপজ্জনক। এছাড়া, সাইকেল পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গার অভাবও একটা বড় সমস্যা।
তবে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কিছু প্রাইভেট কোম্পানি কর্মীদের সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসতে উৎসাহিত করছে। কিছু স্কুল-কলেজেও চালু হয়েছে ‘সাইকেল টু স্কুল’ কর্মসূচি।

কেউ কেউ চালায় সময় বাঁচাতে, কেউবা শরীরচর্চার জন্য
ভবিষ্যতের পথে সাইকেল
পরিবেশ সচেতনতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং জীবনযাপনের এক সহজ পন্থা হিসেবে সাইকেল ভবিষ্যতের বড় একটি বাহন হয়ে উঠতে পারে। শহরের পরিকল্পনায় যদি সাইকেল লেন যোগ হয়, যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়—তবে এই দু’চাকার বাহন বদলে দিতে পারে পুরো শহরের ছন্দ।
লেখক: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট