Friday 13 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুড়িগ্রাম বিজিবি পার্ক: প্রকৃতি আর বিনোদনের এক চমৎকার সমন্বয়

ফারহানা নীলা
১২ জুন ২০২৫ ১৩:৫৭ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৫ ১৫:২৯

বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী-বেষ্টিত ভূপ্রকৃতি এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এই জেলার অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র হলো বিজিবি পার্ক, যা কুড়িগ্রাম শহরের খুব কাছেই অবস্থিত এবং দিন দিন বেড়ে চলেছে এর জনপ্রিয়তা।

কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের রিকশা–অটোযাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তত্ত্বাবধানে তৈরি ‘বিজিবি পার্কে’।

পার্কের ইতিহাস ও উদ্দেশ্য

বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেছে বিজিবি কুড়িগ্রাম সেক্টর, স্থানীয় মানুষের চিত্তবিনোদন ও বিশ্রামের একটি সুন্দর স্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি বিজিবি সামাজিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এই পার্কটি স্থাপন করেছে, যাতে পরিবারসহ মানুষ নির্ভরযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সময় কাটাতে পারে।

বিজ্ঞাপন

পার্কের বৈশিষ্ট্য

পার্কটি আধুনিক নাগরিক বিনোদনের বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে _

সবুজে ঘেরা মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ

গাছগাছালিতে ঘেরা ছায়াময় এলাকা, ফুলের বাগান ও সুসজ্জিত লন পার্কটিকে করেছে আকর্ষণীয়। পাখির কিচিরমিচির ধ্বনি আর বাতাসে গাছের দোল খাওয়ার দৃশ্য দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়। ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ঘাসের সুবিস্তীর্ণ মাঠ আর প্যাঁচানো হাঁটাপথ, যা সকাল–সন্ধ্যা হাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য আদর্শ।

বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা

পার্কে শিশুদের জন্য দোলনা, স্লিপার, ট্রাম্পোলিনসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে।ঝুলঝুলি, স্লিপার, ট্রাম্পোলিন থেকে শুরু করে ছোট ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে, তাই পরিবার নিয়ে গেলে শিশুদের আলাদা আনন্দের ঘাটতি থাকে না।

বোটিং সুবিধা

পার্কের মাঝখানে ছোট একটি লেক; দম্পতি ও তরুণদের কাছে প্যাডেল বোট সবচেয়ে জনপ্রিয়।

পিকনিক স্পট

দুটি পৃথক ছায়াঘেরা এলাকা বড় দল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিবসভিত্তিক পিকনিক আয়োজনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়।

খাবার ও বিশ্রামের সুব্যবস্থা

পার্কের ভেতরে রয়েছে খাবারের দোকান ও বিশ্রামের জন্য বসার স্থান, যা দর্শনার্থীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা

বিজিবির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ার কারণে পার্কটি অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ।

স্থানীয় মানুষের কাছে গুরুত্ব

বিজিবি পার্ক কুড়িগ্রামবাসীর জন্য শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, বরং এটি একটি সামাজিক মিলনমেলা, যেখানে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পর্যটকরা একত্রিত হয়ে সময় কাটান। সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদ বা পূজার সময় পার্কটি দর্শনার্থীতে পূর্ণ থাকে।

পলাশবাড়ি থেকে বেড়াতে আসা কলেজছাত্রী শিমুল আকতার জানালেন, ‘কুড়িগ্রামে বিনোদনের জায়গা কম; বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে আর নৌকায় ঘুরতে এ পার্কই সেরা অপশন।’

আর ঢাকা থেকে আসা আসাদুজ্জামান মনে করেন, নামমাত্র টিকেটের বিনিময়ে পরিবার–পরিজনকে নিয়ে নিরাপদে ঘোরার জন্য পার্কটি আনন্দদায়ক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শোনা যাচ্ছে, পার্কটিকে আরও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে। হতে পারে নতুন রাইড, আর্ট গ্যালারি বা সাংস্কৃতিক মঞ্চও যুক্ত হবে ভবিষ্যতে। পার্ক এলাকায় শিশুদের জন্য একটি ‘সায়েন্স কর্নার’ ও খোলা আকাশের মঞ্চ তৈরি করতে ইতিমধ্যে ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শীত মৌসুমের মধ্যেই নতুন সুবিধাগুলো উন্মুক্ত হবে।

প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি

পার্কে ঢুকতে বড়দের জন্য মাত্র ১০ টাকা টিকিট কাটতে হয়; ৫ বছরের নিচে শিশুদের প্রবেশ একেবারেই বিনা খরচে। পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকে—কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।

কেন যাবেন

শীত–গ্রীষ্ম যে–কোনো মৌসুমে কুড়িগ্রাম ভ্রমণে বের হলে ধরলা ব্রিজ অথবা ডিসি পার্কের সঙ্গে ‘বিজিবি পার্ক’কে নিঃসন্দেহে তালিকায় রাখুন—সবুজ, শান্তি আর সাশ্রয়ী বিনোদনের এই ঠিকানাটি বাকি দিনটাকে করে তুলবে আরো প্রাণবন্ত।

টিপস

ভিড় এড়াতে সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে চলে গেলে পার্কটা তুলনামূলক ফাঁকা থাকে।

বোটিং করতে চাইলে সূর্য ঢলে পড়ার ঠিক আগের সময়টিই ছবি তোলার জন্য সবচেয়ে সুন্দর।

কুড়িগ্রামের বিজিবি পার্ক এখন শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্থানীয় মানুষের গর্ব এবং কুড়িগ্রাম জেলার পর্যটনে এক নতুন দিগন্ত। প্রকৃতি, নিরাপত্তা ও বিনোদনের অপূর্ব সমন্বয় এই পার্ককে করেছে অনন্য। যারা কুড়িগ্রাম ঘুরতে যাচ্ছেন, বিজিবি পার্কে একবার না গেলেই নয়!

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

কুড়িগ্রাম বিজিবি পার্ক