‘আমরা একসাথে বসে আছি, কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ স্ক্রিনে।’ এ কথাটি আজকাল অনেক অভিভাবকই বলেন। আগের দিনের পারিবারিক গল্প বা বন্ধুবান্ধবদের আড্ডা এখন যেন শুধুই স্মৃতি। বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জগত অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে তরুণদের কাছে।
বর্তমানে তরুণদের একটা বড় অংশ দিন শুরু করে মোবাইল স্ক্রল করে, এবং ঘুমানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্তও চোখ থাকে রিলস বা টিকটকের ভিডিওতে। প্রতিটি ক্লিপ মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট—কিন্তু সেটার পেছনে সময় চলে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক কিংবা ইউটিউব শর্টস— সবখানেই যেন ছোট ছোট বিনোদনের ফাঁদ!
কেন আসক্তি এত বেড়ে যাচ্ছে?
নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলছেন, প্রতিটি রিল বা শর্ট ভিডিও এক ধরনের ‘ডোপামিন হিট’ দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কে সাময়িক আনন্দ তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটা করলে বাস্তব জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, মনোযোগের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সামাজিক দক্ষতা দুর্বল হয়।
হারিয়ে যাচ্ছে সম্পর্কের উষ্ণতা
বাস্তব যোগাযোগ মানে চোখে চোখ রেখে কথা বলা, আবেগ বোঝা, ছুঁয়ে দেখা—এই অনুভূতিগুলো ভার্চুয়াল স্ক্রিনে অনুভব করা যায় না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫% তরুণ তাদের দৈনিক সময়ের অধিকাংশ ব্যয় করে অনলাইন কনটেন্ট দেখার পেছনে, যেখানে পরিবারের সাথে সময় কাটানো বা বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার হার কমে এসেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
তরুণদের মতামত
ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমার বেশিরভাগ বন্ধুত্ব এখন স্ক্রিনে, বাস্তবে দেখা করার সময়ই নেই। কোনো ইভেন্টে গেলেও সবাই শুধু ভিডিও বানায়, রিল তো বানাতেই হবে!’
সমাধান কোথায়?
সমাধান অবশ্যই প্রযুক্তির বিরোধিতা নয়, বরং ভারসাম্য তৈরি করা।
স্ক্রিন টাইম কমিয়ে বাস্তব জীবনে সময় কাটানোর প্রতি জোর দিতে হবে।
পরিবারে ছোট ছোট গল্পের সময়, স্কুল-কলেজে মিডিয়া সচেতনতা ক্লাস, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলাই পারে এই ক্ষয়রোধ করতে।
শেষ কথা হলো প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে গোটা দুনিয়া। কিন্তু এই দুনিয়ার পেছনে ছুটতে গিয়ে যদি নিজের চারপাশটাকেই হারিয়ে ফেলি, তাহলে সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। চলুন, কিছুটা সময় স্ক্রিনের বাইরে তাকিয়ে প্রকৃত সম্পর্ক, প্রকৃত বন্ধু আর বাস্তব অনুভূতির খোঁজ করি।