আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম বর্ষার মাস। আকাশের কান্না আর মাটির ভালোবাসার মধ্যে শুরু হলো নতুন এক ঋতুর গল্প। বাঙালির জীবনে আষাঢ় মানে শুধুই বৃষ্টি নয়—আষাঢ় মানে অপেক্ষা, কবিতা, কাঁদা, ভেজা দুপুর, কাকভেজা বিকেল আর মনভেজা স্মৃতি। চায়ের ধোঁয়া, মেঘের নিচে মনখারাপ, আর একফোঁটা স্মৃতিকাতরতা।
মেঘ নামে, মন ভেজে
আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই জানালার বাইরে এক অন্যরকম রং। সাদা-ধূসর মেঘ আকাশ ঢেকে রেখেছে, যেন পৃথিবী জুড়ে একটা শান্ত, ধোঁয়াশা ধরা গান বাজছে। মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি, কখনো গুড়িগুড়ি, কখনো মুষলধারে।রাস্তায় মানুষের চলাফেরা ধীর, ছাতার নিচে গুটিসুটি—তবুও কোথাও একটা প্রশান্তি আছে। আষাঢ় মানেই শহরের কোলাহলে একটু বিরতি, প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া।
বৃষ্টির সঙ্গে জেগে ওঠে মাটি
আষাঢ় শুধু শহুরে বৃষ্টির গল্প না। গ্রামে এই সময় কৃষকের মুখে হাসি।
বৃষ্টির পর শুকিয়ে যাওয়া খাল, বিল আবার প্রাণ ফিরে পায়।
ধানচাষের মৌসুম শুরু হয়।
কদম ফুল-এর আবেগ
আষাঢ়ের দূতবর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে যেই ফুলটি প্রথম চোখে পড়ে, সেটি কদম। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির পরে গাছের ডালে ঝুলে থাকে ছোট ছোট গোল ফুল, যেন ভেজা কাশফুলে বোনা রোদ্দুর।স্কুল ফেরত কিশোরের হাতে কদমের ডাল, প্রেমিকের লাজুক উপহার, কিংবা গ্রামের পুকুরপাড়ে কদম তলায় মেয়েদের হেসে ওঠা—এসব আষাঢ়ের চিরচেনা ছবি।
আষাঢ় মানেই চা আর গল্প
বৃষ্টির দিনে ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে, বাইরে তাকিয়ে থাকা—এ যেন এক অদ্ভুত শান্তি।
চায়ের দোকানে জমে ওঠে আড্ডা, রাজনৈতিক তর্ক, পাড়া-প্রতিবেশীর হাসাহাসি।
বৃষ্টি যেন সব কিছু একটু ধুয়ে-মুছে দেয়, নতুন করে শুরু করার সুযোগ এনে দেয়।
বৃষ্টির সাথে মিশে থাকা জীবনআকাশের কান্না, ধুলো ধুয়ে যাওয়া পথ, বৃষ্টিভেজা পত্রপল্লব আর ব্যস্ত শহরের ধীর গতি—সব কিছুর মাঝেই যেন বৃষ্টি বলে, ‘থেমে যাও একটুখানি, শুনো প্রকৃতির গান’।
বৃষ্টির দিনে সেই গান আরও রঙ পায় যখন আশপাশে ভেসে বেড়ায় কদম ফুলের সুবাস। মাটির ঘ্রাণ আর কৃষকের আনন্দ । কারণ আকাশ জুড়ে এখন শুধু বৃষ্টি নয়, আশা।….