ফ্যাশন শুধু পোশাক, জুতো বা ব্যাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আজকাল মানুষের স্টাইল এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মুখের ক্ষুদ্রতম অংশ—ভ্রু। ভ্রু এখন শুধু চোখের সৌন্দর্য বাড়ানোর নয়, এটি ব্যক্তিত্বের আভাস দেয়ার, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করার এবং ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলানোর এক নতুন ট্রেন্ড।
বাংলাদেশে ভ্রু প্রসাধনী:
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ভ্রু সাজানোর শিল্পে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। শুধু নারীরাই নয়, পুরুষরাও এখন ভ্রুর দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। ছোটো ছোটো বোটক্স, মাইক্রো ব্লেডিং, হেনা ভ্রু, থ্রেডিং—সবই এখন ফ্যাশন প্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি অঞ্চলে এই ধরনের সেলুন ও স্টুডিওতে ভিড়ের অভাব নেই।
ভ্রু মুখের রূপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ:
রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রু মুখের রূপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঠিক মতো গঠন করা ভ্রু চোখকে বড় দেখায়, চেহারাকে উজ্জ্বল করে এবং মুখের অভিব্যক্তি আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। তাই ফ্যাশন প্রেমীরা ভ্রুর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভ্রু ট্রেন্ড নিয়ে রমরমা আলোচনা দেখা যায়। বিশেষ করে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে ‘ভ্রু ট্রান্সফরমেশন’ ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
অর্থনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভ্রূ প্রসাধনী:
ভ্রু সাজানোর এই ব্যবসা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি অর্থনীতিক দিক থেকেও উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১০০০-এর বেশি বেসরকারি বিউটি সেলুন এবং স্পা বিশেষভাবে ভ্রু কেয়ার ও থ্রেডিং সার্ভিসে মনোযোগ দিচ্ছে। প্রফেশনালদের মাসিক আয় হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নতুন প্রজন্মের জন্য এটি একটি স্বাধীন উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও পরিণত হচ্ছে।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রু ট্রেন্ডে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসে। ২০২৫ সালের চলতি ট্রেন্ডে ‘ন্যাচারাল ভ্রু’ এবং হালকা আর্ক শেপ বেশি জনপ্রিয়। অতিরিক্ত পাতলা বা কণ্ঠরেখার ভ্রু এখন কম জনপ্রিয়। অনেক বিউটি সেলুন এখন ভ্রু ডিজাইনের জন্য বিশেষ কোর্স চালু করেছে, যাতে গ্রাহকরা পছন্দমতো স্টাইল পেতে পারেন।
একটি ছোট ব্যবসার জন্যও ভ্রু সাজানোর সার্ভিস নতুন কাস্টমার আকর্ষণের উপায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে অনলাইনে বুকিং বৃদ্ধি, প্রমোশনাল অফার, এবং ফলোআপ কেয়ার—সবই ভ্রু ব্যবসাকে রমরমা করে তুলেছে।
বৈশ্বিক বাজারের বিশ্লেষণ:
অ্যালায়েড মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বৈশ্বিক ভ্রু জেল বাজারের আকার ছিল ২৬৪.৯ মিলিয়ন ডলার। এই বাজারের ২০৩১ সালের মধ্যে ৪৩১.৭ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে, যা বার্ষিক ৫.২% প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
ভ্রু প্রসাধনীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণ:
১. সৌন্দর্য সচেতনতা
বর্তমান প্রজন্ম সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্বের প্রতি অধিক মনোযোগী। ভ্রু সাজানোর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যক্তিত্বকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।
২. সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভ্রু সাজানোর টিউটোরিয়াল এবং ট্রেন্ডের কারণে এই প্রসাধনীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
৩. প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার
ভ্রু জেলে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন জোজোবা তেল, অ্যালোভেরা ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ত্বকের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।
বাজারের প্রবণতা ও ভবিষ্যৎ:
১. প্রিমিয়াম পণ্যের চাহিদা
প্রিমিয়াম ভ্রু জেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে এই সেগমেন্টের বাজার ছিল ৭৫.৬ মিলিয়ন ডলার, যা ২০৩১ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
২. অনলাইন বিক্রির প্রবৃদ্ধি
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভ্রু জেল বিক্রির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে অনলাইন বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৪.১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০৩১ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
৩. এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আধিপত্য
২০২১ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল ভ্রু জেল বাজারের বৃহত্তম অংশীদার ছিল। এই অঞ্চলের বাজার ২০৩১ সালের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে।
সবশেষ
ফলে, ভ্রু আজ শুধু সৌন্দর্যের নয়, ফ্যাশনের, স্টাইলের এবং অর্থনীতিরও প্রতীক। ছোটো একটি রেখা কীভাবে বিশাল প্রভাব ফেলে, তা দেখিয়ে দিচ্ছে এই নতুন ভ্রু বাণিজ্য। তাই চলতি ফ্যাশনে ভ্রুতে রমরমা বাণিজ্য যেন এখন অনিবার্য ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে।